Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টি-কুয়াশায় ট্রেনের দিশারি তৃতীয় নয়ন

দেবাদিদেব মহাদেব আর দেবী দুর্গার তৃতীয় চক্ষুর কথা বলে পুরাণ। দু’নয়নে যা ধরা পড়ে না, তার জন্যই তৃতীয় নয়ন। এই ‘তৃতীয় নয়ন’ এ বার বসছে রেলের সব ইঞ্জিনে। চালকের দু’‌চোখের দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়েও অনেক দূর পর্যন্ত দেখিয়ে দেবে সেই যন্ত্রচক্ষু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৩৮
Share: Save:

দেবাদিদেব মহাদেব আর দেবী দুর্গার তৃতীয় চক্ষুর কথা বলে পুরাণ। দু’নয়নে যা ধরা পড়ে না, তার জন্যই তৃতীয় নয়ন।

এই ‘তৃতীয় নয়ন’ এ বার বসছে রেলের সব ইঞ্জিনে। চালকের দু’‌চোখের দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়েও অনেক দূর পর্যন্ত দেখিয়ে দেবে সেই যন্ত্রচক্ষু। রাতের অন্ধকার হোক বা খারাপ আবহাওয়া, ওই তৃতীয় নয়নের কল্যাণে ট্রেনচালক সামনের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পাবেন। রেল-কর্তৃপক্ষ এর নাম দিয়েছেন ‘ত্রিনেত্র ইমেজিং সিস্টেম’। দেব ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মার এই তৃতীয় নয়ন যন্ত্রযুগেরই আবিষ্কার।

কী ভাবে কাজ করবে এই চোখ?

ট্রেনচালকের সামনে থাকবে কম্পিউটারের পর্দা। আর ট্রেনের হেডলাইটের নীচে লাগানো থাকবে ইনফ্রারেড ও অতিসক্রিয় অপটিক্যাল ক্যামেরা। সঙ্গে থাকবে রেডার ম্যাপিং প্রযুক্তি। রেল ইঞ্জিনিয়ারেরা বলছেন, ইনফ্রারেড ভিডিও ক্যামেরার ছবি, অতিসক্রিয় অপটিক্যাল ভিডিও ক্যামেরার ছবি এবং রেডার— এই তিনে মিলে লাইন এবং আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফুটিয়ে তুলবে চালকের সামনে থাকা কম্পিউটারের স্ক্রিনে (কম্পোজিট ইমেজ)। এই ব্যবস্থায় অনেক দূর পর্যন্ত সব কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাবেন তিনি। খালি চোখে যা ধরা পড়ে না। ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে রেল মন্ত্রক। ঠিক হয়েছে, ধীরে ধীরে রেলের সব ধরনের ইঞ্জিনকেই এই প্রযুক্তির আওতায় আনা হবে। এতে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমবে বলে রেলকর্তাদের আশা।

কেন এই নয়া প্রযুক্তি?

এক দশকে আবহাওয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। বিশেষ করে শীতের রাতে কুয়াশা বা ধোঁয়াশার চাদর ট্রেন চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রেন। ওই সময় দুর্ঘটনার প্রবণতাও অনেক বেড়ে যায়। দু’বছর ধরে ওই মরসুমে ট্রেন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক রাখার তাগিদে রেল-কর্তৃপক্ষকে অনেক ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে। তাতেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ কমানোর জন্যই এই নতুন দৃষ্টি-প্রযুক্তি, জানাচ্ছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আশা, ‘ত্রিনেত্র’ চালু হলে যাত্রীদের মাঝপথে আটকে থাকার ঝকমারি অনেকটাই কমবে।

তৃতীয় চক্ষুর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির সময়, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ধস নামলে রেললাইনের উপরে পাথর ভেঙে পড়ে। ট্রেনচালক রাতে অনেক সময় দূর থেকে সেগুলো দেখতে পান না। জলে তোড়ে লাইন ভেসে গিয়ে থাকলে কাছাকাছি পৌঁছনোর আগে তা চালকের নজরে আসে না। যখন তিনি সেটা দেখতে পান, তখন আর সামলানোর সময় থাকে না। নতুন চক্ষু-প্রযুক্তি অনেক আগেই চালককে সেই বিপদের ছবি দেখিয়ে দেবে। তিনি সময়মতো ব্রেক কষতে পারবেন। এড়ানো যাবে বিপদ।

বিপদ এড়ানোর সুবিধাই শুধু নয়। রেলকর্তাদের দাবি, এই প্রযুক্তির দৌলতে চালক যে-কোনও ট্রেনকে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবেন। বর্ষা, কুয়াশা বা অন্ধকারের মধ্যে কোথাও কোনও বিপত্তির আশঙ্কা থাকলে যন্ত্রচোখ আগে থেকেই তা জানিয়ে দেবে। সেই সঙ্গেই বলে দেবে, স্টেশন বা পরের সিগন্যাল আর কতটা দূরে। তৃতীয় নয়নের সহায়তায় বিপদ এড়িয়ে গতি বজায় রাখতে পারবেন তিনি।

রেল মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এটা পুরোপুরি রেলের নিজস্ব প্রযুক্তি। রেল বোর্ডের সদস্য (মেকানিক্যাল)-এর তত্ত্বাবধানে এটি তৈরি করেছেন রেলেরই এক দল ইঞ্জিনিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE