Advertisement
E-Paper

ভারতের জন্য আবির উড়ল ছিটমহলে

মেঠো পথের দু’ধারে কোথাও ধোনি, কোথাও শামি, আপাদমস্তক ফুলের মালায় ঢাকা। কোথাও আবার ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে তারকা ক্রিকেটারদের ছবি। বৃহস্পতিবার সাতসকালে দিনহাটার নাজিরহাট থেকে ওই মেঠো পথ ধরে রঙিন টিভি আর ব্যাটারি ভাড়া করে মশালডাঙা ছিটমহলে আসছিলেন একদল যুবক। তাদের কারও হাতে বাজি-পটকা, কারও হাতে আবির।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৮

মেঠো পথের দু’ধারে কোথাও ধোনি, কোথাও শামি, আপাদমস্তক ফুলের মালায় ঢাকা। কোথাও আবার ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে তারকা ক্রিকেটারদের ছবি। বৃহস্পতিবার সাতসকালে দিনহাটার নাজিরহাট থেকে ওই মেঠো পথ ধরে রঙিন টিভি আর ব্যাটারি ভাড়া করে মশালডাঙা ছিটমহলে আসছিলেন একদল যুবক। তাদের কারও হাতে বাজি-পটকা, কারও হাতে আবির। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হতেই উচ্ছ্বাসে মাতল গোটা এলাকা। মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে ব্যাটারি সংযোগে চালু রঙিন টিভির পর্দায় তখন চোখ বাংলাদেশের ওই ছিটমহলের ক্রিকেটপ্রেমী বাসিন্দাদের। ভারতের জয়ের প্রার্থনায় স্লোগান উঠল বারবার। আর দিনের শেষে চলল অকাল হোলিও।

উদ্বেগ-উত্‌কন্ঠা থেকে উচ্ছ্বাস। দিনভর নানা রঙ বদলের পর অবশ্য বড় ব্যবধানে জিতেই সেমিফাইনালে পৌঁছায় ভারত। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই মশালডাঙার মতো বাংলাদেশের অন্য ছিটমহলেও শুরু হয়ে যায় উত্‌সব। মিষ্টিমুখের পালাও। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা মনেপ্রাণে ভারতীয় হয়ে গিয়েছেন। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ভারতের দিকে তাঁদের সমর্থন রয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হলেও তাঁদের ওই সমর্থন বদলায়নি। ভারতের জয় বাংলাদেশের ছিটমহলের সমস্ত বাসিন্দার কাছে তাঁদের আবেগ ও ভালবাসার জয়।”

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের মোট ১৬২টি ছিটমহল রয়েছে। তার মধ্যে ভারতের ছিটমহল ১১১টি। বাংলাদেশের ৫১টি। দুই দেশের ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা ৫১ হাজারেরও বেশি। কোনও ছিটমহলেই বিদ্যুত্‌, পানীয় জল, রাস্তা, চিকিত্‌সার ন্যূনতম পরিষেবা মেলেনা বাসিন্দাদের। বিনোদন বলতে মূলত রেডিও। হালে হাতেগোনা কিছু সাদাকালো টিভি অবশ্য এসেছে। তাই যেখানে সম্ভব হয়েছে রঙিন টিভি ভাড়া করে ব্যাটারি চালিত ওই টিভি ডিস বসিয়ে চালান হচ্ছে। সেইসঙ্গে চলে মোবাইল হাতে ‘ফেসবুক আপডেট’। ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছবি দিয়ে কেউ পোস্ট দেন, কে জিতবে? বাংলাদেশি ছিটমহলের একাধিক বাসিন্দা ‘কমেন্ট’ দিয়েছেন ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া কিংবা ভারত।

মশালডাঙার জয়নাল আবেদিন বলেন,“খেলার শুরুতে কয়েকটা বাজিপটকা ফাটান হলেও দুই উইকেট পড়তেই চিন্তায় সবার মুখ প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। রোহিত, রায়না, জাডেজারা অবশ্য শেষপর্যন্ত আমাদের সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।” বাংলাদেশি ছিটমহল পোয়াতেরকুঠির হাবিবর রহমানের বাড়িতে এলাকার একমাত্র সাদাকালো টিভিতে এদিনের ম্যাচ দেখতে হাজির এলাকার বাসিন্দারাও উচ্ছ্বাসে মাতেন। রহমান আলি নামে এক বাসিন্দার কথায়, “জাডেজার মারকুটে ব্যাটিংয়ের সময় সবথেকে বেশি আনন্দ হচ্ছিল। তিনশো পার করায় ভারতের জয় নিয়ে তেমন সংশয় ছিলনা। বাংলাদেশের প্রতিটি উইকেট পড়ার সময় বাজি ফাটিয়েছি।” এলাকার বাসিন্দাদের কয়েকজনের কথায়, “স্বীকৃতি না পেলেও আমরা বাংলাদেশের মাটিতে বসবাস করছি এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তারপরেও বিশ্বকাপে ভারতকে সমর্থন করছি। ভারত জেতায় সবাই ভীষণ খুশি হয়েছি। ছিটমহল বিনিময় হলে স্বীকৃত নাগরিক হিসাবে ভারতকে সমর্থনের স্বপ্ন দেখি আমরা সবাই।”

arindan saha cooch behar Chitmahal India-Bangladesh Cricket Match celibration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy