হাসপাতালে রতন মজুমদার।— নিজস্ব চিত্র।
চা বাগানের সুপারভাইজারকে গাছ কাটার কাস্তে দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে বাগানেরই এক কর্মীর বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির রায়পুর চা বাগানে। এলোপাথারি কাস্তের কোপে গুরুতর জখম অবস্থায় সুপারভাইজার রতন মজুমদারকে শিলিগুড়িতে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মাথা, ঘাড়, হাত ও পেটে আঘাত রয়েছে বলে নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মীর নাম জিতবাহন নায়েক। সে এ দিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাজে গিয়েছিল বলে জখমের পরিবারের অভিযোগ। ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানান বাগানের ম্যানেজার চরণপ্রীত কুন্দন। ঘটনার অভিযোগ পেয়ে এলাকায় যান জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায়-সহ পুলিশ বাহিনী। আইসি জানান, ওই শ্রমিককে খোঁজা হচ্ছে।
অভিযুক্ত শ্রমিক তৃণমূলের সমর্থক বলে বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা এবং বারপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রধান হেমব্রমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনাটি সমর্থন করছেন না বলে জানান। তাঁর দাবি, “দল এই ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয় না। জিতবাহন এমন কাজ করে থাকলে তাঁর কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের সময় নিয়ে বচসার জেরেই রতনবাবুকে আক্রমণ করে জিতবাহন। এ দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রমিকদের কাজ করার কথা ছিল। রতমবাবু হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কাজ করেন। শ্রমিকেরা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা তা দেখতে দুপুর ১২টা নাগাদ বাগানের ম্যানেজার রতনবাবুকে বাগানে পাঠান। সে সময় কয়েক জন বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, রতনবাবু তাঁদের ধমক দিয়ে কাজ করতে বললে তাঁর সঙ্গে বিবাদ বাধে জিতবাহনের। সে হঠাৎ হাতের কাস্তে নিয়ে আক্রমণ করে তাঁকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বার কতক কাস্তে চালানোর পরে সে পলিয়ে যায়। বাগান অফিসে খবর গেলে তাঁকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাগানের ম্যানেজার বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি এর আগেও আমার উপরে চড়াও হয়েছিল। তখন তাঁকে পুলিশে না দেওয়াটা ভুল হয়েছিল। ফের এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’’ অভিযুক্তকে কাজ থেকে বরখাস্ত করার জন্য পপদক্ষেপ করা হবে বলে বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে।
জখমের স্ত্রী শুক্লাদেবী ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি জানান, এ দিন তাঁর স্বামীর কাজে যাওয়ার কোনও কথা ছিল না। ম্যানেজার মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁকে কাজের তদারকি করতে পাঠান। তার কিছু ক্ষণ পরেই এই ঘটনা লোকমুখে শুনতে পান তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটবে কখনও ভাবিনি। উনি ৩৫ বছর এই বাগানে কাজ করছেন। দু’বছর পরে অবসর নেওয়ার কথা। তার মধ্যে কী হল বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানালেন, প্রচুর রক্তের প্রয়োজন রতনবাবুর। তাঁদের মেয়ে দেবরূপা রক্ত দিয়ে এসেছেন। স্থানীয় সমাজকর্মী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁদের আরও রক্ত পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেন বলেও জানান শুক্লাদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy