Advertisement
E-Paper

বিরোধীরা গণনা নিয়েও ভয়ে

‘কাউন্টিং এজেন্ট’-এর তালিকা থেকে নাম কটিয়ে দেওয়ার আর্জি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বাম-বিজেপি-কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০১:৫৭
টহল: কোচবিহারের গীতালদহে নিরাপত্তারক্ষীরা। নিজস্ব চিত্র

টহল: কোচবিহারের গীতালদহে নিরাপত্তারক্ষীরা। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের ‘কাউন্টিং এজেন্ট’ তাঁদের নিয়ে বুধবার দিনভর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে দলীয় অপিসে বৈঠক করেছেন স্থানীয় নেতারা। কাকে, কখন কী ভাবে কী করতে হবে তা ‘পাখি পড়া’র মতো করে বুঝিয়েছেন তাঁরা। দিনের শেষে আলিপুরদুয়ার থেকে গঙ্গারামপুর, হেমতাবাদ থেকে ধূপগুড়ি, কালিয়াচক থেকে দিনহাটা, প্রায় সব জায়গার তৃণমূল নেতাদের মুখেই তৃপ্তির হাসি।

কিন্তু, ‘কাউন্টিং এজেন্ট’-এর তালিকা থেকে নাম কটিয়ে দেওয়ার আর্জি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বাম-বিজেপি-কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই। দল সূত্রের খবর, বিরোধী দলের তরফে নানা এলাকায় যাঁদের গণনা কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল, তাঁদের একাংশ নানা ব্যস্ততার অজুহাতে যেতে চাইছেন না। ফলে, রাতারাতি নতুন ‘কাউন্টিং এজেন্ট’ খুঁজতে বসে বিপাকে পড়ছেন উত্তরের সাত জেলার বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা-ভোটপ্রার্থী। বিরোধী দলের উত্তরবঙ্গের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, শেষ পর্যন্ত কাউন্টিং এজেন্টরা গণনা কেন্দ্রে গেলেও কে কোথায়, কতক্ষণ থাকতে পারবেন তা নিয়ে তাঁদের সংশয় রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, বিরোধী এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, গোলমাল বাঁধিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াও হতে পারে।

বিজেপির উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক রথীন বসু বলেন, ‘‘ভোটের দিন যা হয়েছে তাতে কাউন্টিং এজেন্টদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। অনেকেই নাম কাটিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। সেটা সম্ভব নয়। সকলকেই যেতে বলা হয়েছে।’’ রথীনবাবুর অভিযোগ, ‘‘কাউন্টিং এজেন্টদের তালিকা ধরে বাড়িতে গিয়ে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গণনা কেন্দ্রে গেলে গোলমালে ফাঁসিয়ে মামলায় জড়ানোর হুমকিও চলছে। এই ভোটের কোনও মানে হয় না।’’

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বিরোধীদের অভিযোগ, আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারলে আমাদের দোষ। গণনায় কেন্দ্রে লোক দিতে পারবে না সেটাও আমাদের দায়? আমরা কী বাম-বিজেপি-কংগ্রেসকে কাউন্টিং এজেন্ট খুঁজে দেব!’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রতিটি গ্রাম একাধিকবার চষে বেড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্দিনে অত্যাচারিতদের আগলে রেখেছেন। এখন গ্রামের মানুষ তাঁকে ছেড়ে অন্য দিকে তাকাবেন না। এটা বাম-বিজেপি-কংগ্রেসের যে নেতারা এখনও বোঝেননি, তাঁরাই ভুলভাল অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন।’’

ঘটনা হল, উত্তরবঙ্গের পুর এলাকা, শিলিগুড়ি মহকুমা ও দার্জিলিং পাহাড় ছাড়া সর্বত্র পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। ৬ জেলায় অন্তত ১২ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ভোট হয়েছে। একেকটি জেলায় গণনা কেন্দ্রে গড়ে ২ হাজার জন করে প্রতিনিধি রাখতে হবে একেকটি দলকে। যেমন, কোচবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ১৯৬৬, পঞ্চায়েত সমিতি ৩৬৬, জেলা পরিষদ ৩৩টি। বিজেপি ২৮টি জেলা পরিষদে প্রার্থী গিয়েছে। কোচবিহারে প্রতি গণনাকেন্দ্রে ২ জন করে লোক দিতে গেলে ২৪১৮ জন লাগবে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিল রঞ্জন দে বলেন, ‘‘মনোনয়ন থেকে ভোটগ্রহণ কী হয়েছে, তা সকলেই টের পেয়েছেন। এখন গণনার নামে কী হবে সেটা বুঝতে কী বাকি থাকে! সে জন্য অনেকেই যেতে চাইছেন না। দেখা যাক কী হয়!’’

মালদহেও হাল ছেড়ে দেওয়ার ছবি। সেখানকার কংগ্রেস নেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নুর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট নয়, ভোট লুঠ হয়েছে। তৃণমূল আগাম জানালে আমরা ভোট বয়কট করতাম। কারণ, মানুষের রক্ত ঝরুক তা আমরা চাই না।’’ উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘যা হচ্ছে তার সমালোচনা করার কোনও ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গণনার নামেও প্রহসন হলে আশ্চর্য হব না।’’ বাম দলের নানা জেলার শীর্ষ নেতারাও নানা অভিযোগ করেছেন। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী সাড়ে চারশোর বেশি। কত জনের এজেন্ট দেওয়া যাবে দেখি। সবার জন্য চেষ্টা করছি।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy