সকালবেলা জলপাইগুড়ি শহরের ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডে পদযাত্রা করে প্রচার করেছেন। প্রচার শেষে দুপুরে জলপাইগুড়ি তেলিপাড়ায় তাঁর ফ্ল্যাটে ফিরেছেন। একজন দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি যেতেই দোতরা নিয়ে বসে গেলেন জলপাইগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের জোটের প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা। গতকাল রাতেই গানটি লিখেছেন। এখনও রেওয়াজ করার সুযোগ পাননি। সকলকে থামিয়ে তিনি রেওয়াজ করতে বসে গেলেন। সেখানে তখন উপস্থিত জলপাইগুড়ি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি লুৎফর রহমান সহ অনেকে। সবাই দরকারি কথা ভুলে তার সামনে গান শুনতে বসে গেলেন।
গানটিতে উঠে এসেছে সমসাময়িক ঘুষ কান্ড থেকে ফ্লাইওভারের ভেঙে পড়া—সব কিছুই। গতবার তাঁর প্রচারে গান ছিল। দোতারা নিয়ে গ্রামে গঞ্জে ঘুরেছেন। এ বার পদযাত্রা এবং পথসভা নিয়ে এত দিন প্রচার করেছেন। এখন আর প্রথাগত প্রচারের মধ্যে ধাকতে চান না সুখবিলাসবাবু। তিনি নিজে একজন প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারের ফাঁকে তিনি গান লেখার ফুরসত পাননি। শনিবার একটু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে একটি গান লিখেছেন। সেই গানটিকেই এখন তার প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করেতে চান তিনি। তিনি পুরাণের নারদকে জগতের প্রথম সাংবাদিক রূপে অভিহিত করেছেন। লিখেছেন, যা দেখেন তিনি তাই দেখেন সর্বলোক। এ বার দেশের নারদের ব্যাখ্যা করে গান ধরলেন, ‘ভাই রে, দেশের নারদ দেখায় ভাই রে তৃণমূল নেতানেত্রীর কাণ্ড। বিদেশি কোম্পানির ঘুষ নিয়ে ভরায় তারা ভাণ্ড। সব দেখতে পেলাম। সেই কাণ্ডের ভাণ্ডাফোট নারদ করিল। ঘুষ নেওয়ার ছবি নারদ দেখিল।’ এ বার নেত্রীর বিরুদ্ধে তিনি গান ধরলেন, ‘টাকা মাটি মাটি টাকা দলের নেত্রী কয়। এদের কাছে লজ্জা, ঘৃণা, ভয় তিন থাকতে নয়। সেই নীতিতে ঘুষের টাকা হয়রে অনুদান......।’ এরপরই সিন্ডিকেটের জয়ধ্বনি করে তিনি গান ধরলেন, ‘সিন্ডিকেট কাটমানির জেরে নতুন ফ্লাইওভার গড়ে। কত মানুষ মরলো আর আহত হল, কে-ই বা তা জানে।’
সুখবিলাসবাবু বলেন, “আমার গানটি কবিগানের ঢঙে ভাওয়াইয়া গান।” কবিগানে কবির লড়াই হয়। এক কবির গানের মধ্যে দিয়ে উপস্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন আরএক কবি। আবার তিনি প্রশ্নও রাখেন। জবাবও আসে। ভোটের বাজারে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের ধর্তিমোহন রায় তাঁর গানের বিষয়বস্তু শুনে বলেন, “উনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ওঁর জানা উচিত ছিল সারদা কাণ্ডে সিবিআই দলের কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি। এটাও প্রমাণিত হবে যে, নারদ কাণ্ডে দলের কেউ জড়িত ছিলেন না। ভোটের মেশিনে ভোটাররা ওঁর গানের জবাব দেবেন।”
ভাওয়াইয়া গানের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাওয়াই গান প্রকৃতি নির্ভর। বিষয়বস্তু নদী, প্রকৃতি, মানুষের বিরহ, প্রেম, ভালবাসা। সুখবিলাসের গান এই বিষয়বস্তুর বাইরে। বাস্তব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তবে ভাওয়াইয়া শিল্পীরা জানিয়েছেন, এখন ভাওয়াইয়ায় সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে গান লিখে উপস্থাপনা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পী হৈমন্তী রায় পাটোয়ারি বলেন, “আগে ভাওয়াইয়া গান যেমন করে বাঁধা হতো, এখন তার পরিবর্তন এসেছে। আমরা সেই গান ভাওয়াইয়ার সুরে গাইছি।” হলদিবাড়ি ব্লকের একজন ভাওয়াইয়া শিল্পী দীপালি বর্মন বলেন, “ভাওয়াইয়া গানের বিবর্তন সরকারি প্রচার ধেকেই এসেছে। যেমন এখন ভোট দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভাওয়াইয়ার মাধ্যমে প্রচারে আমরা যোগ দিচ্ছি।” ভাওয়াইয়া শিল্পীদের সম্মিলিত বক্তব্য, ভাওয়াইয়ার মাধ্যমে ভোটের প্রচারে অসুবিধা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy