নতুন দেশ, নতুন মাটিতে এ বছরই তাঁদের প্রথম দুর্গাপুজো। বাংলাদেশের ছিটমহলে থাকাকালীন প্রতি বছর ওঁরা দুর্গাপুজো করতেন। কিন্তু হলদিবাড়ি কৃষিফার্মের অস্থায়ী ক্যাম্পে সেই রেওয়াজে বাধ সাধল প্রশাসন। দুর্গাপুজো করতে পারবেন না জেনে মুষড়ে পড়েছেন সাবেক ছিটমহলের হলদিবাড়ির ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
মেখলিগঞ্জের মহকুমাশাসক অপ্রতিম ঘোষ বলেন, “ওঁরা এখন অস্থায়ী ভাবে যেখানে আছেন, সেটি সরকারি জায়গা। সেখানে আমরা কোনও মতেই পুজোর অনুমতি দিতে পারি না। সরকারি সম্পত্তিতে আমরা ধর্মাচরণ করতে দিতে পারব না।”
মহকুমাশাসকের কথা অবশ্য মানতে রাজি নন হলদিবাড়ির বিজেপি নেতা এবং জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “রাজ্যের অধিকাংশ পুজোই সরকারি রাস্তায় অথবা সরকারি জায়গায় হয়ে থাকে। সরকারি আবাসনগুলিতেও দুর্গাপুজো হয়। তা হলে হলদিবাড়ির কৃষি ফার্মের ক্যাম্পেও ওঁদের পুজো করতে দেওয়া উচিত। সরকারি সিদ্ধান্ত উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত।”
এ বিষয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান। তিনি বলেন, “আলাদা ভাবে কোনও মন্তব্য করব না। প্রশাসন যা ভাল মনে করবে তাই করবে।”
হলদিবাড়ির ছিটমহলবাসীদের ক্যাম্পের আধিকাংশ বাসিন্দা দহলাখাগরাবাড়ি এবং কোটভাজনি ছিটমহল থেকে এসেছেন। এই দু’টি ছিটমহল এলাকায় ওঁরা প্রতি বছর দুর্গাপুজো করতেন। দহলাখাগরাবাড়ির বাসিন্দারা জানান, লাগোয়া বাংলাদেশের সরকারপাড়া এবং ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দারাও পুজোয় যোগ দিতেন। বাংলাদেশের সাতোয়া গ্রাম থেকে কারিগর এসে মূর্তি বানাতেন। এক মাস ধরে সেই মূর্তি বানানোর কাজ চলত। ছিটমহলের পাশে বাংলাদেশের জমিতে পুরনো একটি পাকা মণ্ডপ ছিল। সেখানেই তাঁরা পুজো করতেন।
একদা দহলাখাগরাবাড়ি ছিটের বাসিন্দা হরি বর্মন, রঞ্জন রায়, পরেশ রায় বলেন, “ছিটমহলে থাকতে আমরা সবাই মিলে পুজোর ক’টা দিন আনন্দ করতাম। এক সঙ্গে প্রসাদ খেতাম। ভেবেছিলাম এখানে এসেও সেই ধারা বজায় থাকবে। কিন্তু এখানকার কড়া আইনকানুনের জন্য আমরা পুজো করতে পারছি না।”
দহলাখাগরাবাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে কোটভাজনি ছিটমহল। সেখানকার বাসিন্দারা বাংলাদেশের গাজোকাটি গ্রামের পুজোয় সক্রিয় ভুমিকা নিতেন। কোটভাজনি ছিটের একদা বাসিন্দা নিমাই রায়, কর্ম রায় বলেন, “আমরা সেখানে যে ভাবে পুজো করতে পারতাম, এখানে স্বাধীন নাগরিক হয়েও তা করতে পারছি না। এ বার সেই দুঃখেই পুজোর ক’দিন কাটাতে হবে।”
ছিটমহলে পুজোর সন্ধ্যায় ধুনুচি নাচ, ঢাকের আওয়াজ, বিসর্জনে দুই ছিটের মানুষ এক হয়ে শোভাযাত্রা করে করতোয়া নদীতে প্রতিমা ভাসান, এ সব ফেলা আসা দিনের স্মৃতিচারণ করেই এ বছর তাঁদের পুজোর দিনগুলো কাটবে সদ্য স্বাধীন এই নাগরিকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy