Advertisement
E-Paper

ঘুসুড়ির ঘুষকাণ্ডে নাম জড়াচ্ছে নেতাদেরও

তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিশ কোটিরও বেশি নগদ টাকা! জেরায় কিন্তু তাঁর মুখে উঠে আসছে অন্য সহকর্মী মায় রাজনৈতিক নেতাদের নামও। সাবেক বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারী কি একাই বিপুল টাকার মালিক হয়েছিলেন, না এর পিছনে রয়েছে আরও কোনও রাঘববোয়াল— উত্তর খুঁজছেন দুর্নীতিদমন শাখার তদন্তকারীরা।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৩

তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিশ কোটিরও বেশি নগদ টাকা! জেরায় কিন্তু তাঁর মুখে উঠে আসছে অন্য সহকর্মী মায় রাজনৈতিক নেতাদের নামও।

সাবেক বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারী কি একাই বিপুল টাকার মালিক হয়েছিলেন, না এর পিছনে রয়েছে আরও কোনও রাঘববোয়াল— উত্তর খুঁজছেন দুর্নীতিদমন শাখার তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা পরপর সাজালে বালি পুর-এলাকার একাধিক ক্ষমতাবান নেতাদের নাম ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। কী করে এই পুর এলাকা জুড়ে একের পর এক বেআইনি বহুতল তৈরি হয়েছিল, এই ঘটনার পর তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লিলুয়া এলাকায় বন্ধ কারখানার জমি এবং পুকুর ভরাট করে অনেক ‘বেআইনি’ বহুতল তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কী ভূমিকা নিয়েছিল, সে ব্যাপারে প্রণবের কাছে অনেক তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় প্রণব জানিয়েছেন— শুধু লিলুয়া নয়, বালি-বেলুড় সহ গোটা পুর এলাকাতেই বহুতল বাড়ির অনুমোদন ও রাস্তা তৈরির কাজ বাবদ পুরসভায় তাঁর অনেক সহকর্মীই ‘ঘুষ’ নিয়েছেন। প্রণবের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই বালি পুরসভার অন্দরমহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরসভার এক অফিসার বলেন, ‘‘কম্বলের লোম বাছা শুরু হলে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়ে সবাই আতঙ্কে আছেন!’’ এ ছাড়া পুলিশ সূত্রের খবর, প্রণব আরও যে সব নাম করেছেন, সেই তালিকায় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান পারিষদ, সিপিএম ও তৃণমূলের কয়েক জন কাউন্সিলরও রয়েছেন। সরাসরি পুরসভার দায়িত্বে নেই এমন কয়েক জন নেতার নামও এসেছে। ঘটনার শিকড় কত দূর, তা খুঁজে বের করতে দুর্নীতিদমন শাখার এডিজি রামফল পওয়ারকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বিকেলে তিনি এডিজি-কে ফোন করে তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজ নেন।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

প্রণবের বক্তব্যের রেশ ধরে প্রথম পর্যায়ে শনিবার রাতেই তাঁর এক সহকর্মী, বালি পুরসভার আর এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাসুদেব দাসের বেলুড়ের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত আড়াইটে পর্যন্ত বেলুড়ের বিধানপল্লির ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেনে বাসুদেববাবুর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। প্রতিটি ঘর, বাথরুম, জলের ট্যাঙ্ক পরীক্ষা করে দেখা হয়। তবে বাসুদেবের বাড়িতে কোনও টাকা মেলেনি বলেই তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা সূত্রের খবর, বাসুদেববাবুর বাড়ি থেকে বরং কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে ফের তাঁকে জেরা করা হতে পারে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) সিপিএমের প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কাছেই বহুতল-জমি-বাড়ি-রাস্তা তৈরির নকশা নিয়ে সব জানাতেন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা। এর পরে প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান সিপিএমের বিকাশ বসু সেই সব নকশা ও আবেদনে অনুমোদন দিতেন। প্রদীপবাবু যদিও দাবি করছেন, ‘‘গোটা বিষয়টাই একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। হাওড়া পুরসভার সঙ্গে বালির সংযুক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন মিলছিল না। তাই জন্যই পরিকল্পনা করে এ সব করা হচ্ছে।’’ যদিও ঘুষকাণ্ডে প্রণব গ্রেফতার হওয়ার পরে এই প্রদীপবাবুই স্বীকার করেছিলেন, ‘‘লোকের মুখে শুনতাম উনি টাকা নেন।’’ বিকাশবাবুর সঙ্গে অবশ্য এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। কয়েক বার ‘রিং’ হওয়ার পরে তাঁর মোবাইল ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায়। তবে সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘প্রকৃত দোষীকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে। কিন্তু যে অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনা, সেই অভিযোগটির সারবত্তাও খতিয়ে দেখতে হবে। আচমকা এই অভিযোগের পিছনে নিশ্চয় অন্য কোনও কারণ রয়েছে।’’

যে দুই প্রোমোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রণব, সেই প্রোমোটাররা অভিযোগ এনেছেন বালির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ীর বিরুদ্ধেও। এ ব্যাপারে অরুণাভবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। যে প্রোমোটারদের আমি চিনিই না, তাঁরা কী ভাবে আমার নামে অভিযোগ করছেন, বু‌ঝতে পারছি না। ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি।’’

রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা সূত্রের খবর, জেরায় প্রণব স্বীকার করেছেন সিপিএম আমলে তাঁর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের খুবই ভাল যোগাযোগ ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে বর্তমান শাসক দলের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন। জেরার সময়ে তিনি শাসক দলেরও কয়েক জন নেতার নাম করেছেন বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ঘুষকাণ্ডে তাই কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূলও। কয়েক সপ্তাহ আগেই বেলুড়ে মুখার্জি লেনে একটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন হাওড়া পুরকমিশনার। ওই সময়ে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছিলেন কমিশনার নিজেই। এই ঘটনার কথা এর মধ্যেই প্রচারে এনে ফেলেছেন সিপিএম নেতারা। তার মধ্যে প্রণবের মুখে আরও কয়েক জনের নাম আসায় পরিস্থিতি সামলাতে এ দিন বালিখাল থেকে বাদামতলা (প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়ি) পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল এবং প্রাক্তন পুর কর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে সভা করেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য এই ঘটনায় শাসক দলের জড়িত থাকার কথা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের দোষ ঢাকতে সিপিএম এখন অনেক কিছুই রটাচ্ছে। দলের কারও জড়িত থাকার কথা প্রমাণ হলে তিনি শাস্তি পাবেন।’’ রবিবারও রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখার সদর দফতরে প্রণব ও তাঁর ছেলে তন্ময়কে দফায় দফায় জেরা করেন অফিসারেরা। এ দিন ফের প্রণবের ঘুসুড়ির বাড়িতে তল্লাশি হয়। খানাকুলে প্রণবের আর একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ghusuri bribe case bribe case ghusui bribe scam bali bribe scam pranab adhikari political leaders name political leaders bribe case ghusuri bribe political leaders abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy