উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে মৌসম। — নিজস্ব চিত্র
সংসারে বাড়ছিল অনটন। কিন্তু জেলায় মিলছিল না কোনও কাজ। তাই দিন বদলের আশায় এজেন্টের হাত ধরে ওঁরা পাঁচজন পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর মালয়েশিয়ায়। পাঁচজনেরই বাড়ি মালদহের রতুয়া ১ ও ২ ব্লকে। কিন্তু দু’মাসেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁদের। বুঝতে পারেন কোনও কোম্পানিতে চাকরি নয়, এক ঠিকাদারের অধীনে বৈদ্যুতিক টাওয়ার তৈরির জন্য শ্রমিকের কাজ করতে পাঠানো হয়েছে তাঁদের।
অভিযোগ, দিনে ৮ ঘন্টার বদলে ১৩-১৪ ঘণ্টা কাজ করানো হচ্ছিল তাঁদের। মাসের শেষে বেতন দেওয়া তো দূরের কথা, বেতনের কথা তুললেই জুটেছে মার। দেওয়া হত না পর্যাপ্ত খাবার। পরে তারা জানতে পারেন মালেশিয়ার এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রিই করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
গত জুলাই মাসে তারিকুল ইসলাম নামে এক যুবক কোনওরকমে বাড়িতে ফোন করে পুরো ঘটনা জানায়। এরপরেই তাঁদের পরিবার এলাকার সাংসদ মৌসম নূরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই পাঁচজনকে উদ্ধারের আর্জি জানায়। মৌসমের দাবি, বিষয়টি জানার পরই তিনি মালেশিয়ার কুয়েলালামপুরে থাকা ভারতীয় হাই কমিশনার টি এস ত্রিমূর্তিকে মেল মারফত বিস্তারিত জানান। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও চিঠি দেন। মালেশিয়ার ভারতীয় হাই কমিশন অগস্টের মাঝামাঝি ওই পাঁচ শ্রমিককে উদ্ধার করে। গত ২৯ অগস্ট পাঁচজনই বাড়ি ফিরেছেন।
গত এপ্রিল মাস নাগাদ মালেশিয়ায় কাজে গিয়েছিলেন গোলাম মোর্তাজা, সরিফুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, ওবাইদুর রহমান ও আরোক তারিকুল ইসলাম। সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এ দিন তারা দাবি করেন, এলাকায় কাজ না থাকায় স্থানীয় চারজন এজেন্টের মাধ্যমেই তারা মালেশিয়ায় কাজে যান। একটি কোম্পানিতে কাজের বিনিময়ে মাসে ভারতীয় টাকায় ২৪ হাজার টাকা বেতন ও থাকা-খাওয়ার খরচ জেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে জানতে পারেন তাঁদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তারিকূল বলেন, ‘‘আমিই কোনওরকমে বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানাতে পেরেছিলাম। অগস্টের মাঝামাঝি মালেশিয়ার ভারতীয় হাই কমিশন আমাদের উদ্ধার করে। সংসদের উদ্যোগেই এটা সম্ভব হয়েছে। যে এজেন্ট ও ঠিকাদার সংস্থা আমাদের প্রতারিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি।’’ তবে সেখানেও বাধা অর্থ।
শনিবার সকালে মৌসম নূরকে কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁর কোতোয়ালির বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ওই পাঁচ জন। মৌসম বলেন,‘‘জেলা থেকে প্রচুর বেকার যুবক প্রতিদিনই ভিন রাজ্য, এমন কী ভিন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু বাইরের অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের অভাবের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু শ্রমিক সরবরাহকারী বছরের পর ধরে বেকারদের ভালো কাজ দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে চলেছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy