Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সাত দিন পরেও কমেনি ভিড়

সাত দিন কেটে গেল। কিন্তু নোটের গেরোয় মানুষের দুর্ভোগ কমল না। তার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। কেউ বাজারে যেতে পারেননি। কেউ বাজারের দোকান খুলতে পারেননি। যাঁরা দূর থেকে শহরাঞ্চলে এসে টাকা তুলতে চেষ্টা করেছেন, তাঁরাও ব্যর্থ হয়েছেন, এটিএম বেশিক্ষণ খোলা না থাকায়।

সাত দিনেও কমছে না লাইন। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

সাত দিনেও কমছে না লাইন। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

সাত দিন কেটে গেল। কিন্তু নোটের গেরোয় মানুষের দুর্ভোগ কমল না। তার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। কেউ বাজারে যেতে পারেননি। কেউ বাজারের দোকান খুলতে পারেননি। যাঁরা দূর থেকে শহরাঞ্চলে এসে টাকা তুলতে চেষ্টা করেছেন, তাঁরাও ব্যর্থ হয়েছেন, এটিএম বেশিক্ষণ খোলা না থাকায়। তবে এ দিন অনেকে যেমন ফিরে গিয়েছেন তেমনই অনেকে আবার টাকা আসবে এই আশায় এটিএমের সামনে হত্যে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেওছিলেন। কেউ ব্যবসা ফেলে দু’ঘণ্টা ধরে ঘুরেও টাকা তুলতে পারেননি। আবার, ব্যাঙ্ক ও এটিএমে বিপুল ভিড় হলেও পুলিশি নিরাপত্তা উঠে যাওয়ায় ব্যাঙ্কগুলিকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

মালদহ জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে ২০৫টি এটিএম থাকলেও এ দিন বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। যে কয়েকটি এটিএম খুলেছিল, তাতে টাকা তুলতে ভিড় ছিল মারাত্মক। মূহুর্তেই টাকা শেষ হয়ে যায়. ফলে লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টাকা না পেয়ে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে গিয়েছেন। এক সপ্তাহ পার হতে চললেও মালদহে এটিএম নিয়ে সমস্যা এখনও না মেটায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এদিন দুপুরের দিকে ইংরেজবাজার শহরের কে জে স্যান্যাল রোডে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম খোলা ছিল। সেই লাইনেই দাঁড়িয়েছিলেন পুরাতন মালদহের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা জেমস কুজুর। তিনি একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে কোনও এটিএম নেই। ফলে মালদহে এসেই টাকা তুলতে হয়। এদিন অনেক আশা করে মালদহে এসেছিলাম এটিএম থেকে টাকা তুলব বলে। কিন্তু এমনই কপাল যে তীরে এসে তরী ডুবে গেল। আমি এটিএমের কাছে পৌঁছনোর আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। একেই আমার কাছে খুচরো টাকা নেই, তার উপর মালদহে যাতায়াতের খরচই গচ্চা গেল। এ ভাবে টাকা তোলার জন্য কতদিন যে টাকা খরচ করে মালদহে আসতে হবে জানি না।’’ এ দিনও মালদহ জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে খুব ভিড় ছিল। মালদহের ব্যাঙ্ক সমূহের লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ শর্মা বলেন, ব্যাঙ্ক পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে. এটিএম যাতে আরও বেশি পরিমাণে খোলার ব্যবস্থা করা যায় তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রায়গঞ্জেও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করার জন্য বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে। এদিন বেশিরভাগ ব্যাঙ্কে গড়ে এক থেকে দুই হাজার টাকার বেশি নোট বদল করে দেওয়া হয়নি। এদিন বেলা ১টা নাগাদ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রায়গঞ্জ শাখায় ১০০ টাকার নোট ফুরিয়ে যায়। প্রায় দুঘণ্টা পর দুপুর তিনটে নাগাদ ১০০ টাকার নোট আসে। এরপর ফের নোট বদল করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। শহরের কলেজপাড়া, মোহনবাটী, নেতাজি সুভাষ রোড, মহাত্নাগাঁধী রোড, সুদর্শনপুর ও বিধাননগর মোড় এলাকার প্রতিটি ব্যাঙ্কে এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট বদলের জন্য বাসিন্দাদের ভিড় ছিল। আবার শহরের মোহনবাটী, বিদ্রোহীমোড়, কলেজপাড়া, সুদর্শনপুর, দেবীনগর, বিধাননগর মোড়, কলেজপাড়া, মহাত্মা গাঁধী রোড ও নেতাজি সুভাষ রোড এলাকার একাধিক এটিএমে টাকা না থাকায় সেগুলি বন্ধ ছিল। মোহনবাটী এলাকার কয়েকটি এটিএমে টাকা ঢোকানোর আগেই বহু বাসিন্দা ভিড় জমান।

রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ধোপা রামবাবু রজক বলেন, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাঙ্ক ও এটিএমে যা ভিড়, তাতে ব্যবসা ফেলে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সাহস পাইনি। বাড়িতে ও দোকানে জমানো ১০০ ও ৫০ টাকার নোটের তিন হাজার টাকা ছিল।

সংসার ও দোকানের নানা খরচ করতে করতে এদিন সকালে সব খুচরো টাকা ফুরিয়ে যায়। খদ্দেরদেরও খুচরো টাকা দিতে না পারায় বাকিতে কাজ করেছি। প্রায় দুঘণ্টা ধরে এটিএম কার্ড নিয়ে শহরের সাতটি এটিএম কাউন্টারে ঘুরি। কোনও কাউন্টারে টাকা নেই আবার কোনও কাউন্টারে ভিড়ের চাপে টাকা তুলতে পারিনি! শেষে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে দুহাজার টাকা ধার নিতে বাধ্য হয়েছি।’’

এ দিন চাঁচলের সবকটি এটিএম ও ব্যাঙ্কের সামনে ছিল প্রচুর ভিড়। এটিএম থেকে দু হাজার করে তুলতে পেরেছেন মানুষ। তবে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক টাকা নেই বলে এক হাজার টাকা করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। ব্যাঙ্কগুলির অবশ্য দাবি, চাহিদার তুলনায় অনেক কম টাকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে সবাই যাতে টাকা পান সেজন্য কম টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে ব্যাঙ্কগুলি সূত্রে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এদিনই চাঁচলে নতুন দু’হাজার টাকার নোট এসে পৌঁছেছে। চাঁচল স্টেট ব্যাঙ্কের লাগোয়া এটিএম থেকে বিকেলে তা দেওয়াও শুরু হয়েছে। তবে এখন শুধু পুলিশকর্মীরা মাঝেমধ্যে এসে টহল দিয়ে যাচ্ছেন। চাঁচল স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনুপকুমার রায় বলেন, ‘‘পুলিশ কেন নিরাপত্তা তুলে নিল জানি না। লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে সমস্যা হলে কর্মীদেরকেই তা সামলাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে।’’

এরই মধ্যে এদিন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব রায়গঞ্জ শাখা কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহে একাধিকবার নোট বদল করার অভিযোগে রায়গঞ্জ মহকুমার ১৫ জন বাসিন্দাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ব্যাঙ্কে প্রকাশ্যে তাঁদের নামের তালিকাও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তাঁরা নোট বদলের সীমা লঙ্ঘন করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই ঘটনায় তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন। ওই ব্যাঙ্কের শাখা সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী একই ব্যক্তি একই সরকারি পরিচয়পত্রের মাধ্যমে একবারের বেশি নোট বদল করতে পারবেন না। সাধারণ মানুষের হয়রানি রুখতে ও বাসিন্দাদের সতর্ক করতে যাঁরা গত এক সপ্তাহে একাধিকবার নোট বদল করেছেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়ে নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

banning notes distress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE