নারীশক্তি। চাপড়া সীমান্তে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
সাতসকালে বর্ডার রোডে উঠে চমকে গিয়েছিলেন কুলুপাড়া সীমান্তের ফতেমা বিবি। তারপর চোখে চোখ পড়তেই আলতো হেসে প্রশ্নটা ভেসে এসেছিল“কি গো, খেতে চললে নাকি?” সে গলায় কোনও ঝাঁঝ ছিল না। কাঁধে ইনসাস আর খাঁকি উর্দি পড়ে যেন প্রশ্ন করছে পাশের বাড়ির কোনও মেয়ে। নিখাদ বাংলায়। তবুও কিছুটা ভয়ে, কিছুটা বিস্ময়ে চাদরের ভিতর থেকে মলিন ভোটার কার্ডটা বের করে ফতেমা জবাব দেন, “হ্যাঁ, এই যে আমার কার্ড...”। ফতেমার অবস্থা আন্দাজ করে আড় ভাঙিয়ে দেন বিএসএফের ওই মহিলা জওয়ান, “এখন থেকে সীমান্ত পাহারা দেব আমরাও, বুঝেছ? ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সমস্যা হলে আমাদের জানাবে। সঙ্কোচ করবে না।” ফতেমা একা নন, ধীরে ধীরে জড়তা কাটছে চাপড়া সীমান্তের সিরিন বিবি, উত্তরা বিশ্বাসদেরও।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গের সীমান্তে বিএসএফ-এর বিভিন্ন ব্যাটেলিয়নে ২৪০ জন মহিলা জওয়ান আছেন। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর সেক্টরের ৫টি ব্যাটেলিয়নে আছেন ১১০ জন। শিলিগুড়িতে ৯ মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে সম্প্রতি তাঁরা যোগ দিয়েছেন নদিয়া সীমান্তে। বিএসএফ-এর কৃষ্ণনগর সেক্টরের ডিআইজি পুষ্পেন্দর সিংহ রাঠোর বলেন, “মহিলা জওয়ানরা আসার পর সীমান্তের মহিলারা তাদের সঙ্গে অনেক বেশি খোলামেলা কথা বলতে পারছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।”
বিএসএফের এক কর্তা জানান, সীমান্তে মহিলাদের তল্লাশি করার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হত। স্থানীয় থানা থেকে মহিলা কনস্টেবলকে আনা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। সেটা যেমন ঝক্কির ছিল, তেমনই সময়ও লেগে যেত অনেক। এখন অন্তত সেসব সমস্যা নেই। তাছাড়া সীমান্তে পাচারের একটা বড় কারণ সচেতনতার অভাব। গ্রামের মহিলারা যদি সচেতন হন তাহলে পাচারের পাশাপাশি অনেক সমস্যাই কমে যাবে। আর সেই সচেতন করার কাজটা সব থেকে ভাল করতে পারবেন এই মহিলা জওয়ানরা।
মলুয়াপাড়া সীমান্তের উত্তরা বিশ্বাস বলছেন, “কাঁধে বন্দুক, পায়ে ভারি বুট দেখে প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে কথা বলার পর মনে হয়েছিলবিএসএফ নয়, যেন পাশের বাড়ির মেয়ে। ওঁরা ভাল বাংলা বলতে পারেন। এখন তো প্রায়ই কথা হয়। সহজেই সমস্যার কথা খুলে বলতে পারি।”
বাংলা বলতে পারার কথা শুনে মুচকি হাসেন জওয়ান জ্যোতি ঘোষ। বলছেন, “আমার বাড়ি হাবড়ায়। এখানকার লোকজন নানা অসুবিধার মধ্যে থাকেন। আটপৌরে এই মানুষদের সঙ্গে একটু ভাল ব্যবহার, একটু হেসে কথা বললে ক্ষতি কী? তাতে তো লাভ দু’তরফেরই। ওঁরাও সহজ হতে পারেন, ভাল লাগে আমাদেরও।”
কথার ফাঁকেই উড়ে আসে সহকর্মীর সঙ্কেত। চকিতে পাল্টে যায় ওই জওয়ানের শরীরি ভাষা। পাশের বাড়ির নয়, তখন ওই জওয়ানকে সীমান্তের কড়া অভিভাবিকা বলেই মনে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy