E-Paper

কাটা বাঁশে জমে থাকা জল নতুন করে বাড়াচ্ছে চিন্তা

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে। শিলিগুড়িতে সংখ্যাটা দু’শো ছুঁতে চলেছে। চলতি মাসে শিলিগুড়িতে আক্রান্ত শতাধিক।

সৌমিত্র কুণ্ডু , অর্জুন ভট্টাচার্য  

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৭
বৃষ্টির জমা জলে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতাল চত্বরের প্রতিচ্ছবি। 

বৃষ্টির জমা জলে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতাল চত্বরের প্রতিচ্ছবি।  —নিজস্ব চিত্র।

পুজোর মুখে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে বিপদের আশঙ্কা। পুজোর প্যান্ডেল বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির কারণে মাটিতে ও প্যান্ডেলের বাঁশে এবং বাঁশ কেটে নেওয়া ঝোপের বাঁশে জল জমে ডেঙ্গির সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে খবর, শিলিগুড়িতে সমীক্ষক দল কয়েকটি জায়গায় বাঁশের মাথায় জমে থাকা জলে ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা পেয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে যত্রতত্র জল জমে থাকার ঘটনা আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। প্যান্ডেলের জায়গায় পড়ে থাকা বাঁশের টুকরোতেও অনেক সময় জল জমে থাকছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সর্তক করা হয়েছে ক্লাব এবং পুজোর উদ্যোক্তাদের। জলপাইগুড়িতেও জমা জল সাফাই করা এবং মণ্ডপে ও বাঁশের ঝোপে নজরদারিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক বলেন, ‘‘বৃষ্টির কারণে জল জমে থাকার সমস্যা বাড়বে। কিন্তু কোথাও যাতে জল জমে না থাকে, তা দেখতে হবে। পুজোর উদ্যোক্তাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্যান্ডেল চত্বরে বাঁশের মাথায় বা কোথাও যাতে জল জমে না থাকে, তা যেন দেখা হয়।’’ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন বলেন, ‘‘আগামী দু’দিন জেলার সব ব্লক ও পুর এলাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। জমা জল সাফাইয়ে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ঝোপ থেকে বাঁশ কেটে নেওয়ার পরে পড়ে থাকা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা জল সাফাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে। শিলিগুড়িতে সংখ্যাটা দু’শো ছুঁতে চলেছে। চলতি মাসে শিলিগুড়িতে আক্রান্ত শতাধিক। সোমবার নতুন করে পাঁচ জনের দেহে ডেঙ্গির সংক্রমণ মিলেছে। তার মধ্যে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত তিন জন। তিন এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে আরও দু’জনের দেহে সংক্রমণ মিলেছে। রবিবার আরও চার জনের দেহে ডেঙ্গির সংক্রমণ মিলেছিল। তার মধ্যে দুই, আট, ১৬ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত মিলেছে। পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির সংক্রমণ বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ ছাড়িয়েছে। জ্যোতিনগর এলাকায় সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটছে। পুরসভার৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সংক্রমণ দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। পতঙ্গবিদ এবং ভেক্টর কন্ট্রোল টিমের তরফেও ওই ওয়ার্ডে নজরদারি শুরু হয়েছে।

জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছাড়াতে চলেছে। গত বছর এই জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৯০৮। ডেঙ্গিতে গত বছর জেলায় মৃত্যু হয়েছিল চার জনের। হাটেবাজারে জমা জল সাফাইয়ের কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। জেলায় বেশ কয়েকটি অব্যবহৃত কুয়োর জলে মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। জল জমে থাকছে গাড়ি মেরামতির গ্যারাজেও। জেলা সদর হাসপাতাল চত্বরের নিকাশি নালার জমা জলেও মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে বলে খবর।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশা ডেঙ্গির বাহক। গ্রামাঞ্চলে বাঁশঝাড়ে জমা জলে এ ধরনের মশা জন্মাত। গত কয়েক বছরে শহর এলাকাতেও এই মশার দাপট বেড়েছে। কাটা বাঁশে জমা জলে ডেঙ্গির বাহক মশা জন্মানোর প্রবণতা বেশি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গির উপসর্গে এ বছর খানিকটা তফাত দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গি আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেরই প্রথমে জ্বর থাকছে না। ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন অনেকে। এই ধরনের অনেক রোগীর ডেঙ্গি পরীক্ষার পরে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। এই অবস্থায় রোগীদের ‘কমপ্লিট ব্লাড কালচার’ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Siliguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy