উপহার পেয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনেরই এক কর্মীর গাফিলতিতে বছর খানেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁরা বরাদ্দ ভাতা। তারপর থেকেই প্রশাসনের দরজায় দরজায় বিস্তর ঘোরাঘুরি করেছেন। ফিরেছেন বিফল হাতেই। এমনকী, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমে ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই প্রশাসন নয়, ময়ূরেশ্বরের ওই অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সরকারি ভাতা চালু না হওয়া পর্যন্ত বরাদ্দের অর্ধেক হারে মাসে মাসে বৃদ্ধাকে ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন সংস্থার কর্তারা। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সোমবার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মাধ্যমে বৃদ্ধার হাতে ভাতার টাকা, একটি কাপড় এবং মিষ্টির প্যাকেট তুলে দিল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ময়ূরেশ্বরের কুলিয়াড়া গ্রামের ৯২ বছরের বৃদ্ধা শর্মানী দাস দীর্ঘ দিন ধরে মাসিক ১০০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছিলেন। সরকারি কর্মীদের পেনশনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রতি বছর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দেওয়ার মতোই বিধবা, বার্ধক্য, অক্ষম-সহ বিভিন্ন সরকারি ভাতার ক্ষেত্রেও প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের উপভোক্তাদের নবীকরণ তালিকা ব্লকের মাধ্যমে জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নন দফতরে পাঠানোর কথা। ওই নবীকরণের ভিত্তিতেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জীবিতদের ভাতা বহাল রাখার পাশাপাশি মৃতদের বন্ধের রিপোর্ট পাঠায় রাজ্যে। ওই রিপোর্ট অনুসারেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্মী নবীকরণের সময় ওই বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে দেওয়ায় বছর খানেক ধরে শর্মানীদেবী ভাতা পাচ্ছেন না। চরম অনটনে দিন কাটছে তাঁর। এমনিতেই ছেলের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। তার উপরে পা ভেঙে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অক্ষম হয়ে পড়ে রয়েছেন। বার্ধক্যজনীত কারণে ডাক্তারেরা ওই বৃদ্ধাকে নিয়মিত নানা ওষুধও খেতে বলেছেন। কিন্তু যাঁর দু’বেলা ভাতই জোটে না, তিনি ওষুধ পাবেন কোথা থেকে? অথচ ভুল সংশোধন করে বন্ধ ভাতা চালুর দাবিতে তিনি বছর খানেক ধরে প্রশাসনের নানা স্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। কিন্তু, বৃদ্ধার প্রাপ্য ভাতা চালু হয়নি।
এ দিকে, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই এগিয়ে আসে স্থানীয় ষাটপলশার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বৃদ্ধার গ্রামেই বাড়ি স্থানীয় ঢেকা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াই এবং সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাসেরও। তাঁদের মাধ্যমেই বৃদ্ধার হাতে টাকা-সহ জিনিসগুলি তুলে দেয় সংস্থা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার হলধর মণ্ডল, অয়ন ঘোষ, চন্দন মণ্ডল, কেবির শেখরা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ওই বৃদ্ধার কথা জানার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, যত দিন না তাঁর সরকারি ভাতা চালু হচ্ছে, তত দিন মাসিক ৫০০ টাকা করে হারে সাহায্য করব।’’ প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে সংস্থা ওই বৃদ্ধার হাতে টাকা তুলে দিয়ে আসব।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কল্যাণীদেবীরা বলছেন, ‘‘ওই সংস্থাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অর্ধেক হারে হলেও টাকাটুকু বৃদ্ধার চরম উপকারে লাগবে।’’ পাশাপাশি তাঁরা বৃদ্ধার প্রাপ্য সরকারি ভাতা যাতে ফের চালু হয়ে যায়, তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বৃদ্ধার সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিডিও মাসুদুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘‘ভুল সংশোধনের জন্য উপরমহলে কাগজ পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ওই বৃদ্ধা তাঁর প্রাপ্য ভাতা পেয়ে যাবেন।’’ এর পরেও ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যে ভাবে বৃদ্ধার পাশে এগিয়ে এসেছে, তার প্রশংসা করেছেন বিডিও। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা আছে বলেই পৃথিবীটা এখনও সুন্দর। এমন সহমর্মিতাই তো কাম্য।’’
আর বৃদ্ধা?
সাহায্য হাতে নিয়ে এ দিন কিছুতেই বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না শর্মানীদেবীর। অস্ফূটে বললেন, ‘‘সব বাড়িতে ঘুরে ঘুরেও ভিখারিদের ভিক্ষা মেলে না। বাড়ি বয়ে এসে কেউ এত সব দিয়ে যাবে কোনও দিন ভাবিনি। নাতিকে পাঠিয়ে আজই ওষুধ আনাব। কিছু দিন ধরেই খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy