Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নির্বিকার সামসুদ্দিনের ‘অভিনয়ে’ তাজ্জব পুলিশ

চিহ্নমাত্র মেলেনি সেলাইঘরে

শুক্রবার ডোমজুড়ের কাটলিয়ার বাসিন্দা শেখ সামসুদ্দিনকে আটক করার পরে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা জেরাতেও কোনও কথা বের করতে পারেনি পুলিশ। রাতের দিকে সে ভেঙে পড়ে অপরাধ কবুল করে। পুলিশের দাবি, তার পরেও যুবকটি ছিল নির্বিকার। জেরায় সে জানিয়েছে, বুধবার নিজের সেলাইঘরে খুন করে পার্থর দেহ সে ছয় টুকরো করে। তার পরে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে। ঘরে রক্তের দাগও মোছে। 

সামসুদ্দিনের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ বাহিনী। ছবি: সুব্রত জানা

সামসুদ্দিনের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ বাহিনী। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৭
Share: Save:

বছর ছাব্বিশের যুবকটিকে দেখে তাজ্জব অনেক পুলিশ অফিসারই!

লম্বা প্রায় ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। রোগাটে গড়ন। দাড়ি-গোঁফ কামানো। এই যুবকই কিনা ডোমজুড়ের ব্যাঙ্ককর্মী পার্থ চক্রবর্তীকে খুন করে ঠান্ডা মাথায় দেহ ছয় টুকরো করেছে!

শুক্রবার ডোমজুড়ের কাটলিয়ার বাসিন্দা শেখ সামসুদ্দিনকে আটক করার পরে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা জেরাতেও কোনও কথা বের করতে পারেনি পুলিশ। রাতের দিকে সে ভেঙে পড়ে অপরাধ কবুল করে। পুলিশের দাবি, তার পরেও যুবকটি ছিল নির্বিকার। জেরায় সে জানিয়েছে, বুধবার নিজের সেলাইঘরে খুন করে পার্থর দেহ সে ছয় টুকরো করে। তার পরে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে। ঘরে রক্তের দাগও মোছে।

বৃহস্পতি ও শুক্র— দু’দিনে অন্তত চারবার পুলিশ সামসুদ্দিনের ঘরে গিয়েছে। কিন্তু খুনের কোনও প্রমাণ তারা পায়নি। মেঝেতে কোনও রক্তের দাগ ছিল না। তদন্তকারী দলের এক অফিসার বলেন, ‘‘সাধারণত দর্জিদের সেলাইঘর এত গোছানো থাকে না। সামসুদ্দিনের সেলাইঘর খুব গোছানো ছিল। আমাদের সন্দেহ হয়েছিল যে সে কিছু লুকোনোর জন্য সব পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখেছে কিনা! কিন্তু ওর সঙ্গে কথা বলে কোনও দুর্বলতা পাইনি। ওর গলা কাঁপেনি। ফলে, সেই সময় সরাসরি তাকে আমরা কিছু বলতেও পারিনি।’’

কাটলিয়ায় সামসুদ্দিনের টালির চালের একতলা বাড়িটি অনেকটা সাবেক প্রাথমিক স্কুলের মতো। পর পর পাঁচটি ঘর। একটি ঘরে সামসুদ্দিন সেলাইয়ের কাজ করত। বাকি চারটি ঘরে থাকেন সামসুদ্দিনের বাবা-মা, বৌদি এবং তাঁদের ছেলেমেয়েরা। সামসুদ্দিনরা তিন ভাই। তার দুই দাদা বাইরে থাকেন।

বুধবার দুপুরে নিজের সেলাইঘরেই পার্থকে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিল সামসুদ্দিন। পার্থ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডোমজুড়ের সলপ শাখার ‘ডোর ব্যাঙ্কিং অফিসার’ ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া এবং আদায় করা। সামসুদ্দিন ওই ব্যাঙ্ক থেকে স্ত্রীর নামে ঋণ নিয়েও ফেরত দেননি। ওই দিন সামসুদ্দিনের বাড়িতে একটি গোষ্ঠীর ২৫ জন সদস্য হাজিরও ছিলেন পার্থর সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু তা হয়নি। তার আগেই গোপনে সামসুদ্দিন বচসায় জড়িয়ে পার্থকে খুন করে বলে অভিযোগ। তার পরে ওই মহিলাদের জানিয়ে দেয়, বৈঠক হবে না। পার্থ আসবেন না না বলে জানিয়েছেন। মহিলারা ২টোর সময়ে ব্যাঙ্কে ফোন করে জানান, পার্থ আসেননি। ব্যাঙ্কের লোকজন সেখানে এলে সামসুদ্দিন পার্থর না-আসার কথাই বলে।

পার্থর এই ‘অভিনয়’ অবাক করেছে পুলিশ অফিসারদের। এ জন্য প্রথম দিকে তাঁরা কোনও সূত্রই পাননি। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘অপরাধীদের মন বড় বিচিত্র। অপরাধ করার সময়ে যে নৃশংসতা তাদের মধ্যে দেখা যায়, সাধারণ মন দিয়ে তার বিচার করা যাবে না।’’

ধৃতকে শনিবার হাওড়া আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাকে ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময়েও সে ছিল নির্বিকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Banker Evidence Samsuddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE