Advertisement
০৩ মে ২০২৪
কমিশনারেটের বাইরে এল ভক্তিনগর

ক্ষমতা ফিরে পেল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন

ভক্তিনগর থানা এলাকার ‘এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটে’র ক্ষমতা শিলিগুড়ি কমিশনারেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে। গত বুধবার জলপাইগুড়ির জেলা শাসকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনই জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিবের পাঠানো এক নির্দেশে (মেমো নম্বর ১৩৫০-পিএল/পিবি১৪ এম-২৩/১৫) জানানো হয়েছে সিআরপিসি আইনের ২৩ (২) ধারার ক্ষমতা জলপাইগুড়ি জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

ভক্তিনগর থানা এলাকার ‘এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটে’র ক্ষমতা শিলিগুড়ি কমিশনারেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে। গত বুধবার জলপাইগুড়ির জেলা শাসকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনই জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিবের পাঠানো এক নির্দেশে (মেমো নম্বর ১৩৫০-পিএল/পিবি১৪ এম-২৩/১৫) জানানো হয়েছে সিআরপিসি আইনের ২৩ (২) ধারার ক্ষমতা জলপাইগুড়ি জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভক্তিনগর থানা শিলিগুড়ি কমিশনারেটে যুক্ত হওয়ার পরে এই ক্ষমতা শিলিগুড়ি পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসকের আদালতে ভক্তিনগর থানা এলাকার যে মামলাগুলি যেমন শান্তিভঙ্গ সহ অনান্য সামাজিক এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের অভিযোগ শুনানি হতো, সেগুলি শিলিগুড়ি কমিশনারেটে স্থানান্তরিত হয়। সেই অভিযোগগুলির শুনানি অথবা নিষ্পত্তির ভার ফের জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই মর্মেই জলপাইগুড়ির জেলাশাসক গত বুধবার নির্দেশ জারি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশ পাইনি। পেলে সেই মতো পদক্ষেপ করব।’’

গত বছরের শেষে জলপাইগুড়ি স্পোর্টস ভিলেজ উদ্বোধনে এসে ভক্তিনগরের মামলা জলপাইগুড়িতেই থাকবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি সভা থেকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। জলপাইগুড়ির আইনজীবীদের দাবি, সেই আশ্বাসের পরেই রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক মহলে পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া শুরু করে। জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মন এ দিন বলেন, ‘‘নির্দেশটি আমার হাতে এসেছে। গত মাসে বীরপাড়ায় যখন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন সে সময় আমি ফের একটি লিখিত আর্জি জানিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ফের ভক্তিনগরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা জলপাইগুড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভক্তিনগর থানাকে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের অধীনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার শুরু হল বলেই মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’’

পুরসভা ভোটের আগে সরকারি এই নির্দেশকে অবশ্য পক্ষপাতিত্ব বলে মনে করছে বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, জলপাইগুড়িবাসীদের খুশি করতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিলিগুড়ি জেলা বিজেপির এক নেতার কথায, ‘‘সরকারি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তৃণমূল পুরভোটের আগে জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।’’

২০১২ সালে শিলিগুড়ি কমিশনারেট গঠনের পরে ভক্তিনগর থানাকে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের আওতা থেকে শিলিগুড়িতে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। সে সময় সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঝড় ওঠে জলপাইগুড়িতে। ভক্তিনগরকে জলপাইগুড়িতে রাখার দাবিতে বনধও হয়। ভক্তিনগর থানা জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের আওতা থেকে চলে গেলেও, বিচারবিভাগীয় এক্তিয়ার থাকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের কাছেই। তবে মহকুমা শাসকের দফতরে যে অভিযোগের নিষ্পত্তি হতো সেগুলি শিলিগুড়ি কমিশনারেটে নিয়ে আসা হয়। গত বুধবারের বিজ্ঞপ্তির পরে ফের সেই ক্ষমতা জলপাইগুড়িতে ফিরে এল। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চ। মঞ্চের সভাপতি সুনীল সরকার এবং সম্পাদক রতন বণিক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ভক্তিনগর নিয়ে টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে। আমরা যখন ভক্তিনগরের সব মামলাই শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান আদালতে নিয়ে আসার দাবি তুলেছি, তখন এই সিদ্ধান্ত একটা ধাক্কা। পুরভোট মিটে গেলে আমরা আন্দোলন শুরু করব।’’

ভক্তিনগর থানা এলাকার ১৪টি ওয়ার্ড শিলিগুড়ি পুরসভার সঙ্গে যুক্ত। এই এলাকার বাসিন্দাদের জলপাইগুড়ি যাতায়াতের দুর্ভোগ এড়াতে ভক্তিনগরের সব ধরণের মামলাই শিলিগুড়ি আদালত এবং কমিশনারেটে যুক্ত করার দাবি বলে মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে। মঞ্চের অভিযোগ, গত বুধবারের সিদ্ধান্তে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব হওয়ার পরিবর্তে উল্টে বাড়বে। রতনবাবুর কথায়, ‘‘কমিশনারেট অর্ন্তগত মেট্রোপলিটন আদালত না হওয়া পর্যন্ত শিলিগুড়ি আদালতেই ভক্তিনগরের বিচারবিভাগীয় এক্তিয়ার থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’’

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE