হিমঘরে আলু রাখার জন্য লম্বা লাইন বালুরঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।
হিমঘরে আলু রাখতে গিয়ে নাজেহাল। এরই মধ্যে চাষিদের সামনে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিল আলুর বন্ড নিয়ে কালোবাজারি। হিমঘরে আলু রাখতে বস্তাপিছু বন্ডের দাম পাঁচ টাকা হলেও খোলাবাজারে ওই বন্ড ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়ে একশ্রেণির ফড়ে আলুর বন্ড নিয়ে ওই কালোবাজারি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চাষিদের অভিযোগ ওই ফড়েদের অধিকাংশ আলু চাষ করেন না। কিন্তু হিমঘরের শেয়ার থাকায় তারা বন্ড পেয়ে থাকেন। জেলা জুড়ে বহু সমবায় সমিতিরও শেয়ার রয়েছে। বাম আমলে চাঁচল মহকুমায় সামসি সমবায় হিমঘর তৈরির সময় চাষি নন, এমন লোকজনদেরও শেয়ার পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বিভিন্ন হাত ঘুরে সেই বন্ড নিয়ে কালোবাজারি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এরই জেরে আলু মজুত রাখা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। শেয়ারপ্রাপ্তদের একাংশের অবশ্য যুক্তি, বিনিয়োগের ভিত্তিতে তারা আলুর বন্ড পেয়ে থাকেন। যারা চাষ করেন না তারা তা অন্যকে দিয়ে দেন।
বন্ড হাতবদলের ওই ঘটনাকে বেআইনি বলে দাবি করে অবশ্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে হিমঘর কর্তৃপক্ষ। সামসি সমবায় হিমঘরের পরিচালন সমিতির নির্বাচন হলেও এখনও কমিটি তৈরি হয়নি। এখন হিমঘর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অব কো অপারেটিভ সোসাইটিজ দফতর (এআরসিএস)। মালদহের এআরসিএস সুবীর দত্ত বলেন, “এটা বেআইনি। যারা বন্ড নিয়ে কালোবাজারি করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া এধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে তা স্থানীয় বিডিওদের দেখতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” পরিচালন সমিতির প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অনুপ জায়সবালের দাবি, “আমাদের সময় বন্ড নিয়ে কালোবাজারি হত না। প্রকৃত চাষিরা যাতে সুযোগ পায় তা দেখা হতো।”
সামসি সমবায় হিমঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হিমঘরে ১০ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ১০০টি সমবায় সমিতি ছাড়াও ৭০০ চাষির ব্যক্তিগত শেয়ার রয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগকারীরা ১৮০ প্যাকেট আলুর বন্ড পান। প্রশাসনেরও হিমঘরে আলু রাখার কোটা রয়েছে। সেটা প্রশাসনের তরফেই চাষিদের বিলি করা হয়। চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, “আলুর বন্ড বিডিওদের দেওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রকৃত চাষিদেরই তা দেওয়া হচ্ছে।”
চাষিদের অভিযোগ, শুধু যে বন্ড চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তাই নয়, সামসি হিমঘরের বন্ড রয়েছে এমন একশ্রেণির ফড়ে বর্ধমান থেকে কমদামে আলু নিয়ে এখানে রাখছেন। তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকার চাষিরা। রতুয়ার শ্রীপুর এলাকার আলুচাষি মহম্মদ সাজাহান বলেন, “যাদের শেয়ার রয়েছে তাদের অনেকেই চাষি নন। এরা দালাল। সব পথঘাট জানে। ফলে আমাদের মতো চাষিদের হয় চড়া দামে বন্ড কিনতে হয়, না হলে আলু জলের দামে বেচে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।” এলাকার একাধিক চাষির দাবি, ফড়েদের চিহ্নিত করে তাদের শেয়ার বাতিল করে প্রকৃত চাষিদের নির্বাচিত করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy