Advertisement
E-Paper

হাসপাতালের ফ্রিজে কর্মীদের টিফিন, করিডরে গড়াগড়ি যায় স্যালাইন

হাসপাতালের এক তলায় সুপারের ঘর আর মেন স্টোরের সামনে ধুলোর মোটা আস্তরণ পড়া করিডর। ফার্মেসির বদলে সেখানেই শ’য়ে-শ’য়ে স্যালাইন ভরা কার্টন পড়ে রয়েছে! বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চের দুপুর।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ১৬:৫৭

হাসপাতালের এক তলায় সুপারের ঘর আর মেন স্টোরের সামনে ধুলোর মোটা আস্তরণ পড়া করিডর। ফার্মেসির বদলে সেখানেই শ’য়ে-শ’য়ে স্যালাইন ভরা কার্টন পড়ে রয়েছে! বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চের দুপুর। করিডরের চার পাশ দিয়ে অনবরত লোকজন হাঁটছে। কারও কারও জুতোর ধাক্কায় সেই কার্টনের স্তূপ হুড়মুড়িয়ে পড়ছে। খুলে যাচ্ছে। পিচবোর্ড ফেটে ভিতর থেকে স্যালাইনের বোতল বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে! গত তিন মাস এই ভাবেই চলছে। প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতার মধ্যে ধুলোয় ফেলে রাখা ওই স্যালাইনই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।

করিডরে পড়ে থাকা স্যালাইনের অনেক ভাঙা কার্টন থেকে আবার যখন-তখন এক-এক জন এসে দিব্যি একটি-দু’টি বোতল বার করে হাতে নিয়ে হাঁটা লাগাচ্ছেন। তাঁরা আদৌ হাসপাতালের কর্মী নাকি বাইরের কেউ বোঝার উপায় নেই। ওই স্যালাইন তাঁরা হাসপাতালের বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছেন কি না তা দেখারও লোক নেই। নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছেন বটে, কিন্তু উদাস মুখে।

আরও পড়ুন: ইস্তাহার প্রকাশ মমতার, ফের তীব্র আক্রমণ বাম-কংগ্রেসকে

হাসপাতালের মেইন স্টোর-এ সর্বত্র পরতে পরতে শুধুই ধুলো। শেষ কবে তা সাফ হয়েছে বোঝার উপায় নেই। তার মধ্যেই খোলা তাক থেকে শুরু করে মেঝে পর্যন্ত স্তূপ করা জীবনদায়ী সব ওষুধ আর ইঞ্জেকশন। কোনও তাকে কোনও কাচের আবরণ নেই। ওষুধের পাশেই কোথাও ঝাঁটা, কোথাও বিস্কুটের প্যাকেট রাখা। স্টোরে শীততাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। ভ্যাপসা গরম। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের যাবতীয় নিয়মকানুন বেবাক হাওয়া।

জেলার প্রধান হাসপাতালের সমস্ত রোগীর (মা ও শিশু-সহ) ওষুধ যে স্টোরে থাকে সেখানে দু’টি ঝুরঝুরে ফ্রিজার। ছোটটিতে কিছু ওষুধ রাখা। আর বড়টি হঠাৎ-হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বলে তাতে হাসপাতালের কর্মীদের টিফিন, জলের বোতল, বাজার করা সবজি, মিষ্টি ইত্যাদি সাজিয়ে রাখা!

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাওড়া জেলা হাসপাতাল‌ের ওষুধ সংরক্ষণের এই দশা নিয়ে কোনও অজুহাত খুঁজে পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী থেকে শুরু করে হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ভবানী দাস, সকলেই একবাক্যে বলেছেন, ‘‘সব জানি, অবস্থা খুব খারাপ, এই ভাবে ওষুধ-স্যালাইন-ইঞ্জেকশন রাখা একেবারেই অনুচিত। আসলে ওখানে জায়গার খুব সমস্যা।’’

তা বলে সেই সমস্যার কোনও সমাধানের কথা ভাবা হবে না? মাসের পর মাস রোগীদের এমন ওষুধ বা ইঞ্জেকশন বা স্যালাইন দেওয়া হবে যা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র নিয়মকানুন মানা হয়নি? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে ওই ওষুধ বা স্যালাইনের মান ঠিক রয়েছে? কেন বিকল্প জায়গা করা হচ্ছে না? যেখানে নিখরচায় ওষুধ দিতে বা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়তে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সেখানে একটা জেলা হাসপাতালে ওষুধ সংরক্ষণের সঠিক পরিকাঠামো তৈরি করা যাচ্ছে না? সরকারি হাসপাতালে ছাতা পরা বা রং বদলে যাওয়া স্যালাইন নিয়ে রোগীর অসুস্থ হয়ে যাওয়া বা ইঞ্জেকশনে ছাতা পড়ে যাওয়া নিয়ে নিকট অতীতেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার পরেও কি দফতরের কর্তাদের এই ঔদাসীন্য মানা যায়?

স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বে থাকা এক কর্তার কথায়, ‘‘আগেও হাওড়া হাসপাতালকে হুঁশিয়ার করেছি। বুঝতে পারছি না ওরা কী করছে। আর কিছু দিন ওদের শোধরানোর সময় দেব, তার পরেও না শোধরালে ব্যবস্থা নেব।’’ কিন্তু তত দিনে যদি কোনও রোগীর ক্ষতি হয়ে যায়? হাওড়া হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় কয়েক শব্দে উত্তর দেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না।’’ প্রবীণ ফার্মাসিস্টদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, ‘‘স্যালাইন এবং ওষুধ সাধারণত ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, ধুলোরহিত জায়গায়, রোদ্দুর থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। হাওড়ার মতো জেলার প্রধান হাসপাতালে তাই এই ভাবে স্যালাইন বা ওষুধ রাখার কথা বিশ্বাস করা যায় না।’’

হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট উদয় পাল দাবি করেছেন, সুপারকে জানিয়েও লাভ হয়নি। ফার্মেসি, ডিসপেন্সরি, সাব স্টোর— সব একটা ঘরে। তার উপর এখন হাসপাতালে বেশি ওষুধ ঢুকছে। ‘‘ফলে করিডরেই সব ফেলে রাখি। ওখান থেকেই তুলে এনে রোগীদের দি-ই। কী করা যাবে!’’

রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না? ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালের ফার্মেসি বা স্টোরের জন্য আমাদের কোনও লাইসেন্স লাগে না। এটা স্বাস্থ্য দফতর নিজেরাই দেখে। কোনও অভিযোগ এলে তখন আমরা দেখি। হাওয়া হাসপাতাল নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’’

state news saline bottles destroy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy