Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অন্ডাল বন্ধের কথায় উদ্বেগে কোচবিহারও

এক দিকে আশা। অন্য দিকে নিরাশা। বিমান চলাচল নিয়ে আপাতত এমনই দোলাচলে কোচবিহারের মানুষ। মাস ছয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া অন্ডাল বিমানবন্দর বুধবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

কোচবিহার বিমানবন্দরে নামছে উড়ান। এই দৃশ্য আর দেখা যাবে কি না তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। — ফাইল চিত্র

কোচবিহার বিমানবন্দরে নামছে উড়ান। এই দৃশ্য আর দেখা যাবে কি না তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। — ফাইল চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৮:০২
Share: Save:

এক দিকে আশা। অন্য দিকে নিরাশা। বিমান চলাচল নিয়ে আপাতত এমনই দোলাচলে কোচবিহারের মানুষ।

মাস ছয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া অন্ডাল বিমানবন্দর বুধবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় একই সময় চালু হয়েছিল কোচবিহার বিমানবন্দর। তাই এই খবরে কিছুটা হলেও আতঙ্কিত কোচবিহার। অন্যদিকে অবশ্য এক ঘণ্টার উড়ানের ভাড়া আড়াই হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবে আশা দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।

চলতি বছরের প্রথমদিকে স্পিরিট এয়ারলাইনস নামে একটি সংস্থা কোচবিহারে বিমান চালাতে শুরু করে। মাস দুয়েক থেকে ওই বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধু এই সংস্থাই নয়, এর আগেও কোচবিহারে একাধিক সংস্থা বিমান চালানো শুরু করেও পরে পিছিয়ে যায়। কেন এই অবস্থা? এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করছেন বাসিন্দাদের অনেকেই।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য এ ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি জানান, আগামী ১৮ জুন কলকাতায় যাবেন তিনি। সেখানে বিমান সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। কোথায় অসুবিধে রয়েছে তা জেনে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। পাশাপাশি কোচবিহার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে বড় বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা নিয়েও আশাবাদী তিনি। মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এর পরে ওই সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হবে। কোথায় খামতি রয়েছে তা জেনে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করব। যতদিন না রানওয়ের দৈর্ঘ্য বড় হচ্ছে ততদিন ছোট বিমান চালু রাখার চেষ্টা করা হবে।” পাশাপাশি তাঁর আবেদন, “শুধু বিমান চলাচলের দাবি করলে হবে না, বিমানে উঠতেও হবে। সেই অভ্যেস তৈরি করতে হবে। বাসিন্দাদের তা বলেছি।”

অনেকেই অবশ্য অভিযোগ করেছেন, কোচবিহারে বিমান চলাচল নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। প্রয়োজন নেই এমন কিছু সিদ্ধান্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কোচবিহার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, “কোচবিহার থেকে কলকাতা সরাসরি বিমান চালানো প্রয়োজন। একটু বড় আকারের বিমান চলাচল করালে ভাল হয়। অন্ডালের মতো অবস্থা কোচবিহারের নয়। কোচবিহারে বিমানের যাত্রী রয়েছে। ভাড়া কম হলে সাড়া আরও ভাল পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।”

বিমান চলাচল নিয়ে আশাবাদী ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী। তিনি বলেন, “কোচবিহার থেকে বিমান একসময় চলত। তাই আমরা এ ব্যাপারে পুরোপুরি আশা রাখি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবস্যায়ী অবশ্য বলেন, “সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে দীর্ঘদিন বিমান চালানো সম্ভব নয়। তাই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো উচিত। না হলে অন্ডালের দশা এখানেও হবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহারে রাজ আমলে বিমানবন্দর তৈরি হয়। একসময় কোচবিহার থেকে নিয়মিত বিমান চলাচল করত। তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়। বহু বছর ধরে ওই পরিষেবা চালু নিয়ে টানাপড়েন চলছে। বাম আমলে বিমান চালু করার জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

২০১১ সালে একটি সংস্থা বিমান চলাচল শুরু করেও বন্ধ করে দেয়। ২০১৫ সালের মে মাসে পিনাকল এয়ারলাইনস নামে একটি সংস্থা বিমান চলাচল শুরু করে। দিন কয়েকের মধ্যে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্পিরিট এয়ারলাইনস সরকারি ভর্তুকিতে বিমান চালানো শুরু করে। সপ্তাহে চারদিন ওই বিমান চলাচল করে। প্রথমদিকে নিয়মিত ভাবে ওই বিমান চালানো হয়। জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে নানা অজুহাতে পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়। এর পরে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে অনিয়মিত ভাবে বিমান চালানো হয়। এপ্রিল থেকে তা টানা বন্ধ করে রেখেছে।

ওই সংস্থার কর্তারা দাবি করেন, অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে তাঁরা বিমান চালাচ্ছিলেন। সেই সংস্থা দু’ মাস ধরে বকেয়া দিচ্ছে না। তাই তাঁরা বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এই যুক্তি অবশ্য মানতে চান না বাসিন্দারা। যারা বিমানে যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন বলেন, “এসব ব্যাপারে আগে থেকেই চিন্তাভাবনা করা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andal Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE