Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অভিষেকের দুর্ঘটনায় হুঁশ, নবজন্ম সুপারিশের

ভিআইপি’র গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তেই বেবাক বদলে গেল ছবিটা। রাজ্যের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার যে প্রস্তাবে গত দেড় বছর ধরে ধুলো জমছিল, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনার জেরে তা নিয়ে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

ভিআইপি’র গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তেই বেবাক বদলে গেল ছবিটা।

রাজ্যের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার যে প্রস্তাবে গত দেড় বছর ধরে ধুলো জমছিল, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনার জেরে তা নিয়ে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। এই দেড় বছরে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১৭ হাজার পথ দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ।

তবে অভিষেক-কাণ্ডের পরে প্রশাসনিক মহলে নতুন ভাবে তৎপরতা দেখা দিয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর সিঙ্গুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে তাঁর গাড়ি একাধিক পাল্টি খায়। গুরুতম জখম অবস্থায় সাংসদকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে বৈঠকে বসেন পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের মাথারা, দুর্ঘটনার দাওয়াই খুঁজতে। এবং তখনই উঠে আসে পুরনো প্রস্তাবগুচ্ছের প্রসঙ্গ। কিন্তু সে ফাইল এখন নবান্নের কোন আলমারিতে পড়ে রয়েছে, তার হদিস কেউ দিতে পারেননি। তাই স্থির হয়, ফাইল তল্লাশিতে সময় নষ্ট না-করে পুরনো প্রস্তাব নতুন করে পাঠানো হবে। সেই মতো নবান্নে নতুন ফাইল গিয়েছে বলে পুলিশ-সূত্রের খবর। দেড় বছর আগের সুপারিশগুলো কী ছিল?

পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ফি বছর বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় গড়ে সাড়ে তিন হাজার মানুষের প্রাণ যায়। মৃত্যু-মিছিলে বাঁধ দিতে পুলিশকর্তারা সারা রাজ্যের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে কলকাতার ধাঁচে সাজানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, পুরো রাজ্যকে ভাগ করা হোক তিনটি ট্র্যাফিক জোনে— উত্তর, দক্ষিণ ও সদর। প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকুন এক জন এসপি র‌্যাঙ্কের আইপিএস অফিসার।

প্রসঙ্গত, কলকাতা পুলিশের বাইরে যে পাঁচটি কমিশনারেট, সেই হাওড়া, বিধাননগর, ব্যারাকপুর, আসানসোল ও শিলিগুড়িতে আলাদা ট্র্যাফিক বিভাগ রয়েছে। যেমন রয়েছে কলকাতায়। জেলায় তেমন কিছু নেই। তার মাসুলও গুনতে হচ্ছে পদে পদে। কী রকম? ভবানীভবনের খবর: জেলায় ট্র্যাফিকের রাশ এসপি’র হাতে। এসপি-ই ঠিক করে দেন, কোথায় কত ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন হবে। জেলায় জেলায় ‘হাইওয়ে পুলিশ’ নামে নাম-কা-ওয়াস্তে একটা ট্র্যাফিক বিভাগ অবশ্য রয়েছে। তার মাথায় এক জন ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারও রয়েছেন। তবে পরিকাঠামো বলতে কার্যত কিছু নেই। বিভাগের অবস্থা ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। পরিণাম যা হওয়ার, তা-ই। যান চলাচলে নজর রাখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। উপরন্তু অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বা অপরাধদমনের কাজে জেলার থানাগুলো এতটাই ব্যস্ত থাকে যে, সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত ঠিকঠাক করা যায় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বা বিমার টাকা পেতে নাজেহাল হতে হয়।

এ হেন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সুপারিশ করা হয়েছিল, কমিশনারেট এলাকার বাইরের জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের ভার থাক রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের হাতে। সেই লক্ষ্যে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ডের ধাঁচে রাজ্যে ৮০টি ‘ট্র্যাফিক পুলিশ ফাঁড়ি’ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এক-একটা ট্র্যাফিক ফাঁড়ির আওতায় থাকবে ৫০-৬০ কিলোমিটার রাস্তা। প্রতি ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকবেন দু’জন সাব ইন্সপেক্টর (এসআই), সঙ্গে চার জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) ও ১৬ জন কনস্টেবল। ‘‘কথা ছিল, ট্র্যাফিক আইনে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ফাঁড়ির অফিসারদের হাতে দেওয়া হবে। এমনকী, তদন্তের এক্তিয়ারও।’’— বলেন রাজ্য পুলিশের এক কর্তা।

কর্তাদের দাবি, যান চলাচলের নিরিখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় ফাঁড়ি তৈরির পরিকল্পনা। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে ৪৩টি জায়গা ‘সর্বাধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত। অভিষেকের দুর্ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশও তালিকায় রয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গায় ‘ওয়াচ টাওয়ার’ বানানো হবে। সেখানে বসে পুলিশকর্মীরা যান শাসন করবেন। এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ— “অধিকাংশ সময়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পিছনে আছে বেপরোয়া ড্রাইভিং। নজরদারি ছাড়া তা ঠেকানো অসম্ভব। অথচ রাজ্য সড়ক বা জাতীয় সড়কে নজরদারির বালাই নেই। তাই ট্র্যাফিক পুলিশ ফাঁড়ি অত্যন্ত জরুরি।’’

পুলিশ-সূত্রের খবর: প্রথম ধাপে ১৩টি ফাঁড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা। বাকি সব প্রস্তাব কবে দিনের আলো দেখে, আপাতত তারই প্রতীক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic management Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE