Advertisement
২১ মে ২০২৪

ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে চিড়

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুরবোর্ড গঠনের পরও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের মতবিরোধ তুঙ্গে উঠল। বুধবার মালবাজার পুরসভার নতুন বোর্ড গঠনের পর কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম বৈঠক ডাকা হয়। এই বৈঠকেই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে বলে ১৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরই জানানো হলেও তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর এই বৈঠক বয়কট করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুরবোর্ড গঠনের পরও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের মতবিরোধ তুঙ্গে উঠল। বুধবার মালবাজার পুরসভার নতুন বোর্ড গঠনের পর কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম বৈঠক ডাকা হয়। এই বৈঠকেই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে বলে ১৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরই জানানো হলেও তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর এই বৈঠক বয়কট করেন। এ দিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপা সরকারকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনীত করা হয়। ওই পদে দীপাদেবীকে বসানোয় প্রবল আপত্তি তিন তৃণমূল কাউন্সিলরের। সে কারণেই তাঁরা এ দিনের সভা বয়কট করেন বলেও জানিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, মালবাজার টাউন তৃণমূল কমিটির সভাপতি মানসকান্তি সরকারের স্ত্রী দীপাদেবী এ বারই প্রথম প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। অন্য দিকে মানসকান্তিবাবু ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী মিঠু মুখোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান। নিজে জিততে না পারলেও যাতে পুরসভাতে কর্তৃত্ব অটুট থাকে সে কারণেই স্ত্রীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন মানসবাবু। এমনই অভিযোগ বিক্ষুদ্ধ কাউন্সিলরদের। ৬, ১২ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর রূপক সিংহ, পুলিন গোলদার এবং উৎপল ভাদুড়ি এ দিন সভায় না এসে তৃণমূলের টাউন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে সুর চড়ান। পরপর দু’বারের জয়ী প্রার্থী উৎপল ভাদুড়িকেই ভাইস চেয়ারম্যান করা হবে, দলের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যাওয়াতে তাঁরা ক্ষোভ দেখান।

৬ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর রাজু সিংহ এবং পুলিন গোলদারের কথায়, ‘‘সর্বসম্মতি ক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া উচিত হলেও আমাদের সঙ্গে এক বারও আলোচনা করা হয়নি। ভাইস চেয়ারম্যান পদে যদি মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে তা হলেও একাধিক মহিলা কাউন্সিলর ছিলেন, তাঁরা দীপাদেবীর থেকে অনেক বেশি বার ভোটে জয়ী হয়ে এসেছেন।’’ যাঁকে ভাইস চেয়ারম্যান না করায় এই ক্ষোভ সেই উৎপল ভাদুড়ির কথায়, ‘‘টাউন কমিটির নেতারা আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমি পদলোভী নই কিন্তু পদ আঁকড়ে যাঁরা থাকতে চান আমি তাঁদের বিরুদ্ধে, সে কারণেই সভায় উপস্থিত হইনি।’’

তবে তৃণমূলের জেলা এবং রাজ্য কমিটির নির্দেশ মেনেই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছে বলে জানান মালবাজারের তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্বপন সাহা। তিনি বলেন, ‘‘তিন কাউন্সিলর কেন উপস্থিত ছিলেন না তা জানি না। তবে জেলা এবং রাজ্যস্তরের নির্দেশেই দীপা সরকারকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে।’’ দীপাদেবীর স্বামী মানসকান্তিবাবুর কথায়, ‘‘দল দীপাকে দায়িত্ব দিয়েছে। এর পেছনে আমার কোনও প্রভাব নেই।’’

যাঁকে ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক সেই দীপাদেবী অবশ্য নতুন দায়িত্ব পেয়ে খুশি। ‘‘নাগরিক পরিষেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।’’ এর বাইরে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রতি ওয়ার্ডের মানুষের আস্থাকে মর্যাদা দিতেই দীপাদেবীকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। মানসবাবুও দীর্ঘ দিন টাউন তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। এ বার তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে জয়ী কাউন্সিলরদের কাউকেই টাউন সভাপতি করা হবে।’’

এ দিকে এ দিনের বৈঠকে অনুপস্থিত কাউন্সিলর পুলিন গোলদারের আরেক মন্তব্যেও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ দিন পুলিনবাবু বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও যদি আমাদের মতামতের দাম না থাকে তাহলে পুরবোর্ডের নতুন সমীকরণের কথাও ভাবতে বাধ্য হব। কারণ মনে রাখতে হবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’’ আর এর পরেই জল্পনা বেড়েছে শহরে। ১৫ ওয়ার্ডের মালবাজার পুরসভায় তৃণমূলের দখলে রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড। অন্য দিকে বামফ্রন্ট ৪টি ও কংগ্রেস ২টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে। তাই পুরসভার প্রথম বৈঠকেই তৃণমূলে যে চিড় ধরল, তা বড় হলে বোর্ডের ভবিষ্যত যে টলমল করে উঠবে তা নিশ্চিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE