Advertisement
০২ মে ২০২৪

পাকদণ্ডি জুড়ে গাড়ির জট, আনন্দই মাটি

কাশ্মীরের জোজি লা-র মতো ভয়ঙ্কর গিরিবর্ত্মে গিয়েছি। তখনও খাড়া খাদের পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ভয় করেছিল। বৃহস্পতিবার সিকিমের পথে কালীঝোরার পাশ দিয়ে তিস্তার গা ঘেঁষে যেতে গিয়ে বুকটা তেমনই ছ্যাঁত করে উঠেছিল।

রোহন ইসলাম
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

কাশ্মীরের জোজি লা-র মতো ভয়ঙ্কর গিরিবর্ত্মে গিয়েছি। তখনও খাড়া খাদের পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ভয় করেছিল। বৃহস্পতিবার সিকিমের পথে কালীঝোরার পাশ দিয়ে তিস্তার গা ঘেঁষে যেতে গিয়ে বুকটা তেমনই ছ্যাঁত করে উঠেছিল।

কলকাতা থেকে ছয় বন্ধু এসেছি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে বুধবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ এনজেপি। সকালেই পাহাড় যাব। কেবল চিন্তায় রেখেছিল সারাক্ষণ ধরে ঝিরঝিরে ইলশেগুঁড়িটা। আর হোওয়াটসঅ্যাপে পরিজনদের উদ্বেগ। সকালে ড্রাইভার ভূপেশ জানাল, ভোর ৫টায় আলগাড়া থেকে বেরিয়েছে। খুব বেশি হলে সাড়ে ৮টা। অতএব, ব্যাগপত্তর গুছিয়ে দিব্য রেডি। ৯টার পরে ভূপেশ ফোনে খবর দিলেন, কালীঝোরায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। তাই দেরি হচ্ছে। এ দিকে ঘড়ির কাঁটা ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। ১০টা, ১১টা, ১২টা। চেক আউটের টাইম চলে এল। হোটেলে টাকাপয়সা মিটিয়ে পোঁটলাপুটলি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালাম আমরা ছ’জন। মাথায় বৃষ্টি কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে কোনও রকমে একটা শেডের তলায় ঠাঁই নিলাম। সওয়া ১টা নাগাদ ভূপেশ এলেন। কোনও রকমে গাড়ি ঘুরিয়ে পাঙ্খাবাড়ির রাস্তা ধরে লাভা হয়ে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি।

বিলম্ব-বিপত্তির শেষে রওনা দিলাম। গন্তব্য পূর্ব সিকিমের আরিতার। মাঝে ফিরতি ড্রাইভারদের পথ খুলে যাওয়ার কথা জেনে পুরনো রাস্তা দিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভূপেশ। শালুগাড়া পেরিয়ে সেনা ক্যাম্প ছাড়িয়ে পাহাড়ি পথ ধরতেই শুরু হল জট। গাড়ি একটু এগোয়। আবার দাঁড়ায়। বিরক্তি ক্রমে বাড়ছিল। দলে যে সর্বদা বকবক করে, সে-ও কেমন চুপ। পাহাড়ের পাক দেওয়া ঘূর্ণিপথে দীর্ঘ গাড়ির জট নজরে পড়ছিল। তারই মাঝে লেন ভেঙে বেরিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছিলেন কিছু অস্থিরমতি চালক।

প্রায় ৩টে নাগাদ পৌঁছলাম কালীঝোরার সেই জায়গায়। জাতীয় সড়কের একটা বড় অংশ ধস নেমে তিস্তায় নেমে পড়েছে। বাকি সরু অংশটা দিয়ে প্রায় উথাল পাথাল খেতে খেতে কোনও রকমে এগিয়ে চলেছে গাড়ির জট। ১৫ মিনিট অন্তর দু'পাশের গাড়িকে পালা করে পার করিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। প্রাণ হাতে করে ধসের অংশ পার করল আমাদের গাড়ি। খরস্রোতা তিস্তাকে পাশে রেখে কালীঝোরা ছাড়িয়ে এগিয়ে চললাম আমরা। তবে পথের জট কাটল না। সাড়ে ৪টা নাগাদ পৌঁছলাম লোহাপুলের কাছে। লিকুভির রাস্তায় ধস। সেখানেও একই ভাবে পথ পেরোলাম। বিকেল ৫টা নাগাদ দুপুরের খাবার সেরে লোহাপুল থেকে বেরোলাম।

এনজেপি থেকে ১০৯ কিমি দূরের পূর্ব সিকিমের আরিতার পৌঁছতে এমনিতে লাগে পৌনে চার ঘণ্টা। আমাদের লাগল তার দ্বিগুণ। ক্লান্তিতে তখন চোখ বুজে আসছে। তবুও চোখ বন্ধ করেও যেন দেখতে পাচ্ছি ফুঁসতে থাকা তিস্তাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Car Jam hill region Landslide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE