Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হোটেলে বসেই ব্যাঙ্ক লুঠের ছক

চার দিন ধরে ব্যাঙ্কের অদূরে একটি হোটেলে ঘাঁটি গেড়ে দুষ্কৃতীরা লুঠের ছক কষেছিল বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাগডোগরায় ব্যাঙ্কের লকার লুঠের ঘটনার পরে বাগডোগরা-সহ লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন লজ, হোটেলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে নেমে ওই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে।

ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলছেন অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলছেন অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
বাগডোগরা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০২:২১
Share: Save:

চার দিন ধরে ব্যাঙ্কের অদূরে একটি হোটেলে ঘাঁটি গেড়ে দুষ্কৃতীরা লুঠের ছক কষেছিল বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাগডোগরায় ব্যাঙ্কের লকার লুঠের ঘটনার পরে বাগডোগরা-সহ লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন লজ, হোটেলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে নেমে ওই সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে। ব্যাঙ্কের থেকে পাওয়া সিসিটিজি ফুটেজে পাওয়া তিন যুবকের মুখ ঢাকা ছবির সঙ্গে সেগুলি মেলানো শুরু হয়। সেখানেই বিহার মোড় লাগোয়া একটি হোটেলের ফুটেজে পাওয়া এক যুবকের মুখের মিল পাওয়া যায়।

জাতীয় সড়ক লাগোয়া হোটেল বা লজগুলিতে কারা আসছে-যাচ্ছে, সেগুলি সম্পর্কে নজরদারি ঠিকঠাক না থাকায় বাইরের থেকে আসা লোকজনের সম্পর্কে পুলিশ আগে জানতে পারেনি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, সন্দেহভাজন দুই জন যে হোটেলটিতে ছিল, তার মালিক স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি প্রশান্ত দত্ত। তিনি জানান, সন্দেহভাজনদের জমা দেওয়া পরিচয়পত্র এবং ফুটেজ পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।

শুক্রবার দুপুরে বাগডোগরায় যান শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর কাছেও পুলিশ ও ব্যাঙ্কের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ জানান বাসিন্দারা। সামিল ছিলেন গ্রাহকরাও। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাঙ্কের গাফিলতি রয়েইছে। কিন্তু পুলিশ বাগডোগরায় কী করছে, তা বোঝা যাচ্ছে। রাতে নজরদারি ভ্যান রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে তোলা তুলতে ব্যস্ত থাকে। মাঝরাতে ব্যাঙ্কে দুষ্কৃতীরা খুব কম হলেও দু’ঘণ্টা ছিল। তার পরে তারা রাস্তায় নেমে পালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের চোখে কিছুই আসেনি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, বাগডোগরা পুলিশ এবং এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা কী করেন।’’

গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলার পর অশোকবাবুও ব্যাঙ্কের যে এলাকা দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢুকেছিল, তা ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে কী হচ্ছে? খুন, ডাকাতি, ছিনতাই। মানুষ আর সুরক্ষিত নেই। বাড়িতে লুঠ, চুরি তো ছেড়েই দিলাম ব্যাঙ্কে টাকা, অলঙ্কারও সুরক্ষিত নয়। পুলিশি ব্যবস্থা একেবারেই ঠিক নেই।’’ তিনি জানান, ব্যাঙ্কের তরফে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের কী ব্যবস্থা করা হয় তা আমরা দেখছি। আমরা সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির মাধ্যমে ব্যাঙ্কটির উচ্চ মহলে যোগাযোগ করছি।

পুলিশ সূত্রের খবর, ভোটের আগে বাগডোগরার বিবেকানন্দ পল্লি, লোকনাথ নগর, ডিফেন্স কলোনি এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটে। কোনও ঘটনারই এখনও কিনারা হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এ ছাড়া একাধিক বাইক চুরির ঘটনাও ঘটেছে। সেগুলিরও হদিশ মেলেনি বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কে যে দলটি অপারেশন চালিয়েছে, তাতে দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, ঝাড়খন্ডের লোক রয়েছে বলে পুলিশের একাংশ মনে করছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন থানার অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি-রা। শুধুমাত্র বাগডোগরা পুলিশের উপর ভরসা না রেখে তিনি চারটি থানার বাছাই করা পুলিশ কর্মীদের দিয়ে আলাদা একটি তদন্তকারী দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পুজোর আগে শিবমন্দির এলাকায় একটি ব্যাঙ্কে ওই দলটিই হানা দিয়েছিল বলে পুলিশের অনুমান।

আপাতত পুলিশ জানতে পেরেছে, সন্দেহভাজন দু’জন গত পয়লা মে বিহার মোড় লাগোয়া ওই হোটেলে উঠেছিল। সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঘর ভাড়া নেয়। দলটিতে কম করে ৪-৫জন ছিল। সারাদিন ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যায় তারা ফিরে আসত। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই দু’জন হোটেলের সামনে ঘোরাফেরা করেছে। পরে খেতে যাচ্ছি বলে চলে গেলেও রাতে একজন ফেরেনি। অন্য একজন, ভোর চারটের পর নিরাপত্তারক্ষীকে ঘরের চাবি দিয়ে গাড়ি ধরতে যাচ্ছি বলে চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গ্যাস কাটার, পাইপ এদের সঙ্গে ছিল না। সেটি অন্য দুষ্কৃতীরা রাতে নিয়ে এসেছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা এর আগে শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোড, আশ্রমপাড়ার তিনটি সোনার দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। সেই দলই বুধবার রাতে বাগডোগরার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ডাকাতি করে থাকতে পারে। বিশেষ করে হিলকার্ট রোডের সোনার দোকানে যেভাবে পাশের দোকান দিয়ে ঢুকে গ্যাস কাটার দিয়ে ঠিক সোনার দোকানের ভল্টের উপরে কেটে দোকানে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা এক্ষেত্রেও সেভাবেই ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকেছে। ভিতরে ভল্ট কাটার পদ্ধতিও অনেকটা একই। ঘটনাগুলোর একটিরও কিনারা হয়নি।

এ দিন পাঁচ সদস্যের একটি ফরেনসিক দল তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যায়। ব্যাঙ্কের কাজকর্মও শিবমন্দির শাখায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী দলের কয়েকজন জানান, ওই দুষ্কৃতীরা ঘটনার আগে ঝাড়খন্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোবাইলের সিম জোগাড় করে নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে। এবং কাজ শেষ হতেই তা নষ্ট করে দেয়। আগে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা দেখা গিয়েছে। এ দিন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘কিছু সূত্র ধরে তদন্ত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank loot hotel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE