Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Sikkim Flood

শরৎমেঘের আড়ালে বিপর্যয়ের অশনি

আবহাওয়াবিদদের দাবি, বার বার অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এমন হড়পা বান বা বৃষ্টি-বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে নিম্নচাপের টান।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৩
Share: Save:

কেউ বলছেন— মেঘভাঙা বৃষ্টি। কেউ দাবি করছেন— প্রাকৃতিক জলাশয় ভেঙে বিপর্যয়। কেউ বলছেন— হড়পা বান। ঘটনা যাই হোক না কেন, সিকিমের এই বিপর্যয়ের কারণ যে হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি এবং জলাশয় ভেঙে পড়া, সে তথ্য সরকারি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক এক বছর আগে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের দিন মাল নদীতে হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিলেন সাত জন। বছর ঘুরতেই ফের হড়পা বান এবং বৃষ্টি-বিপর্যয়। বুধবারের সিকিমের বিপর্যয় মাল নদীর বানের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের মনে ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতিও ফিরিয়ে এনেছে। সে বারও অক্টোবর মাসের ৪ তারিখই সিকিমে প্রাকৃতিক জলাধার ভেঙে তিস্তায় তোড়ে জল নেমে জলপাইগুড়ি শহর ভাসিয়ে দিয়েছিল।

আবহাওয়াবিদদের দাবি, বার বার অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এমন হড়পা বান বা বৃষ্টি-বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে নিম্নচাপের টান। বিদায়ের মুহূর্তে বর্ষার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে তাপমাত্রার ওঠা-নামার প্রভাবও।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা আবহাওয়াবিদ সুবীর সরকার বলেন, ‘‘মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হলে কিছু করার থাকে না। ১৯৬৮ সালে যেমন হয়েছিল। মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং জলাশয় ভেঙে জল নেমে এসেছিল। ওই সময় যে বৃষ্টি পাহাড়ি এলাকায় হয়েছিল, তা কখনও হয়নি। তখন ব্যারাজ ছিল না। নদী খোলাই ছিল। তবু জল বহন করতে পারেনি।’’

গত বছর মাল নদীতে হড়পা বানের কারণ হিসাবে পাহাড়ি এলাকায় কম সময়ে বেশি বৃষ্টিকেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। জলবাহী মেঘ প্রাকৃতিক ভাবে জমে ছিল। তা ভেঙে পড়ায় মাল নদীতে হড়পা বান হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। আবহাওয়াবিদেরা দাবি করছেন, সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বর্ষার সময় ধরা হয়। অক্টোবরের প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহেও কিছুটা বৃষ্টি হয়। এই সময়কে বর্ষার বিদায়লগ্নই ভাবা হয়। সাধারণত, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের উপর নিম্নচাপ থাকে এবং নিম্নচাপগুলি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। একটি নিম্নচাপ যেমন দিনকয়েক আগে থেকেই ঝাড়খণ্ডে ছিল। তার টানে মেঘ আসে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়। তার পরে মেঘমুক্ত আকাশে রোদ ছড়িয়ে পড়ে। তাপমাত্রা রাতারাতি বেড়ে যায়। সে সময়ে বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকলে, যা কিনা নিম্নচাপের টানে আসে, বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়। সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি অথবা মেঘভাঙা বৃষ্টি হড়পা বান বা বিপর্যয় ডেকে আনে অক্টোবরের গোড়ার দিকে।

তবে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘বুধবারের বিপর্যয় মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে হয়নি। অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং জলাশয় ভেঙে হড়পা বান হয়েছিল। হড়পা বান অথবা মেঘভাঙা বৃষ্টি এই সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা।’’

আবহাওয়ার আচমকা পরিবর্তন, তাপমাত্রার হঠাৎ কম-বেশি হওয়া সেপ্টেম্বরের শেষ এবং অক্টোবরের শুরুতে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের দিকে লক্ষ করা যায়। এই বৃষ্টি তো ওই চড়া রোদ। উষ্ণতার এই তারতম্যে প্রাকৃতিক জলাশয়ের দেওয়ালে থাকা বরফ গলে যায়, নীচের বরফ গলতে, সেই কারণেও জলাশয় ভেঙে পড়ে। আবহাওয়াবিদদের দাবি, শরতের পেঁজা মেঘের নীল আকাশ থেকে যে কোনও সময়ই এই ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teesta River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE