Advertisement
২৯ মে ২০২৪

রাস্তায় চাঁদার জুলুম চলছেই, নীরব পুলিশ

চাঁদার জুলুম রুখতে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় রবিবার তিন জন ধরা পড়েছে। তবে বহরমপুরের ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনও অধরা। বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে বুধবার সকালে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের চাঁদা আদায়কারীদের হাতে আক্রান্ত হন বহরমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত টাউন সাব-ইন্সপেক্টর-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী। ওই পুলিশ কর্মীদের বাঁশ-কাঠ-লাঠি দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ করে ইঁট ছোড়ারও অভিযোগ রয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একটি জিপ।

বহরমপুরের রাস্তায় এমন দৃশ্য সকলেরই চেনা। —ফাইল চিত্র।

বহরমপুরের রাস্তায় এমন দৃশ্য সকলেরই চেনা। —ফাইল চিত্র।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

চাঁদার জুলুম রুখতে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় রবিবার তিন জন ধরা পড়েছে। তবে বহরমপুরের ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনও অধরা। বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে বুধবার সকালে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের চাঁদা আদায়কারীদের হাতে আক্রান্ত হন বহরমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত টাউন সাব-ইন্সপেক্টর-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী। ওই পুলিশ কর্মীদের বাঁশ-কাঠ-লাঠি দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ করে ইঁট ছোড়ারও অভিযোগ রয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একটি জিপ।

ওই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই ফের বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেটের দু’পারে অবাধে চলেছে আগের মতই চাঁদা আদায়। এ দিনও বাঁশ হাতে রাস্তা শাসন করে চাঁদা আদায়কারীরা। তুমুল যানজটও হয়। কিন্তু পুলিশের দেখা মেলেনি!

আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু পুজোর প্রায় মাস খানেক আগে থেকে চলছে চাঁদার জুলুমবাজি। পুলিশ ও প্রশাসনের উদাসীনতায় চাঁদা তোলার নামে প্রতি বছরের ওই জুলুমবাজিতে অতিষ্ঠ বহরমপুরের মানুষ। পঞ্চাননতলা রেলগেটের পূর্ব পাড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে পণ্যবাহী লরি আটকে জোর করে চাঁদা তুলছে বলে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তেমনি শাসক দলের পাশাপাশি সিটু এবং আইএনটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনও চাঁদা তুলে থাকে ওই রাস্তায়। পঞ্চাননতলা রেলগেটের দু-পারের ওই তিন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের চাঁদার জুলুমবাজিতে যানজট নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই যানজটের কবলে পড়ে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা মোড় পার হতে ঘন্টা খানেকেরও বেশি লাগছে এখন।

প্রতি দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে ওই চাঁদা তোলা। শুরুতে চাঁদা আদায়ের জন্য হাত তুলে লরি দাঁড় করানো হয়। এক জন গাড়ির চালকের কাছে চাঁদার রসিদ ধরিয়ে দেয়। বাকিরা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের হাতে বাঁশ-লাঠি ধরা থাকে। যদি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও লরি চালক চাঁদা দেয়, ভাল। নাহলে চলে জুলুমবাজি। লরিতে উঠে গিয়ে জানালার বাইরে থেকে চালকের কলার ধরে জোর করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। এমনকী চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে লরির চালকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতিও হয়ে থাকে। তবে চাঁদা আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনও চালকেরই লরি নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে না।

ওই চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে লরি-বাস-ট্রেকার-অটো-ব্যাটারি চালিত টুকটুক গাড়ি থেকে মোটরবাইকের সারি পর পর দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে জনবহুল ও ব্যস্ততম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। পঞ্চাননতলা রেলগেটের ওই যানজটের প্রভাব এক দিকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে, অন্য দিকে পঞ্চাননতলা মোড় থেকে চুনাখালি মোড়ে গিয়ে পড়ে। তার মধ্যে লালগোলা-শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচলের সময়ে পঞ্চাননতলা রেলগেট বন্ধ হলে ওই পথে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। গত মাস খানেক ধরে এমনটাই চলে আসছে। এতে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছেন নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ যাত্রী, এমনকী পথচারীরাও।

সম্প্রতি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠনের সদস্য দয়াল হাজরা এক লরি চালককে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় পুলিশ দয়াল হাজরাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এর পরেও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনভূক্ত মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চাঁদা তোলা বন্ধ হয়নি।

মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক তাপস বিশ্বাস বলেন, “ওই রাস্তায় চাঁদা তোলা বন্ধ করার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসন আমাদের কথায় আমল দেয়নি। সেই সুযোগে সিপিএমের এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের লোকজন চাঁদা তুলছে। ফলে আমাদের সদস্যদেরও আমরা রুখতে পারছি না।” তিনি জানান, “মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে মাঝে কিছু দিন চাঁদা তোলা বন্ধ করেও দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম, বাকিরা চাঁদা তুললেও পুলিশ বা প্রশাসন তাদের কিছুই বলছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের সদস্যদের বাধা দিতে গেলে তারা শুনবে কেন?”

আইএনটিইউসি অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সহ-সভাপতি লিয়াকত আলি বলেন, বলেন, “শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন বলে তাদের সদস্যরা জোর-জবরদস্তি চাঁদা তুলছে। চাঁদা তোলার জন্য আমাদের কার্যালয়ের সামনে এসেও তারা লরি আটকে চাঁদা তুলছে। আমরা চাঁদা তুলছি না, তা নয়। কিন্তু জোর করে চাঁদা তুলছি না।” সিটু অনুমোদিত জনপথ পরিবহণ মজদুর ইউনিয়নের কার্যালয় রয়েছে পশ্চিম পাড়ে। সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে অবশ্য বলেন, “জুলুমবাজি করে চাঁদা তোলা হলে অন্যায়। জনস্বার্থ অবশ্যই আগে দেখা উচিত। রাস্তায় যানজট তৈরি করে আমি চাঁদা তোলার বিপক্ষে।”

তবে মুখে যে যাই বলুন না কেন, শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাঁদা আদায় চলছে। চলছে জুলুমবাজিও। কিন্তু পুলিশের দেখা মিলছে কই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE