Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৩

হাসপাতাল থেকে কোর্টে, এনআইএ-র হাতে হাকিম

বেশ ক’দিন চাপান-উতোরের পর অবশেষে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমকে হাতে পেল এনআইএ। বুধবার তাকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই হাকিমকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার নগর দায়রা আদালত (বিচার ভবন)-এ।

হাসপাতাল থেকে বার করে আনা হচ্ছে হাকিমকে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

হাসপাতাল থেকে বার করে আনা হচ্ছে হাকিমকে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

বেশ ক’দিন চাপান-উতোরের পর অবশেষে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমকে হাতে পেল এনআইএ। বুধবার তাকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই হাকিমকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার নগর দায়রা আদালত (বিচার ভবন)-এ। এনআইএ তাকে হেফাজতে চাইলে মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খান সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত হাকিমকে এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বীরভূম জেলার মহম্মদবাজারের দেউচা গ্রামের বাসিন্দা হাকিম এসএসকেএমে ভর্তি থাকার সময়েই তাকে জেরা করে জঙ্গিদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করে এনআইএ। তারা জানায়, জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে হাকিম তিন বছর ধরে জড়িত। তার স্ত্রী, ধৃত আলিমা বিবিও প্রশিক্ষিত জঙ্গি। কিন্তু তা-ও হাকিমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে সপ্তাহ দুয়েক আগে আদালতে অভিযোগ করে এনআইএ। হাসপাতাল থেকে হাকিমের ছাড়া পাওয়া নিয়েও মাঝে দোলাচল তৈরি হয়। ২ অক্টোবরের ওই বিস্ফোরণে পায়ে স্প্লিন্টার ঢুকেছিল হাকিমের। অস্ত্রোপচারের পরেও ক্ষত না শুকোনোয় এসএসকেএমে দু’বার তার স্কিন গ্রাফটিং করতে হয়। সোমবার এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, হাকিমকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত ৯ অক্টোবর এসএসকেএমে স্থানান্তরিত হাকিমের জন্য কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ছিলই। এ দিন যাতে আদালত চত্বরেও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছিল এনআইএ। সেই মতো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী কম্যান্ডোদের ঘেরাটোপে অ্যাম্বুল্যান্সে করে দুপুরে আদালতের সামনে নিয়ে আসা হয় হাকিমকে। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা হাকিমের গায়ে জড়ানো ছিল হাসপাতালের সবুজ চাদর। মুখ মোড়া ছিল কালো কাপড়ে।

শোয়ানো অবস্থাতেই হাকিমকে কম্যান্ডো-বেষ্টনীতে বিচার ভবনের লক-আপের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে দু’জন পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে লিফ্টে ওঠে হাকিম। দোতলায় মুখ্য বিচারকের আদালতের সামনে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে হাকিম ফের পুলিশদের কাঁধে ভর দিয়ে আদালত কক্ষে ঢোকে।

আদালত কক্ষে অভিযুক্তদের রাখার কাঠের ঘেরা জায়গায় তত ক্ষণে আনা হয়েছে অন্য অভিযুক্ত, বর্ধমানের পূর্বস্থলীর হাসেম মোল্লাকে। কালচে সবুজ গোলগলা টি-শার্ট ও ছাই রঙের ট্র্যাকস্যুট পরা হাকিমকেও ঘেরাটোপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বসতে দেওয়া হয় কাঠের টুলে। বিস্ফোরেণে নিহত শাকিল আহমেদের স্ত্রী রাজিয়া ও হাকিমের স্ত্রী আলিমাকে বসানো হয় ঘেরাটোপের বাইরে কাঠের বেঞ্চে।

পৌনে দু’টো নাগাদ এজলাসে ওঠেন মুখ্য বিচারক। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী শ্যামল ঘোষের কাছে তিনি জানতে চান, হাকিম পুরোপুরি সুস্থ কি না। বিস্ফোরণে তার শরীরের কোথায় আঘাত লেগেছিল? আইনজীবী জানান, বিস্ফোরণে হাকিমের পায়ে স্প্লিন্টার ঢুকেছিল। তবে সে এখন সুস্থ, হাঁটতেও পারছে। হাকিমকে এনআইএ হেফাজতে পাঠানোর পাশাপাশি ধৃত অন্য তিন জনকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

১০ অক্টোবর খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেওয়ার ২৬ দিন পর হাকিমকে হেফাজতে পেল এনআইএ। এ বার তাকে জেরা করে খাগড়াগড়ের জঙ্গি মডিউল সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছে এনআইএ। সূত্রের খবর, জামাতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা অসমের পলাতক হাতুড়ে চিকিৎসক শাহনুর আলমের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তারা সিল করেছে। বরপেটায় দু’টি ব্যাঙ্কের তিনটি শাখায় থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে শাহনুর প্রতি মাসে পশ্চিমবঙ্গের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় ৫ লক্ষ টাকা পাঠাত বলে এনআইএ-র দাবি। স্ত্রীর নামে বরপেটায় একটি নতুন মাদ্রাসা খোলার জন্যও শাহনুর ব্যাঙ্ক থেকে ১৫ লক্ষ টাকা তুলেছিল। জামাতের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বরপেটা থেকে যে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, আদালত এ দিন তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠায়। পুলিশের মতে, শাহনুর সম্ভবত বাংলাদেশে পালাতে পারেনি। উত্তর বা দক্ষিণ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে সে।

তদন্তে ফের

বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তে ফের নদিয়ার থানারপাড়ায় পৌঁছলেন এনআইএ-র তিন গোয়েন্দা। বুধবার দুপুরে প্রথমে তাঁরা থানারপাড়া থানায় যান। ঘণ্টাখানেক পরে যান করিমপুরের বারবাকপুরে। সেখানে বাড়িতে ডেকে গোয়েন্দারা কথা বলেন জহিরুল শেখের শ্বশুর হজরত মণ্ডল, স্ত্রী খানসা বিবি ও বিস্ফোরণে নিহত শাাকিল আহমেদের শ্বশুর আজিজুল গাজির সঙ্গে। সন্ধ্যায় তাঁদের থানারপাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ডাকা হয়েছে জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE