নোট সোজা করে ধরলে টাকার অঙ্ক সবুজে লেখা। একটু তেরছা ভাবে ধরলে নীল। আবার হাজার টাকার নোটের জলছবিতে রয়েছে একটা হীরকাকৃতি ছাপ। পাঁচশো টাকার নোটে আবার সেই ছাপটাই গোলাকার। আসল ভারতীয় টাকার নোটে এই সব সুরক্ষা চিহ্ন থাকে, যা জাল নোটে নেই। এ বার ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে হাতেকলমে এই সব শিখেপড়ে জাল ভারতীয় নোট চেনার প্রয়োজনীয় পাঠ নেবে বাংলাদেশের পুলিশ!
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে আগামী মাসে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র তত্ত্বাবধানে এ দেশের পুলিশ অফিসার ও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের পুলিশকে ওই প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করবেন।
জাল ভারতীয় নোট এ দেশে ঢোকার আগে বাংলাদেশেই যাতে ধরা পড়ে যায়, সে জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ এই প্রথম। কোনও দেশের পুলিশ পড়শি রাষ্ট্রের জাল নোট চিনতে সেই প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, এমন নজির বিরল বলেই জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, বিপদের ধরনটা এমনই।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক সূত্রের দাবি, ২০১৪-র জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ধার করা হয়েছে ২৩ কোটি টাকার ভারতীয় জাল নোট।
এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, ‘‘জাল নোটের গুণমান দিন দিন যে ভাবে উন্নত হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ কেন, এ দেশের গোয়েন্দাদের অনেকেই ধোঁকা খেয়ে যাবেন। সেখানে বাংলাদেশের পুলিশ কী করবে? জাল ডলারের নোট আমাদের দিলে আমরা কি ধরতে পারব?’’
গত ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ২ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার জাল ভারতীয় নোট ধরা পড়ে। দু’দিন পরে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছনো এক ব্যক্তির কাছে পাওয়া যায় আরও ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার জাল ভারতীয় নোট। এই ব্যাপারে বিশদে খোঁজ নিতে এনআইএ-র কলকাতার এসপি বিক্রম খলাটের নেতৃত্বে গোয়েন্দাদের একটি দল ঢাকায় যায়। সেখানে তাঁরা জানতে পারেন, করাচি থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রাম বা ঢাকা— এই পথকে ভারতীয় জাল নোট পাচারের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে।
এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘ওই সব নোটের মান খুব ভাল। এমনকী, আসল নোটের বেশ কয়েকটি সুরক্ষা-বৈশিষ্ট্যও জাল নোটে ঢুকে পড়েছে। নোটে নখ দিয়ে টোকা মারলে ‘ঠং ঠং’ আওয়াজ হচ্ছে, গাঁধীজির জলছবিও রয়েছে।’’ ওই অফিসার বলেন, ‘‘তবে নোট উল্টো করে ধরলেও টাকার অঙ্ক রং বদলাচ্ছে না। হাজার টাকার নোটে হীরকাকৃতির ছাপ আর পাঁচশো টাকার নোটে গোলাকার ছাপও নেই। এগুলো এখনও নকল করা যায়নি। বাংলাদেশের পুলিশকে এই সবের পাঠই দিতে হবে।’’
এনআইএ সূত্রের খবর, এক সঙ্গে খুব বেশি ভারতীয় টাকা বাংলাদেশে কোনও নাগরিকের কাছে পাওয়া গেলে সে দেশের পুলিশের সন্দেহ হয় ঠিকই। অস্বাভাবিক পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে মামলাও হয়। কিন্তু সেই অভিযুক্তেরা
সহজেই জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। অনেক পরে হয়তো জানা যাচ্ছে, নোটগুলো জাল ছিল।
অথচ শুরুতে ধরতে পারলে আরও কঠোর আইনের ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা যেত। এনআইএ-র বক্তব্য, জাল ভারতীয় নোট চিনতে বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সে দেশে অবস্থিত বিভিন্ন ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার কর্মী-অফিসারদের উপরেই মূলত নির্ভর করতে হয়, হাতে গোনা কয়েক জন পুলিশ অফিসারই জাল ভারতীয় নোট চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু এটাই আরও বিস্তারিত আকারে করতে পুলিশকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করছেন, অন্য একটি প্রতিবেশী দেশের ‘সিকিওরিটি প্রেসে’ (দেশের টাকা ছাপা হয় যেখানে) ছাপানো জাল ভারতীয় টাকার নব্বই শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশ হয়ে এ দেশে ঢুকছে। তবে একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশ এটা স্বীকারই করত না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ভারতীয় জাল নোট চেনার পাঠ বাংলাদেশের পুলিশের নিতে চাওয়ার মধ্যে দু’টো বিষয় স্পষ্ট। এক, জাল নোটের বিষয়টি এখন বাংলাদেশ খোলাখুলি স্বীকার করেছে। দুই, এই ব্যাপারে ভারতকে সাহায্য করতেও তারা যথেষ্ট আন্তরিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy