বেলডাঙা থানায় সেলিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্রl
বিধায়কের ভূমিকায় রীতিমতো চৌখশ সওয়াল করেছিল সেলিনা খাতুন। তাই তার হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সেলিনাকে ‘শিক্ষামন্ত্রী’ করে কলকাতার যুব সংসদে পাঠাতে চেয়েছিলেন। স্কুলের দলের সঙ্গে কলকাতায় যাওয়ার কথা বলতেই দ্বাদশ শ্রেণির সেলিনার কপালে জুটেছিল বেধড়ক মার। বাড়ির বউ রাতে বাড়ি ফিরবে না, স্বামী-শ্বশুর তা মানতে পারে? মার খেয়ে মায়ের বাড়ি গেলে তার বাবা সাফ জানিয়ে দেন, মত নেই তাঁরও। বাড়ির অমতে গেলে বাড়ি থেকে বার করে দেবেন, তা-ও জানিয়ে দেন চায়ের দোকানি বাবা।
তবু কলকাতায় যাওয়ার জেদ ছাড়েনি সেলিনা। বরং বাড়ি ছেড়েছে। শুক্রবার বেলডাঙা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ি, দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই। এ দিন সেলিনা বলে, “যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় আমি কলকাতা যেতে চাই। কিন্তু কেউ যেতে দেবে না। আমাকে দু’বাড়িতেই মারধর করেছে। আমি দু’পক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।” পুলিশ এ দিন সেলিনার বাবা আসারুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক। এ দিন সেলিনাকে বহরমপুর মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে সরকারি হোমে রাখার নির্দেশ দেন।
আঠারো বছরের তরুণী সেলিনার জীবনে মারধর অবশ্য নতুন কিছু নয়। ষোল বছর বয়সে বিয়েতে আপত্তি করায় লাগাতার নির্যাতন চালান বাবা-মা। টানা এক বছর মারধর সহ্য করার পর অমত সত্ত্বেও সারগাছির কাছে শল্যাপাড়া গ্রামে বিয়ে হয়ে যায়। তারপর একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জেদ করতে শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির মারধর। তা সত্ত্বেও ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রীটি ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করেনি।
দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে বাড়িতে না জানিয়ে ‘যুব সংসদ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় সে। গত জানুয়ারি মাসে মাদ্রাসার দলের সঙ্গে বহরমপুর যায়। জেলার ২৬টি স্কুলের মধ্যে প্রথম হয় তাদের মাদ্রাসা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনারুল হক বলেন, “বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে সেলিনা স্পিকারকে প্রশ্ন করে, নবম ও দশম শ্রেণিতে মিড ডে মিল চালু হচ্ছে না কেন? উচ্চশিক্ষায় দুঃস্থ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় পড়ার ব্যবস্থা নেই কেন, সে প্রশ্নও করে ও। এই দুটি প্রশ্নের জন্য প্রচুর হাততালি পায়। দল প্রথম হওয়ায় ওর বড় ভূমিকা ছিল।”
এর পরেই মাদ্রাসা ঠিক করে, সেলিনাকে এ বার শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকায় পাঠানো হবে কলকাতার যুব সংসদে। কিন্তু বাড়িতে লুকিয়ে বহরমপুর যাওয়া গেলেও, কলকাতা যাওয়া অসম্ভব। ফলে বাড়িতে জানাতে বাধ্য হয় ছাত্রীটি। আর তার ফলেই শুরু হয় প্রচণ্ড নির্যাতন। এ দিন বেলডাঙা থানার ওসি অরূপ রায় বলেন, “বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি, দুটি জায়গাতেই সেলিনা নিরাপদ নয় বলে আমরা তাকে সরকারি হোমে রাখার অনুরোধ করি।” তিনি জানান, আগামী ২৪ নভেম্বর কোর্টে সেলিনার জবানবন্দি নেওয়া হবে। কোর্ট নির্দেশ দিলে পুলিশই কোনও হস্টেলে থেকে ওর পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেবে।
সেলিনার বাবা আসারুল বলেন, “মেয়ে কলকাতায় গিয়েছে জানলে শ্বশুরবাড়ি ওকে নেবে না। আমার সমস্যা বাড়বে। তাই যেতে নিষেধ করেছিলাম। এতে পুলিশ যে আমাকে ধরতে পারে, বুঝতে পারিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy