Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ নববর্ষেও

ছিল বর্ষবরণের আবহ। প্রথা মেনে শুভেচ্ছা বিনিময়। বর্ণময় ভোট প্রচারও। তবু নববর্ষের প্রথমদিন পুরোপুরি খুশির স্রোতে ভেসে বেড়ানোর সাহস দেখাতে পারল না প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন শহর। একদিকে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ। অন্যদিকে মঠের আবাসিক এক শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। দুটি ঘটনায় দিনভর দফায় দফায় ক্ষোভে ফেটে পড়ল জলপাইগুড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

ছিল বর্ষবরণের আবহ। প্রথা মেনে শুভেচ্ছা বিনিময়। বর্ণময় ভোট প্রচারও। তবু নববর্ষের প্রথমদিন পুরোপুরি খুশির স্রোতে ভেসে বেড়ানোর সাহস দেখাতে পারল না প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন শহর। একদিকে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ। অন্যদিকে মঠের আবাসিক এক শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। দুটি ঘটনায় দিনভর দফায় দফায় ক্ষোভে ফেটে পড়ল জলপাইগুড়ি।

রবিবার তিস্তা উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে কোরানি পাড়ার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রী বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি। অভিযোগ, চারজন যুবক তাঁকে করলা নদী সংলগ্ন পরিত্যক্ত চিলড্রেন পার্কে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এদিকে, শহরের ওল্ড পুলিশ লাইন এলাকার একটি মঠে আবাসিক এক শিশুর উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে।

দুটি ঘটনায় আতঙ্কিত নাগরিকদের একাংশ শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের ভরসায় না থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন। যেমন, শহরের প্রবীণ আইনজীবী কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুটি ঘটনা শহরের মাথা হেঁট করেছে। সামাজিক অবক্ষয় এবং বেড়ে চলা ভোগ সর্বস্ব সংস্কৃতির প্রভাবে এসব হচ্ছে। শুধুমাত্র পুলিশ, প্রশাসন এবং আইন দিয়ে এই বিপদ থেকে রক্ষা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে মূল্যবোধ তৈরির সামাজিক আন্দোলন।”

বুধবার বর্ষবরণের দিন নাগরিকদের একাংশের আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং মঠের আবাসিক এক শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কথা। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা মেরিনা বেগমের মতো অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, জলপাইগুড়ি শহরে এমনটা কি করে হতে পারে? তিনি বলেন,“ঘটনা দুটি শোনার পর থেকে আতঙ্কে শরীর হিম হয়ে আছে। কোনদিন ভাবিনি এই শহরে কোন ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হবে। কোন শিশুকে যৌন নির্যাতন করা হবে। সত্যি বলতে আমরা মেয়েরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

সদর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা বাগচি বলেন, “আমার প্রিয় শহরেও মেয়েদের নিরাপত্তা নেই ভাবতে ভয় করছে। জানি না পুলিশ কি করছে।’’ প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তীর কথায়, “লজ্জায় শহরকে নিয়ে গর্ব করার সাহস খুঁজে পাচ্ছি না।”

শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝা। তাঁর কথায়, “শহরটা নিয়ে আমাদের গর্ব ছিল। সেটা আর থাকছে না।” জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরাজ ঘোষ বলেন, “অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া নজরদারি।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু নাগরিকরা সচেতন না হলে ওই সমস্যা ঠেকানো অসম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE