Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

আঠাশ বছর ধৈর্য্য ধরে জয়ী ধৈর্যধর

আঠাশ বছর আগে তাঁর বসত জমি নিয়ে নেয় সরকার। এত দিন ধরে কোর্টে কোর্টে ঘুরেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ী ধৈর্যধর ঘোষ। ফল পেলেন এত দিনে। আদালতের নির্দেশে ভাঙা শুরু হল সেই জমিতে হওয়া সরকারি ভবন। যা দেখে ধৈর্যধর বলছেন, ‘‘ধৈর্য্যের ফল মিষ্টিই হয়!’’

আঘাত: ধৈর্যধরের জমিতে হওয়া ভবন ভাঙা হচ্ছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

আঘাত: ধৈর্যধরের জমিতে হওয়া ভবন ভাঙা হচ্ছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:০৪
Share: Save:

আঠাশ বছর আগে তাঁর বসত জমি নিয়ে নেয় সরকার। এত দিন ধরে কোর্টে কোর্টে ঘুরেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ী ধৈর্যধর ঘোষ। ফল পেলেন এত দিনে। আদালতের নির্দেশে ভাঙা শুরু হল সেই জমিতে হওয়া সরকারি ভবন। যা দেখে ধৈর্যধর বলছেন, ‘‘ধৈর্য্যের ফল মিষ্টিই হয়!’’

জাতীয় সড়কের পাশে ওই জমি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছিল বাম আমলে, ১৯৮৯ সালে। উচ্ছেদ করা হয় ধৈর্যধরের পরিবারকে। স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে সলকাভিটা এলাকায় সামান্য কৃষি জমিতে ঘর বেঁধে থাকতে শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দেন। অভিযোগ করেন, তাঁর জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। জোর করে দখল করেছে সরকার।

২০০৬ সালে মামলার রায় যায় তাঁদের বিরুদ্ধে। তত দিনে ধৈর্যধরবাবুর বড় ছেলে প্রশান্ত আয়কর আইন পাশ করে নিজেই আইনজীবী। তিনিও বাবাকে সাহায্য করতে শুরু করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতে আবেদন করেন তাঁরা। ২০০৯ সালের মার্চে সেই আদালত রায় দেয় ঘোষ পরিবারের পক্ষে। এর মধ্যে জাতীয় সড়ক লাগোয়া ওই ১০ কাঠা জমিতে গড়ে উঠেছে রাজ্যের কৃষি-সেচ দফতরের ভবন। এই অবস্থায় হাইকোর্টে পাল্টা আবেদন করে সরকারপক্ষ।

তার পরেও অপেক্ষা করতে হয়েছে ছ’বছর। শেষে ২০১৫ সালে নিম্ন আদালতকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ৬ সপ্তাহের মধ্যে ওই জমি যেন ধৈর্যধরকে ফেরানো হয়। কিন্তু সময় চলে যায়, জমি আর ফেরে না। সম্প্রতি আদালত আবার নির্দেশ দিয়েছে, ওই জায়গা ধৈর্যধরকে ফিরিয়ে দিয়ে ৩ এপ্রিল যেন প্রশাসন রিপোর্ট দেয়। তার পরেই তৎপরতা শুরু হয় পুলিশ-প্রশাসনে। বৃহস্পতিবার সরকারি ভবনে পড়ে হাতুড়ির ঘা।

প্রশান্ত বলছিলেন, ‘‘যখন আমাদের জমি জোর করে সরকার দখল করে নিল, আমার বয়স তখন ১২ বছর। বাবা কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন। তখনই ঠিক করি, এই লড়াইয়ে বাবার পাশে থাকতে হবে।’’ আর ধৈর্যধর? ৮২ বছরের বৃদ্ধের মুখে এখন চওড়া হাসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Office State Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE