ক্যামেরায় বাঘের ছবি তোলার হ্যাটট্রিক গড়ে ফেললো নেওড়া ভ্যালি।
গত বুধবার, ১৫ তারিখ ভোরে নেওড়া ভ্যালির গভীর জঙ্গলে আবার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ক্যামেরা বন্দি হয়। বনদফতরের বিশেষ ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে এই ছবিটি। ছবিটিতে কুয়াশা ঢাকা জঙ্গলের মধ্যেই পূর্ণাবয়ব বাঘের ছবি উঠেছে।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি প্রথম তোলেন পেডংয়ের জিপচালক আনমোল ছেত্রী। সেটা ছিল জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ। কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখা দিয়ে সেই বাঘ দ্রুত নেওড়ার উপরের অংশে উঠে যায়। সেই সময়টুকুর মধ্যে আনমোল তাঁর মোবাইলে দুটোর বেশি ছবি তুলতে পারেননি। তার একটিতে স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছিল পাথরের আড়ালে বাঘটিকে।
সেই শুরু। এর পরে নেওড়ায় চার জায়গায় চারটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসায় বন দফতর। সেই ক্যামেরায় আবার বাঘের ছবি ওঠে। সেটা ২৫ জানুয়ারি। রাতের সেই ছবিই দ্বিতীয়।
এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জলদাপাড়া থেকে আরও চারটি ট্র্যাপ ক্যামেরা নেওড়ার গভীর জঙ্গলে বসানো হয়। এই বুধবার বাঘের যে ক্যামেরায় ছবিটি উঠেছে, সেটি দ্বিতীয় দফায় লাগানো ট্র্যাপ ক্যামেরাগুলিরই একটি বলেই বনদফতরের তরফে জানানো হয়েছে। আনমোলের মোবাইল ক্যামেরায় ছবি ওঠার পরে এখনও এক মাস হয়নি। তার মধ্যেই বাঘের ছবির হ্যাটট্রিক হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বাস-আনন্দে ভাসছে রাজ্য বনদফতর।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস বলেছেন, ‘‘শুধু নেওড়াই নয়, সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কেও বাঘ থাকতে পারে। তবে সেখানে বাঘের খোঁজ পেতে এমনই স্পাই ক্যামেরা বসাতে হবে।’’
বনপ্রাণ বিভাগের উত্তর মণ্ডলের বনপাল সুমিতা ঘটক জানান, ‘‘তৃতীয় ছবি এত দ্রুত মেলায় স্বাভাবিক ভাবেই আমরা খুব, খুশি। বাঘের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কোন এলাকায় ছবি উঠেছে, সেটা আমরা না জানালেও প্রতিটি ছবিই পৃথক পৃথক এলাকায় তোলা হয়েছে।’’
বারবার বাঘের ছবি ওঠায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একসময় কাগজে বাঘ থাকার দাবি জানাতাম। আর তা দেখে অনেকে ঠাট্টা করে সেটাকে কাগুজে বাঘ বলতেন। এখন বাঘের ছবি তোলার হ্যাটট্রিক হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই আর প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ মন্ত্রীর ধারণা, এই বাঘই পর্যটকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে নেওড়ার বিভিন্ন অংশে।
পরপর বাঘের ছবি সামনে আসায় খুশি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু যেমন জানালেন, রাজ্যের পশুপ্রেমীদের কাছে এর থেকে বড় সুখবর আর কিছুই হতে পার না।
তবে বাঘের সংখ্যা কত, ক’টি পুরুষ বা মেয়ে বাঘ রয়েছে, সেগুলি এই ছবি থেকে স্পষ্ট নয়। এমনকী, এই সব ছবিই একই বাঘের কি না, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। এখুনি বনদফতর এই নিয়ে কিছু বলতে চাইছে না। সব ছবি একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশনের সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বনমন্ত্রীও।