রামচন্দ্র যখন বানর সেনা সঙ্গে নিয়ে সেতু বাঁধছিলেন ভারত-লঙ্কার মাঝে, কাঠবিড়ালি ছুটে গিয়েছিল সাগর সৈকতে। গায়ে বালি মেখে বার বার ডুব দিচ্ছিল জলে। সাগরে বালি ফেলে যদি দশরথ নন্দনের সেতুবন্ধন কিছুটা সহজতর করে তোলা যায়— কাঠবিড়ালির লক্ষ্য ছিল তেমনই।
মহা-সেতুবন্ধনের নিরিখে কাঠবিড়ালির সে প্রচেষ্টা অকিঞ্চিৎকর হলেও বৃথা যায়নি। রামচন্দ্রের সস্নেহ স্বীকৃতি পেয়েছিল কাঠবিড়ালি।
এ ব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর যে মহাঘূর্ণন, যে ঘূর্ণনে সূর্য ওঠে, অস্ত যায়, জ্যোৎস্নায় চরাচর ভেসে যায়, ঋতু বদলায়, জীবন লালিত হয়, জন্ম হয়, মৃত্যু হয়, নিত্য বদলে যায় আশপাশটা, সেই ঘূর্ণনে পৃথিবীর নিত্যসঙ্গী যে এক অকিঞ্চিৎকর গ্রহাণুও, সে আমরা টেরই পাইনি। জীবনভর জেনে এসেছি, পৃথিবীর মহাঘূর্ণনে সঙ্গী কেবল চাঁদ। এক অণু-চাঁদও যে তার যৎসামান্য অস্তিত্ব নিয়ে সমানতালে সঙ্গত করছে চেনা চাঁদের, সে তো এত দিন দেখতেই পাইনি আমরা!
চেনা চাঁদের আলো অনেক। নৈশ আকাশে অপরূপ শোভা সে। তার টানে উথলে ওঠে নীল গ্রহের নদ-নদী-সাগর-মহাসমুদ্র। কক্ষপথে সে-ই যে পৃথিবীর মূল সঙ্গী, তা নিজের উজ্জ্বল, প্রভাবশালী অস্তিত্বে যুগ যুগ ধরে জানান দিয়ে আসছে চেনা চাঁদ।
তা বলে কি অণু-চাঁদ অবহেলায় থাকতে পারে? মোটেই না। তার কাঠবিড়ালি-সুলভ অস্তিত্ব টেলিস্কোপের দৌলতে নজরে আসতেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী কূলে এখন মহা ধূমধাম। হইহই করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুধু চাঁদই নয়, পৃথিবী প্রদক্ষিণে রত আরও এক জন।
মানবজাতির চোখ এড়ালেও অচেনা, অকিঞ্চিৎকর অণু-চাঁদকে ধরিত্রী কিন্তু আপন করে নিয়েছিল অনেক আগেই। বৃহস্পতির গ্রহাণুপুঞ্জ বলয়ে জন্ম যার, সৌরমণ্ডলে ভেসে ভেসে কাছে আসতেই পৃথিবী তাকে অসীম মমতায় সঙ্গী করে নিয়েছিল শ’দুয়েক বছর আগেই।
অতএব, ধরিত্রীর সঙ্গী হওয়া বৃথা যায়নি কোনও অর্থেই।
সঙ্গে থেকো নতুন চাঁদ। খালি চোখে দেখতে পাই না ঠিকই। তবু জানছি মহাশূন্যে সঙ্গী রইল আরও এক।