ফের গত বিধানসভা নির্বাচনের জোট-বিভ্রাটের পুরনো চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে মালদহের মালতিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলেও জেলার একমাত্র মালতিপুর আসনে জোট প্রক্রিয়া ধাক্কা খেয়েছিল। জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য আলবেরুনি সেখানে নির্দল হয়ে লড়েছিলেন। সে বার জেলা নেতৃত্বের বিরোধিতা করেই আলবেরুনিকে দাঁড় করিয়েছিলেন স্থানীয় নেতৃত্ব। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলের তরফে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মহানন্দা পাড়ের মালতিপুরে রীতিমতো লড়াই করেই হেরেছিলেন আলবেরুনি। ছয় হাজার ভোটে আলবেরুনিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন আরএসপির আব্দুর রহিম বক্সি। নেতৃত্বের সমর্থন পেলে সেবার জয় নিশ্চিত ছিল বলে এখনও আফসোস করেন কংগ্রেস নেতারা।
এ বার বামেদের সঙ্গে জোটের কথা হাওয়ায় ভেসে উঠলেও ওই কেন্দ্রে জট কাটছে না। জয়ী আসন ছাড়তে অনড় আরএসপি এ দিন থেকেই আব্দুর রহিম বক্সিকে প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছে। তেমনই কংগ্রেসও ওই আসনে তাদের প্রার্থী দিচ্ছে বলে নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেরই ধারণা, গত বারের সেই পুরনো ছবিটাই ফিরতে চলেছে মালতিপুর কেন্দ্রে। বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কথা বলে আদতে ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থীকে জেতাতে চাইছে বলে কংগ্রেসকে বিঁধেছেন আরএসপি নেতৃত্ব। যদিও বিগত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখেই তারা ওই আসনে প্রার্থী দিচ্ছে বলে দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের।
জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুরের কথায়, ‘‘আমরা তো গাজলের জেতা আসন বামেদের ছেড়েছি। লোকসভায় বিধানসভা ভিত্তিক মালতিপুর আসনে বামেদের থেকে কংগ্রেস দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। তাই ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বামেরা তা না মানলে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।’’
যদিও কংগ্রেসের বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের প্রস্তাবে কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরে সুর চড়িয়েছে আরএসপি। দলের জেলা সম্পাদক গৌতম গুপ্ত বলেন, ‘‘নির্বাচনের ময়দানে লড়াই কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ হয় না। ওরা যা করছে তাতে তৃণমূলেরই সুবিধা।’’ তিনি বলেন, ‘‘গত বার কংগ্রেস ৪২টা আসনে জয়ী হয়েছিল। এবার তার প্রায় দ্বিগুণ আসন ওরা পাচ্ছে। বামেরা সেই উদারতা দেখিয়েছে। কিন্তু কোনও জয়ী আসন দাবি করব কেন, সেই উদারতা ওদেরও থাকা উচিত ছিল। আর গাজল তো কংগ্রেস আমাদের ছাড়েনি। সিপিএমকে ছাড়বে বলেছে। মালতিপুরে আমাদের প্রার্থীকে প্রচার শুরু করতে বলা হয়েছে।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে মালতিপুর বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭০৮১৫টি ভোট, বাম প্রার্থীর প্রাপ্য ভোট ছিল ৩৪৬৪৮ ভোট। যা কংগ্রেস প্রার্থীর তুলনায় অর্ধেকেরও কম। আর তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ২০১২৪টি ভোট। কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী নির্বাচনে লড়লে জয়ের প্রায় নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকলেও কেন সেখানে প্রার্থী দিতে মরিয়া কংগ্রেস? কেনই বা জয়ী আরএসপি প্রার্থীকে মেনে নিয়ে তারা জোটে অনাগ্রহী?
জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব পরিসংখ্যানের কথা বললেও স্থানীয় সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের পরে ওই বিধানসভা এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। চাঁচল-২ পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসের হাত থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। সবাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ভাঙন ধরেছে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতেও। শাসকদলের একাংশ কৌশলে, নরমে-গরমে কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য করাচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বের। আর এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় মূলত দলকে টিকিয়ে রাখতেই ওই আসনে প্রার্থী দিতে কংগ্রেস মরিয়া বলে দলীয় সূত্রের খবর।
যদিও ওই আসনে ফের জোটের জটকে ঘিরে কংগ্রেস-বাম, উভয় শিবিরেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলকে আটকানো যেখানে জোটের লক্ষ্য, সেক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নেমে প্রায় নিশ্চিত আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন উভয়পক্ষের স্থানীয় নেতাদের একাংশ।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ওই আসনের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের অবশ্য দাবি, ‘‘দল ছাড়তে তৃণমূল কাউকে বাধ্য করতে যাবে কেন! কে কী করছেন জানি না। ওই আসনে জয়ী হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। তা নিয়ে আমরা আশাবাদীও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy