Advertisement
E-Paper

ভাই নেই, কাজ বন্ধ শিল্পীর

বিসর্জনে হারিয়ে গেছে আদরের ভাই৷ এ বার আর তাই দেবাশিসের হাত ধরে ঘটবে না দেবীর আগমন। বিসর্জন মানেই তো মন কেমন করে ওঠা একটা দিন৷ যার আসার জন্য এত দিনের অপেক্ষা, তার চলে যাওয়ার পালা৷ কিন্তু ওই দিনটিতে কষ্ট যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায় তাঁদের, যাঁরা দিন-রাত এক করে একটার পর একটা প্রতিমা গড়ে তোলেন৷

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩২
ভাইয়ের ছবি হাতে দেবাশিসবাবু। — সন্দীপ পাল

ভাইয়ের ছবি হাতে দেবাশিসবাবু। — সন্দীপ পাল

বিসর্জনে হারিয়ে গেছে আদরের ভাই৷ এ বার আর তাই দেবাশিসের হাত ধরে ঘটবে না দেবীর আগমন।

বিসর্জন মানেই তো মন কেমন করে ওঠা একটা দিন৷ যার আসার জন্য এত দিনের অপেক্ষা, তার চলে যাওয়ার পালা৷ কিন্তু ওই দিনটিতে কষ্ট যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায় তাঁদের, যাঁরা দিন-রাত এক করে একটার পর একটা প্রতিমা গড়ে তোলেন৷ কিন্তু সেই সব মৃৎশিল্পীর থেকে খানিকটা যেন ব্যতিক্রমী দেবাশিস৷

জলপাইগুড়ির রাখালদেবী গ্রামের বাসিন্দা মৃৎশিল্পী দেবাশিস ঝা তিন দশক ধরে প্রতিমা গড়ে আসছেন৷ কিন্তু তার তৈরি দূর্গাপ্রতিমা কেউ বিসর্জন দেন না৷ এটা দেবাশিসের বিরাট গর্ব! কিন্তু গত বছর সেই বিসর্জনের দিনেই কি না প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে গিয়ে চিরতরে চলে গেল একমাত্র আদরের ভাইটি৷ এ বার আর তাই প্রতিমাই গড়ছেন না তিনি৷

তবে চেষ্টা যে একেবারে করেননি, তা কিন্তু নয়৷ তাঁর বাড়িতে গেলেই দেখা যাবে অর্ধ সমাপ্ত পড়ে রয়েছে জগজ্জননীর তিনটি মূর্তি৷ কিন্তু প্রতিবার কুড়িটি প্রতিমা তৈরি করা দেবাশিস এ বার মাত্র তিনটি প্রতিমাই গড়ে তুলতে পারেননি৷ নিজের বাড়ির উঠোনে বসে বললেন, “বানাবো কী করে? মূর্তি গড়তে গেলেই তো বারবার গতবারের বিসর্জনের দিনটা তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ভাইয়ের মুখ৷ তাই অনেক চেষ্টা করেও এ বার আর পারলাম না প্রতিমা গড়তে৷”

দেবী দুর্গার সঙ্গে সেই ছেলে-বেলা থেকেই ‘সম্পর্ক’ দেবাশিসের৷ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেই দুর্গাপুজোয় পুরোহিত হিসাবে হাতেখড়ি৷ একেবারে সামনে থেকে দুর্গাপ্রতিমা দেখার সুবাদে ধীরে ধীরে আগ্রহ জন্মালো প্রতিমা গড়ায়৷ কাজ শিখতে তারপর অন্যের কারখানায় কাজ করা৷ শেষ পর্যন্ত নিজে হাতে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করা৷ কিন্তু বড় প্রতিমা নয়, বরং মিনি দূর্গা বা ছোট দূর্গাই বানান দেবাশিস৷ যা জলপাইগুড়ির একাধিক বাড়ি বা দোকান তো বটেই, এমনকী গিয়েছে অসম, মহীশূর, জয়পুর ও নেপালেও৷ “এ বারও দিল্লি থেকে একটা অর্ডার ছিল৷ কিন্তু গড়তে পারলাম না” – বললেন দেবাশিস৷

দেবাশিস ভুলতে পারেন না, ছোট ভাই শুভাশিস তাঁকে সারাক্ষণ উৎসাহ দিতেন। একটি সোনার দোকানে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন শুভাশিস। রাত জেগে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালনের পর ঘুম চোখে সকালে সামলাতেন দেবাশিসের মুদি দোকানটি৷ যাতে করে দাদা মন দিয়ে প্রতিমা গড়তে পারেন৷ আর বাড়ির সামনেই সেই দোকানের পাশে বসে প্রতিমা গড়তে মগ্ন থাকতেন দেবাশিস৷ দোকান সামলানোর পাশাপাশি এক মনে তা দেখে যেতেন শুভাশিস৷

কিন্তু গত বছর বিসর্জনের দিন দুপুরে শুভাশিস সোনার দোকানের ডিউটি করার সময় সামনের রাস্তা দিয়ে নিরঞ্জন ঘাটের দিকে যাওয়া একটি প্রতিমা দেখতে দোতলার ছাদ থেকে নীচে উঁকি দিয়েছিলেন শুভাশিস৷ তখনই কোনও ভাবে সেখান থেকে নীচে পড়ে যান তিনি৷ তারপর সব শেষ৷

দেবাশিস বলছিলেন, “ভাল একটা প্রতিমা গড়লে, আমার মনে যতটা না আনন্দ হত, তার থেকেও বেশি খুশি হত ভাই৷ সবাইকে ডেকে ডেকে সেই প্রতিমা দেখাতো৷ মুদি দোকানে বসেই আরও ভাল প্রতিমা গড়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে যেত৷ ওঁর জন্যই এবারও আরও ভাল প্রতিমা গড়তে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু প্রতিমা গড়তে বসলেই কেন জানি না, আমায় ফাঁকি দিয়ে যাওয়া দুষ্টুটা চোখের সামনে চলে আসছে৷ তাই আর পারলাম না৷”

কথাগুলি বলার সময় অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন দেবাশিস৷ তাঁর জীবনে বিসর্জনের বিষাদ দেবীপক্ষ শুরুর আগেই৷

Durga idol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy