Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিয়ে টিকিট, দাবি তৃণমূলেই

এবার টাকার বিনিময়ে পুরভোটে টিকিট দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী আবার তৃণমূলের একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। শুধু অভিযোগই নয়, দলের জেলা নেতৃত্ব এমনকী মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দলীয় দফতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির সামনে বসেই নির্দল প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন ওই ওয়ার্ড সভাপতি।

দলীয় কার্যালয়ে বসেই ক্ষোভ জানালেন দিলীপ বর্মন। —নিজস্ব চিত্র।

দলীয় কার্যালয়ে বসেই ক্ষোভ জানালেন দিলীপ বর্মন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

এবার টাকার বিনিময়ে পুরভোটে টিকিট দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী আবার তৃণমূলের একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি।

শুধু অভিযোগই নয়, দলের জেলা নেতৃত্ব এমনকী মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দলীয় দফতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির সামনে বসেই নির্দল প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন ওই ওয়ার্ড সভাপতি। সেই সঙ্গে অভিযোগ করে জানালেন, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, তিনি টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছেন। শিলিগুড়ি পুর এলাকার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের শুক্রবারের এই ঘটনায় শহর জুড়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ দিন দুপুরে তৃণমূল ভবনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই শহর জুড়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু করে গিয়েছিল। সাত সকালে মন্ত্রী বাড়ি ঘেরাও করার পর তালিকা ঘোষণার সময় পার্টি অফিসও ঘেরাও হয়। আর সন্ধ্যা নাগাদ ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভ, বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। ওই ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি দিলীপ বর্মনের অভিযোগ, “মন্ত্রী তথা জেলা সভাপতির জন্য এমনটা হল। গতকাল অবধি আমারই প্রার্থী হওয়ার ছিল। কিন্তু টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করা হল। যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে জমি জমা সংক্রান্ত অনেক অভিযোগও রয়েছে। আমার টাকা নেই, তাই পিছিয়ে পড়লাম।”

দিলীপবাবু জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে, অনুপ্রেরণায় মানুষের হয়ে কাজ করে গিয়েছি। আগামী দিনেও কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা আমাকে ভোটে দাঁড়াতে বলেছেন। আমি নির্দল হিসাবে দাঁড়াচ্ছি। ভোটের ফলই বলে দেবে এলাকার মানুষ আমাকে চান কি না।”

যদিও অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু। তাঁর বক্তব্য, “টিকিট না পেয়ে ওই সব মনগড়া কথাবার্তা বলা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে লড়াই করার ক্ষমতা দেখেই টিকিট দেওয়া হয়েছে। আর তৃণমূলের কেউ বা আমি টাকার জন্য রাজনীতি করি না। আর টাকা দিয়ে টিকিট এতো ভাবাই যায় না।” মন্ত্রী জানান, শাসক দলে টিকিটের জন্য ক্ষোভ বিক্ষোভ হয়ই। তিনি বলেন, “সবাইকে তো আর খুশি করতে পারব না। কিছু ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে, প্রচার পুরোদমে শুরু হলে সব মিটে যাবে।”

ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে জয়প্রকাশ চহ্বাণকে। যিনি এলাকায় হিম্মত সিংহ চহ্বাণ নামে পরিচিত। দলীয় সূত্রের খবর, দিলীপবাবু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করেন। সে তুলনায় জয়প্রকাশবাবু নবীন তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে জমিজমা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ওয়ার্ডটি অবশ্য গত পুরবোর্ডে কংগ্রেসের দখলে ছিল। এক সময়কার সিপিএম নেত্রী ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হতেই ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলের প্রার্থী। আবার সিপিএমের হয়ে এলাকায় দাঁড়িয়েছেন দলের শিলিগুড়ির জোনাল সম্পাদক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্ত। লাগোয়া মুকুলবাবুর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি ওই ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে ওই ওয়ার্ডের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় দিলীপবাবু নির্দল হিসাবে ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলেই দলের একাংশ নেতা মনে করছেন।

তবে দিলীপবাবু যে মারাত্মক অভিযোগ করেছেন তাতে তৃণমূলের অন্দরে কী চলছে, তার কিছুটা প্রকাশ্যে এসেছে বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল অন্দরে টাকার সংস্কৃতি চলছে। সারদা থেকে এসজেডিএ সর্বত্র তাই দেখা যাচ্ছে। নাগরিক পরিষেবা নয়, ভোটে দিতে টাকা রোজগারই তৃণমূলের একাংশের এখন উদ্দেশ্য। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড এর ব্যতিক্রম নয়।” অশোকবাবু জানান, তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আছে বলে জানি। তিনি বলেন, “আর ভোটে আমাদের কিছু বলতে হচ্ছে না। তৃণমূলের একাংশ সত্যি কথা মানুষের সামনে এসে দিচ্ছেন। মানুষ বিচার করবেন।”

বিকালে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা হতেই অবশ্য জয়প্রকাশবাবু অনুগামীদের নিয়ে চম্পাসারি এলাকায় মিছিল করা শুরু করেন। সেখানই রাস্তা পাশে থাকা তৃণমূলের পার্টি অফিস তখন দিলীপবাবুদের দখলে ছিল। জয়প্রকাশবাবুও দিলীপবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা মামলা নেই। সবটাই মিথ্যা এবং মনগড়া। আসলে আমাদেরই কিছু লোক টিকিট না পেয়ে বিরোধীদের সুরে কথা বলছেন।” তাঁর দাবি, ওয়ার্ড থেকে চারজনের নাম প্রার্থী হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “দল মনে করছে, আমি কংগ্রেস, সিপিএমের বিরুদ্ধে যোগ্য প্রার্থী। তাই আমাকে টিকিট দিয়েছে।”

এদিনই সন্ধ্যায় পুর এলাকার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আরেক দল বিক্ষুব্ধ কর্মী তৃণমূলের পতাকা নিয়েই হিলকার্ট রোডে মিছিল বার করেন। তাঁদের প্রার্থী আলম খান টিকিট না পাওয়ায় তাঁরা জেলা নেতৃত্ব এবং মন্ত্রী গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE