Advertisement
E-Paper

সিনেমা দেখেই খুনের ছক অসীমের

কী ভাবে খুন করবে, কী ভাবেই বা অপরাধ চাপা দেবে— এ সব নিয়ে আড়াই মাস ধরে রীতিমতো ‘গবেষণা’ চালিয়েছিল ওই যুবক। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, রাতের পর রাত জেগে ইউটিউবে খুনোখুনির ভিডিও দেখত অসীম।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৬
হেফাজতে: ধৃত অসীম সরকার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হেফাজতে: ধৃত অসীম সরকার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বছর চব্বিশের যুবকের কাছে ৬ লক্ষ টাকার ক্যামেরাটা ছিল টিভি-সিনেমার রুপোলি জগতে ঢোকার জাদুকাঠি। সেই ক্যামেরা হাতাতেই মাথায় খুন চেপেছিল অসীম সরকারের।

কী ভাবে খুন করবে, কী ভাবেই বা অপরাধ চাপা দেবে— এ সব নিয়ে আড়াই মাস ধরে রীতিমতো ‘গবেষণা’ চালিয়েছিল ওই যুবক। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, রাতের পর রাত জেগে ইউটিউবে খুনোখুনির ভিডিও দেখত অসীম। মোবাইল অ্যাপে খুন-জখমের গল্প পড়ত। গোয়েন্দা গল্পেও নজর ছিল তার। সবটাই ছিল খুনের আগের ‘হোমওয়ার্ক’।

সেই ‘বিদ্যা’ হাতেকলমে কাজে আসে ২৯ জুলাই রাতে। ক্যামেরার মালিক অসীমকান্তি পালকে কলকাতা থেকে ফোনে বনগাঁয় ডেকে আনে অসীম। খুন করে ক্যামেরা নিয়ে পালায়। একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার অশোকনগর থেকে তাকে ধরে পুলিশ। শুক্রবার বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। ক্যামেরার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের ছক কষতে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুনের ফিল্ম দেখত অসীম। গল্পও পড়ত।’’

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, টেলিফোন অফিসের আধিকারিক প্রবীণ মানুষটির স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানানোর শখ ছিল। অসীম তাকে বলেছিল, এক বাংলাদেশি প্রযোজকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে। অসীমকান্তিবাবুর ক্যামেরাটিও ভাড়া নেবে।

অসীমের কথা মতো ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছন অসীমকান্তিবাবু। বনগাঁ-রানাঘাট লোকাল ট্রেনে অসীম তাঁকে নিয়ে যায় সাতবেড়িয়ায়। অন্ধকার রাতে রেললাইন বরাবর মোবাইলের আলো জ্বেলে হাঁটতে শুরু করেন অসীমকান্তিবাবু।

একটা সময়ে পিছন থেকে তাঁর গলা চেপে ধরে অসীম। ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে দেয়। অনভ্যস্ত হাতে ছুরি চালাতে গিয়ে নিজের আঙুলও কেটে ফেলে। দু’জনের খানিক ধস্তাধস্তিও হয়। অসীমকান্তিবাবুর পেটে পর পর ছুরি ঢুকিয়ে দেয় অসীম। পরে রেললাইনের পাশে পাটখেতে দেহ ফেলে পালায়। অসীমকান্তিবাবুর মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, সিমকার্ড বের করে ছুড়ে ফেলে। রক্তারক্তি হতে পারে জেনে নিজের ব্যাগে টি-শার্ট নিয়ে এসেছিল সে। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বদলে ফেলে পোশাক। ৫ কিলোমিটার হেঁটে রাত ২টো নাগাদ পৌঁছয় বনগাঁ স্টেশনে। ভোরের ট্রেন ধরে হাবরা হয়ে পৌঁছয় হরিণঘাটার বাড়িতে।

কী ভাবে ধরা পড়ল আততায়ী?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, একটি সিম কার্ড, পুরনো মোবাইল ফোন জোগাড় করেছিল অসীম। সেই নম্বর থেকেই যোগাযোগ রাখত অসীমকান্তিবাবুর সঙ্গে। অন্য কোনও নম্বরেও ফোন করত না ওই ফোন থেকে। তার ধারণা হয়েছিল, এর ফলে নিহতের কললিস্ট ঘাঁটলেও তার হদিস পাবে না পুলিশ।

ঘটনার দিন ওই নম্বর থেকে অসীমকান্তিবাবুর ফোনে একাধিক বার ফোন করা হয়েছে দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিমটি নেওয়া হয়েছিল উত্তরবঙ্গের এক ব্যক্তির নামে। ওই সিমের টাওয়ার লোকেশন ২৯ তারিখ, খুনের দিন বনগাঁ, সাতবেড়িয়াতেও দেখা যায়। খুনের আগে, ২৩ জুলাই অসীমকান্তিবাবুর হরিদেবপুরের বাড়িতেও সিমের টাওয়ার লোকেশন মেলে। এরপরে হিসেব মেলাতে সুবিধা হয় পুলিশের। ওই নম্বরে টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরেই অসীমের হদিস পান তদন্তকারীরা।

Asim Sarkar Arrest Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy