প্রতীকী ছবি।
এক চিকিৎসকের অবহেলা আর গাফিলতিতেই রোগীর ডেঙ্গি নির্ণয় হতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। কোমায় পৌঁছে গিয়েছেন রোগী। কিন্তু পরবর্তী কালে অন্য এক দল চিকিৎসক ভেন্টিলেশনে থাকা সেই রোগীকে সুস্থ করতে প্রাণপাত করছেন।
গত এক মাস ধরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর আইটিইউয়ে রয়েছেন বেহালার হরিসভা রোডের বাসিন্দা বছর চল্লিশের শমীক চক্রবর্তী। এক মুহূর্তের জন্যও ভেন্টিলেশন থেকে তাঁকে বার করা যায়নি। এর আগে আরও এক মাস তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালের। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে টানা দু’মাস তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। কবে তাঁর ভেন্টিলেটর খোলা যাবে, তিনি কবে সুস্থ হবেন, আদৌ হবেন কি না—এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
শমীকবাবুর স্ত্রী সঙ্গীতা চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শমীকবাবুর জ্বর এসেছিল। দু’দিন অপেক্ষার পরে বেহালায় স্থানীয় এক ডাক্তারবাবুর চেম্বারে যান। তিনিই লোক পাঠিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু সেই রিপোর্ট ডাক্তারবাবু দেখাননি। মুখে রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের প্রবোধ দিয়ে জানান, কিছু হয়নি জ্বর কমে যাবে। কিন্তু তার পরে ছ’দিনেও জ্বর না কমায় তাঁরা বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করান। সেখানে এনএস-১ এর পাশাপাশি আইজিএম পরীক্ষাতেও ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তত দিনে জ্বরের পরে এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। ঠিক তার পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোমায় পৌঁছে যান শমীকবাবু। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়নি, কিন্তু কোনও বোধ কাজ করছে না। ভেন্টিলেটর ছাড়া তিনি নিঃশ্বাসও নিতে পারছেন না।
সঙ্গীতাদেবীর কথায়, ‘‘প্লেটলেট হু-হু করে পড়ছিল। সিটি স্ক্যান করার সময়েই হার্ট অ্যাটাক করল। ডাক্তারবাবুরা জানালেন কয়েক মিনিট মস্তিষ্কে রক্ত যেতে পারেনি। তার পরেই ভেন্টিলেশন।’’ তিনি বলেন, ‘‘আসলে, ওঁর যে রক্তপরীক্ষায় এনএস-১ পজিটিভ এসেছে সেটা আমাদের এলাকার ডাক্তারবাবু জানানোর প্রয়োজনই মনে করেননি। উনি নিজে রিপোর্ট খুলেও দেখার সময় পাননি। অথচ আমাদের বলে গিয়েছেন, সাধারণ জ্বর! পড়ে ওঁর চেম্বার থেকে আমরা সেই রিপোর্ট খুঁজে বার করি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ন্যাশনালের ডাক্তারবাবুরা সাধ্যমতো লড়াই করছেন। সরকারি হাসপাতালে আইটিইউয়ের প্রবল চাহিদা।
সেখানে ওঁরা এত দিন আমার স্বামীর জন্য শয্যা বরাদ্দ করে রেখেছেন। এটা না করলে আমি চিকিৎসার ভারই বহন করতে পারতাম না। এই লড়াইটাই করা যেত না।’’
পেশায় মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপ্টর শমীকবাবু ২০ সেপ্টেম্বর বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দু’দিন ভর্তি ছিলেন। তার পর ২৩ তারিখ থেকে আলিপুরের একটি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে থাকেন টানা এক মাস। তাতে হাসপাতাল ১১ লক্ষ টাকার বিল করে ফেলে। নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে সেই বিল মিটিয়েছেন সঙ্গীতাদেবী। আর টানতে পারবেন না বুঝে শেষপর্যন্ত ন্যাশনাল মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা ভেন্টিলেটর আটকে যেতে পারে জেনেও ন্যাশনাল রোগীর দায়িত্ব নিতে রাজি হয়। ২৪ অক্টোবর থেকে আরও প্রায় এক মাস হল রোগী সেখানেই রয়েছেন।
সম্প্রতি গুড়গাঁওয়ের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গি-আক্রান্ত এবং ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া ৭ বছরের আদ্যা সিংহ নামে এক বালিকার ১৫ দিনের বিল করেছিল ১৮ লক্ষ টাকা! তার ভিতর ৬৬০ ধরনের সিরিঞ্জ এবং ২৭০০ ধরনের গ্লাভসের মতো জিনিসেরও দাম ধরা হয়েছিল! আদ্যা মারা যাওয়ার পর এই বিল নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছিলেন তাঁর বাবা। খোদ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নাড্ডা বিষয়টি হাতে নিয়েছেন। প্রায় একই অবস্থায় পড়েছিল শমীকবাবুর পরিবার। তবে তাঁর ক্ষেত্রে তদন্ত নয়, চিকিৎসায় সবরকম সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy