Advertisement
২১ মে ২০২৪
পাহাড়ে রক্তপাত

সংঘর্ষ মৃত্যু আতঙ্ক

অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের ফতোয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হোটেল। বন্ধ অধিকাংশ দোকান। পিঠে রেক্সিনের ব্যাগ নিয়ে চড়াই ভেঙে অনেকটা হেঁটে উঠে খিদের জ্বালায় রাস্তার এক পাশেই বসে পড়েছিলেন সোনম। চৌরাস্তার পাশে একটি বাড়িতে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন।

উদ্বেগ: ফেরার অপেক্ষায়। দার্জিলিঙে। ছবি: সন্দীপ পাল

উদ্বেগ: ফেরার অপেক্ষায়। দার্জিলিঙে। ছবি: সন্দীপ পাল

প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০২:৩২
Share: Save:

আর পাঁচটা দিন ভোর চারটে থেকেই চকবাজারে হাঁকডাক শুরু হয়ে যায়। খুলে যায় চায়ের দোকান। গত পাঁচ বছর ধরে দার্জিলিংকে এমনই দেখেছেন সোনম প্রধান। এইচডি লামা রোডের একটি হোটেলে কাজ করেন তিনি।

শনিবার সকাল সাতটায় চকবাজারে চলে এসেছিলেন বছর ত্রিশের এই যুবক। সুনসান চকবাজারে তখন শুধুই পর্যটকদের লাইন। সকলেই বাস ধরার অপেক্ষায়। অশান্তির ভয়ে পর্যটকদের মতো দার্জিলিং ছাড়তে চান সোনমও। কিন্তু প্রায় চার ঘণ্টা লাইন দিয়েও বাস পাননি। সোনমের কথায়, ‘‘নিরাপদে ফেরা তো দূরের কথা। হঠাৎ শুনি সিংমারিতে নাকি গুলি চলছে। পুলিশ সকলকে ফাঁকা করে দিল। এমন দার্জিলিং আগে দেখিনি।’’

অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের ফতোয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হোটেল। বন্ধ অধিকাংশ দোকান। পিঠে রেক্সিনের ব্যাগ নিয়ে চড়াই ভেঙে অনেকটা হেঁটে উঠে খিদের জ্বালায় রাস্তার এক পাশেই বসে পড়েছিলেন সোনম। চৌরাস্তার পাশে একটি বাড়িতে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। সোনম বলেন, ‘‘ওই খিচুড়ি না পেলে খালি পেটেই থাকতে হতো। আগামীকাল বাসের জন্য আবার লাইন দেব।’’ সোনম যখন এ কথা বলেছেন, তখনও তিনি জানতেন না আজ রবিবার চকবাজারে মৃত সমর্থকদের দেহ নিয়ে জমায়েত করার কথা ঘোষণা করেছেন মোর্চা নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: বনধ ডাকার জন্য জিটিএ’র কাছে এ বার ক্ষতিপূরণ চাইল রাজ্য

এ দিন দুপুর পর্যন্ত চকবাজার থেকে কোনও বাস ছাড়েনি বলে পর্যটকদের অভিযোগ। আতঙ্কের পরিবেশেই লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে সবাইকে। জজবাজারের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তখনও হাফাচ্ছিলেন প্রশান্ত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎই শুনছি সিংমারিতে নাকি গুলি চলছে। কোনওমতে পালিয়ে বাঁচলাম।’’

চার দিন ধরে ম্যাল প্রায় সুনসান। দু’বেলা সেখানে বাদামভাজা বিক্রি করে দিন চলে মুন্না রায়ের। এ দিন সকালে চকবাজারে বাসের জন্য লাইন দেখে সেখানে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে ফেরি করছিলেন। আচমকাই গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। পুলিশের হইহই চিৎকার। অন্যদিকে, মোর্চার স্লোগান। মুহূর্তের মধ্যে হুড়োহুড়ি। চকবাজার খালি করে দিতে পুলিশের তাড়া। ছোটাছুটির সময়ে কারও ধাক্কায় উল্টে গেল বাদামের ঝুড়ি। মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়ে ফের ছুটতে শুরু করেন মু্ন্না। অনেকটা দূরে ক্লাবসাইড রোডে একটা লম্বা সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে ২৬ বছর বয়সী বাদামওয়ালা কাঁদছিলেন। জুতো পালিশের সরঞ্জাম কাঁধে নিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মিথিলা রায়। তিনি চকবাজারে ঢোকার মুখে পালিশের কাজই করেন। মিথিলা বললেন, ‘‘আমরা দিন আনি দিন খাই। দু-চারদিন সময় দিয়ে লাগাতার বন্‌ধ হলে না হয় আলু-পেঁয়াজ-চাল-আটা জমিয়ে রাখতাম। সেই সুযোগটাও পাইনি বলে ঝুঁকি নিয়ে বার হয়েছিলাম। তবে ২৭ জুনের আগে আর বার হব না।’’

২৭ জুন থেকে তিন দিন বন্‌ধ শিথিল। সেও প্রায় ৯ দিন বাকি। এতদিন কী ভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তার নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠেছে দার্জিলিংয়ের অনেক পরিবারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE