Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভেদ ভুলে সেতু সারাই ভীমপুরে

কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা, আবার কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম। প্রশাস‌ন, জনপ্রতিনিধিরা মুখ ফিরিয়ে রাখলে কী হবে, থেমে থাকতে রাজি নন গ্রামের মানুষ। নিজেরাই তাই সংস্কার করে নিচ্ছেন কাঠের ব্রিজ। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হুমকি দিয়ে রাখলেন, “দ্রুত কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি করে না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামব। প্রয়োজনে পথ অবরোধ করব।”

চলছে সেতু সারাইয়ের কাজ।—নিজস্ব চিত্র

চলছে সেতু সারাইয়ের কাজ।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা, আবার কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম। প্রশাস‌ন, জনপ্রতিনিধিরা মুখ ফিরিয়ে রাখলে কী হবে, থেমে থাকতে রাজি নন গ্রামের মানুষ। নিজেরাই তাই সংস্কার করে নিচ্ছেন কাঠের ব্রিজ। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হুমকি দিয়ে রাখলেন, “দ্রুত কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি করে না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামব। প্রয়োজনে পথ অবরোধ করব।” যদিও কৃষ্ণনগর১ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক কাবেরী ঘোষ বলেন, “ওই ব্রিজটি সংস্কারের কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে গ্রামবাসীরা যদি আমাদের লিখিত ভাবে জানান, তা হলে আমরা পঞ্চায়েত সমিতি বা অন্য কোনও ফান্ড থেকে ব্রিজটি সংস্কারের ব্যবস্থা করব।”

এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে কলিঙ্গ বিলের উপরে এই ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল। তার পর থেকে এই ব্রিজের আর কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে দিন দিন ক্রমশ ব্রিজটি জীর্ণ হতে থাকে। এখন সেটি রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। জীর্ণ পচা কাঠ ভেঙে পড়ছে। ব্রিজ থেকে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন দু’জন। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি। এই কলিঙ্গ বিলের এক দিকে ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর, নারায়ণপুর, কৃষ্ণপুর ও নেলোয়া গ্রাম। আর অন্যদিকে পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাউতলা গ্রাম। ভামপুর পঞ্চায়েতের চারটি গ্রামের মানুষ এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। মাঠের সব্জি নিয়ে যান হাটে-বাজারে। ছাত্রছাত্রীরা এই ব্রিজের উপর দিয়েই প্রতিদিন স্কুল কলেজে যায়। মাঝে মধ্যে ব্রিজের অবস্থা এতটাই বেহাল হয়ে পড়ে যে তার উপর দিয়ে সব্জি পরিবহণের জন্য ভ্যান- সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, মানুষের হেঁটে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রামপুরের বাসিন্দা করুণাময় ঘোষ বলেন, “এই ব্রিজের উপরে চারটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে বাধ্য হয়। প্রতিদিন কয়েকশো ছাত্রছাত্রী এই ব্রিজ পার হয়ে স্কুল-কলেজে যায়। সেটা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ল, তখনই আমরা গ্রামের মানুষ নিজেরা এগিয়ে এসে ব্রিজটা কোনও মতে পার হওয়ার বাবস্থা করি।” আর এক গ্রামবাসী তৃণমূল কর্মী অসিতবরণ বিশ্বাস বলেন, “আমরা এই কাঠের ব্রিজটাকে কংক্রিটের ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য নানা জায়গায় তদবির করেছি। সাংসদ তাপস পাল, বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদার সকলেই আমাদের এলাকায় এসে ব্রিজ তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে সংস্কারের অভাবে ব্রিজটা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।” পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে গ্রামের মানুষ এবার রীতিমত কোমড় বেঁধে নেমেছেন ব্রিজ সংস্কারের জন্য। রীতিমতো চাঁদা তুলে তাঁরা ব্রিজ সংস্কার করেছেন। এ দিন ব্রিজ সংস্কারের কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছিলেন রামপুরের কৃষক মধুসূদন ঘোষ। তিনি বলেন, “এই ব্রিজের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ভ্যানে করে মাঠের সব্জি পার করতে পারছি না। তাহলে যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে তাই নিজেরাই সংস্কার করে নিলাম।”

কলিঙ্গ বিলের ওপারে নেলোয়া গ্রামের বাসিন্দা ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সীমা পালতাকেও রোজ এই কলিঙ্গ বিল পার হতে হয়। তবে এই ব্রিজের বেহাল অবস্থার কারণে তিনি অনেকটাই ঘুর পথে যাতায়াত করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, “ব্রিজের অবস্থা খারাপ বলে আমি ঘুর পথে যাতায়াত করতে বাধ্য হই। শুনেছি গ্রামের বাসিন্দারা নাকি নিজেদের মতো করে ব্রিজটা সংস্কার করে নিচ্ছেন। আমরাও পঞ্চায়েতের তরফে কোনও ভাবে সংস্কার করা যায় কিনা তা আলোচনা করে দেখব।”

কিন্তু গ্রামবাসীরা আর ভেবে দেখতে রাজি নন। কংক্রিটের ব্রিজটির জন্য দল-রাজনীতি ভুলে তাঁরা একত্রিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ভাবছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bridge repairing bhimpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE