Advertisement
E-Paper

আগমনীর সুর ভাসাল বর্ষা

শরতের আকাশে কালো মেঘের হানাদারি। দোসর বৃষ্টি। শনিবার দুপুর থেকে রাতভর কখনও ইলশেগুঁড়ি, কখনও মুষলধারে বৃষ্টিতে ব্যাহত গোটা উত্তরবঙ্গের জনজীবন। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাই ঘুম ছুটেছে ব্যবসায়ী আর পুজো উদ্যোক্তাদের। চিন্তার মেঘ কুমোরটুলিতে।মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পাট এবং পাটশলা দিয়ে। লম্বা প্রায় ৬৭ ফুট। চওড়া ৭৫ ফুট। মাসখানেক আগে থেকে দক্ষিণদিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ফুটবল মাঠে তৈরি হয়েছে বাঁশের কাঠামো তৈরির কাজ।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
ষ্টিতে ক্রেতার দেখা নেই দোকানে। ময়নাগুড়িতে।

ষ্টিতে ক্রেতার দেখা নেই দোকানে। ময়নাগুড়িতে।

মাথায় হাত

মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পাট এবং পাটশলা দিয়ে। লম্বা প্রায় ৬৭ ফুট। চওড়া ৭৫ ফুট। মাসখানেক আগে থেকে দক্ষিণদিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ফুটবল মাঠে তৈরি হয়েছে বাঁশের কাঠামো তৈরির কাজ। এতদিন ঘরের ভিতর পাটের নানা সুক্ষ্ম শিল্পকর্ম চলেছে। এ বার এগুলি মণ্ডপে বসানোর কথা। বিশাল মণ্ডপ পাট এবং পাট শলায় গেঁথে দিতে অনেক সময় প্রয়োজন। নিম্নচাপের চোখ রাঙানিতে তাই রক্তচাপ বেড়েছে ফুটবল ক্লাবের সভাপতি পুজো উদ্যোক্তা নবীন কুমার দাসের। শনিবার থেকে বৃষ্টিতে মণ্ডপের কাজ বন্ধ। রবিবারও দিনভর বসেই থাকলেন শিল্পীরা। ছাতা মাথায় বারবার মণ্ডপ-ক্লাব করে বেড়ালেন নবীনবাবু। শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা করেও স্বস্তি মেলেনি। চেনা কাউকে দেখলেই একরাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেলছেন। অস্থির নবীনবাবুর কথায়, ‘‘পাটের সুক্ষ কাজ, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতেও সম্ভব নয়। কাজ দু’দিন পিছিয়ে গেল, ষষ্ঠীর দিনই মণ্ডপে ভিড় জমলে মুখ দেখাতে পারব না।’’

ভাঙল তোরণ

বৃষ্টি চলছে তো চলছেই। জল জমে মাটি নরম হয়ে বাঁশের তৈরি তোরণই ভেঙে পড়েছে। কোচবিহারের হরিণচওড়ার পুজো কমিটি মণ্ডপে ঢোকার দু’দিকের রাস্তা জুড়ে তোরণ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। সেই মতো বাঁশের কাঠামোও নির্মাণ হয়ে গিয়েছ আগে থেকে। কয়েকটি তোরণ সাজানোর কথা আলোর মালা দিয়ে। রবিবার সকালে একটি তোরণ ভেঙে পড়ে, দুপুরের মধ্যে আরো দু’টি তোরণ ভেঙে যায়। আরও কয়েকটি তোরণ একদিকে কাত হয়ে গিয়েছে। এখন নতুন করে তোরণ তৈরি করতে হবে, কিন্তু হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। শাকের আঁটির মতো ভাবাচ্ছে বাজেটও। পুজো কমিটির এক কর্তার কথায়, ‘‘বৃষ্টি তো বাজেট বাড়িয়ে দিচ্ছে।’’ বাজেট নিয়ে চিন্তায় কোচবিহারের দিনহাটার স্টেশন রোডের পুজো কমিটিও। কমিটির সদস্য কালীপদ সাহা বলেন, ‘‘মণ্ডপের কাজ হয়তো শেষ হবে। কিন্তু দু’দিন তো চাঁদা তুলতে যাওয়া গেল না। বাজেট জোগাড় হবে তো?’’

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন কোচবিহারের কেশব রোড।

হবে তো চক্ষুদান?

নানা রঙের পলিথিনে ঢেকে গিয়েছে শিলিগুড়ির কুমোরটুলি। ঘরে ঘরে প্রতিমা। ঘরের বাইরেও। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনে ঢাকা হয়েছে প্রতিমা। কিন্তু তাতেও সামলানো দায়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় শিলিগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৮০ মিলিমিটার। বৃষ্টিতে প্রতিমার মাটি নরম হয়ে গিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে প্রতিমা রং করা শুরু করেছিলেন সিধু-কানহু রোডের মৃৎশিল্পী ভূপেশ পাল। বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ। ভূপেশবাবুর কথায়, ‘‘আবহাওয়া ভিজে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও কবে মাটি শোকাবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ পাশাপাশি রয়েছে অন্য ভাবনা। মহালয়ার সকালে প্রতিমার চক্ষুদানের রীতি। কুমোরটুলির শিল্পী সাধন পালের কথায়, ‘‘দেবীর মুখে পাকা রং না করে চোখ আঁকব
কী করে?’’

ব্যাগ না ছাতা?

বিধান মার্কেটে জল। কিন্তু শিলিগুড়ির মাটিগাড়া অথবা সেবক রোডের শপিং মলের ভিতর জলও নেই। কাদাও নেই। কিন্তু ভিড়ও নেই। রবিবার বিকেলের পরে বৃষ্টির তোড় কমলেও বন্ধ হয়নি। মহালয়ার আগের রবিবারে প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। শাড়ি থেকে প্রসাধন সব দোকানেই পসরার সম্ভার। শপিং মলগুলিতে দেবী দুর্গার কাট-আউট, কোথাও মহালয়ার স্ত্রোত্র বাজছে। কিন্তু সব আয়োজনেই জল ঢেলেছে নিম্নচাপ। ব্যবসা কেমন হলো প্রশ্নটা শুনেই তাই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন দোকানি, ‘‘ক্রেতা কোথায় মশাই? আর আসবেই বা কী করে। ছাতা মাথায় কি বাজার হয়?’’

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন কোচবিহারের কেশব রোড।

ছবিগুলি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক, অমিত মোহান্ত, হিমাং‌শুরঞ্জন দেব।

আলো জ্বলবে তো?

টানা বৃষ্টিতে জলপাইগুড়িতেও থমকে গিয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। বিপাকে আলোকসজ্জার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মণ্ডপের কাজ দু’দিন পিছিয়ে গেলে, আলো বসানোর কাজও যে পিছিয়ে যাবে। বৃষ্টিতে শর্টসার্কিটের আশঙ্কায় রাস্তায় আলোর তোরণ বসানোর কাজও বন্ধ। শহরের অন্যতম বিগবাজেটের পুজো তরুণ দলের। এবার চারটি বড় এবং দু’টি ছোট আলোর গেট হওয়ার কথা। মহালয়ার দিন থেকেই তা সাজানোর তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু দায়িত্বে থাকা ধীরাজ মন্ডল বলেন, “বৃষ্টির জন্য রাস্তায় আলো লাগানোর কাজ হচ্ছে না। এমন চললে, সব আলো লাগানো যাবে কিনা সন্দেহ।’’

হাওয়ার হাল

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন, আরও ৪৮ ঘণ্টা এমন চলবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, ‘‘মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়েছে, সেই সঙ্গে দোসর নিম্নচাপ। তার জেরেই বৃষ্টি চলছে।’’

Autumn season Durga puja Rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy