Advertisement
E-Paper

ধ্বংসস্তূপ থেকে চাঁচলের ঘরে ফিরলেন ফরিদরা

ভূমিকম্পের বিভীষিকা আর মৃত্যুর মিছিল পার করে প্রাণ হাতে করে ফিরে এলেন ওঁরা। ধ্বংসস্তূপে সব খুইয়ে কেবল প্রাণটুকু সম্বল করে কাঠমাণ্ডু থেকে মালদহের চাঁচলে ফিরলেন পাঁচ দর্জি ও তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ১১ জন।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০২:২৭
ফরিদ আলি ও আলম শেখের পরিবার।

ফরিদ আলি ও আলম শেখের পরিবার।

ভূমিকম্পের বিভীষিকা আর মৃত্যুর মিছিল পার করে প্রাণ হাতে করে ফিরে এলেন ওঁরা।

ধ্বংসস্তূপে সব খুইয়ে কেবল প্রাণটুকু সম্বল করে কাঠমাণ্ডু থেকে মালদহের চাঁচলে ফিরলেন পাঁচ দর্জি ও তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ১১ জন। দেশে ফিরে ফের নতুন করে বাঁচার আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কয়েক দিন ধরে চোখের সামনে দেখা দুঃসহ যন্ত্রণা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওঁদের। চোখে-মুখে তাঁদের আতঙ্ক। কথা বলতে গিয়ে এখনও কেঁপে উঠছেন, কখনও ধরে আসছে গলা। তবু ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায়’ উত্কন্ঠা দূর হয়ে খুশি তাঁদের পরিবারের বাকিরা। পাশাপাশি স্বস্তিতে প্রশাসনও।

চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘‘নেপালে আটকে রয়েছেন এমন কারও কথা এখনও আমাদের কেউ জানাননি। তেমন হলে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওঁরা যে ফিরে এসেছেন, জেনে খুব ভাল লাগছে।’’

রবিবার রাতে বাড়িতে ফিরে আসা ওই দর্জিদের মধ্যে রয়েছেন চাঁচলের মহানন্দপুরের দুই ভাই ফরিদ আলি ও আলম শেখ। তাঁদের স্ত্রীরা ও চার মেয়েও রয়েছেন। ওই আট জন ছাড়াও ফিরেছেন চাঁচলের হরিনগরের ফিরদৌস জালাল, আশ্বিনপুরের আনোয়ারুল হক ও মল্লিকপাড়ার কালাম শেখ। দুই ভাই ফরিদ ও আলম গত দু’দশক ধরে নেপালের কাঠমাণ্ডুর বাসিন্দা। সানিপা ললিতপুর এলাকায় দর্জির দোকান ছিল তাঁদের। ভাড়া বাড়িতে থাকতেন ওঁরা। তাঁদের দোকানেই কাজ করতেন ফিরদৌস, আনোয়ারুল ও কালাম।

ঘরে ফেরা ওই দর্জিরা জানান, ফরিদের দোকান ছিল একটি তিনতলা বাড়ির নীচের তলায়। পাশেই স্ত্রী মুক্তা বিবি ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন তাঁরা। ফিরদৌস, আনোয়ারুল ও কালামও সেখানে থাকতেন। এক মনে সে দিন পোশাক তৈরির কাজ চলছিল। সেলাই মেশিনের একটানা ঘর্ঘর শব্দের মধ্যে হঠাৎ করেই সব কিছুই দোলনার মতো দুলতে শুরু করে। সঙ্গে আকাশ ভাঙা শব্দ। নিমেষে তাঁদের চোখের সামনে ঘরবাড়ি-সহ সব কিছুই যেন দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগল। একতলায় থাকায় কোনও ক্রমে তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোতে পেরেছিলেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়িটি ভেঙে পড়ে।

মায়ের সঙ্গে ফিরদৌস।

ও দিকে কিছুটা দূরে দশ ও চার বছরের দুই মেয়ে জারা ও জেবাকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন আলমের স্ত্রী বিউটি বিবি। তাঁদের বাড়ির উপরে ভেঙে পড়ে পাশের একটি বাড়ি। দেওয়াল ধসে পড়তে দেখে নিমেষে বিউটি বিবি দুই মেয়েকে নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়েন। এ দিকে ফরিদ, আলম, ফিরদৌসরা তখন পথে। তাঁরাই ঝুঁকি নিয়ে বিউটি বিবি ও দুই মেয়েকে বের করে সেই যে পথে নামেন আর পিছনে ফিরে তাকাননি। ধ্বংসস্তুপে পড়ে থাকে আজাদ টেলার। ওই রাতটি কাটে একটি রাম মন্দিরে। পর দিন তম্বু এলাকায় তাঁবুতে নীচে ঠাঁই হয়। তার পর চোখের সামনে মুমূর্ষুদের আর্তনাদ আর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে সাত দিন। যোগাযোগ একটু স্বাভাবিক হতে সেখান থেকে ২২ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে যোগবাণী এসে ট্রেনে চেপে বাড়ি।

ফরিদ বলেন, ‘‘ওই ধ্বংসস্তুপ থেকে যে বেঁচে ফিরতে পারব ভাবিনি। কেননা পরেও একাধিক বার ভূমিকম্প হয়েছে। পরিচিত অনেককেই হারিয়ে যেতে দেখেছি। কয়েক মুহূর্তে একটা সুন্দর শহরের যে এমন পরিণতি হতে পারে তা চোখে না দেখলে ভাবা যায় না।’’ ফিরদৌস কাঠমাণ্ডুতে রয়েছেন আট বছর। তাঁর কথায়, ‘‘নিজে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু অনেকেই সাহায্য চেয়ে আকুতি জানিয়েছিল। তখন প্রাণভয়ে তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। ওই যন্ত্রণাটাই এখন কুরে খুরে খাচ্ছে।’’

তবে ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি ফিরদৌসের মা জালমিন বিবি। তিনি বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ মুখে খাবার ওঠেনি। ছেলেকে আর নেপালে যেতে দেব না।’’

—নিজস্ব চিত্র।

earthquake Malda Nepal eartquake victims Farida Alam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy