আজ কি রোববার? উত্তরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে রোববারের সেই চেনা ভিডে়র ছবিটাই দেখা গেল না।
আলিপুরদুয়ার জংশন সব্জি বাজারের দোকানদার বিকাশ বসাক জানান, অন্য রবিবার যা বেচাকেনা হয়, এ দিন তার সিকি ভাগও হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চিন্তায় পড়েছি সামনের সপ্তাহে বাজারের কী হাল হবে। এখন তাও চলছে। এ বার লোকে দু’হাজার টাকা নিয়ে বাজার করতে আসবে।’’ ১০০ টাকার নোট প্রায় অমিল। পিন্টু দাস জানান অন্য রবিবার তিন থেকে চারটি পাঁঠা কাটেন। সবটাই বিক্রি হয়ে যায়। বাজার খারাপ হবে আগে থেকেই আন্দাজ করে এ দিন মাত্র একটি পাঁঠা কেটেছিলেন। তাও পুরোপুরি বিক্রি হয়নি। জলপাইগুড়ির দিনবাজারের মাংস বিক্রেতা মহম্মদ নৌসাদ প্রতি রবিবারে কম করে ১৫টা পাঁঠার মাংস বিক্রি করেন। এ দিন মাত্র পাঁচটা কেটেছেন। জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারের মাংস বিক্রেতা নিতাই দাস এ দিন মাত্র দু’টি পাঠার মাংস বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছেন। অন্য রবিবার কম পক্ষে সাতটি পাঠার মাংস বিক্রি করেন। মালদহর বিভিন্ন বাজারে ইলিশ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, আড় মাছ ২০০ টাকা কেজি, রুই ১৮০ টাকা, কাতল ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যদিও গত সোমবারই ইলিশ ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ টাকা, আড় ৩৫০ টাকা, কাতল ২৮০ টাকা এবং রুই ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
বালুরঘাটে অবশ্য খুচরো মাছ এবং সব্জি বাজারে পুরনো ৫০০ টাকার নোটে লেনদেন করে নজির গড়লেন ব্যবসায়ীরা। তবে কমপক্ষে ২০০ টাকার বাজার ক্রেতাদের করতে হয়েছে। তাতে খুশি শহরবাসী। মুদি এবং ওষুধের দোকানেও ৫০০ টাকার নোট এ দিনও চলেছে। পেট্রোলপাম্প মালিকেরা জানান, কমপক্ষে ৩০০ টাকার তেল নিলে তাঁরা ৫০০ টাকার নোট নিতে আপত্তি করছেন না। তবে সমস্যায় পড়েছিলেন খুচরো মাছ বিক্রেতারা। বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরেরাম সাহা জানান, অধিকাংশ খুচরো ব্যবসায়ীর পক্ষে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে পুরনো ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট জমা করার মতো সময় নেই। ফলে ওই সমস্যা আড়তদারেরা কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন। মুদি, সবজি ও মাছ-মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ৫০০ এবং হাজারের নোট নিয়ে সহায়তা করছেন। তাতে সাধারণ ক্রেতারাও উপকৃত হচ্ছেন। তাতে বাজারের দামেও ফারাক পড়েনি।
কিন্তু পাশের জেলার চাঁচলে খুচরো চলেনি। রবিবারের বাজার কার্যত মাটি হল ধুবুরির সব্জি, মাছ বাজারও।
একই অবস্থা কোচবিহারেও। মাছ, মাংস ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, শুধু ভবানীগঞ্জ বাজারে অন্য রবিবারে গড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার খুচরো ব্যবসা হয়। এ দিন তার তুলনায় অন্তত তিন লক্ষ টাকার কম ব্যবসা হয়েছে। রবিবার দিনহাটা বাজারে সব্জি, চাল, মাছ, মাংস, গালামাল সামগ্রী মিলিয়ে খুচরো ও পাইকারি ব্যবসা হয় গড়ে ১০ কোটি টাকার। এ দিন ওই অঙ্ক কমে দাঁড়িয়েছে বড়জোর দু’কোটি টাকায়। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামী বলেন, “রবিবার অন্তত ৮০ শতাংশ কম ব্যবসা হয়েছে।”
জলপাইগুড়ির দিনবাজারের খুচরো মাছ ব্যবসায়ীরা ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট নেওয়া রবিবার থেকে বন্ধ করেছেন। কারণ পাইকারী মাছ ব্যবসায়ীরা বড় নোট নিতে চাইছেন না। দিনবাজার খুচরো মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অশোক শা বলেন, “রবিবার অন্য দিন যা ব্যবসা করি, এ দিন তার অর্ধেক ব্যবসা হয়েছে। এখন টাকার আমদানি কমে যাওয়াতে ভিন রাজ্য থেকে পাইকাররা মাছ আনতে পারছেন না।”
মালদহে আবার দাম কমলেও নেই কেনাকাটার হিড়িক। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘কেন্দ্রের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে বাজারে খুচরোর জোগান বেশি মজুত রেখে পাঁচশো ও হাজারের নোট অচল করা হলে ব্যবসায়ীদের তেমন ক্ষতির মুখে পড়তে হত না। কাঁচামালের ব্যবসায়ীদের অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
রায়গঞ্জেরও মোহনবাটী ও বন্দর বাজারে রবিবার কেনাকাটা অনেক কম হয়েছে। মোহনবাটী বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী কমলেশ্বর সাহার দাবি, প্রতি রবিবার এক এক জন ব্যবসায়ী অন্য রবিবারে যা ব্যবসা করেন, এ দিন তার অর্ধেক করেছেন। সব্জি ব্যবসায়ী গড়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার সব্জি বিক্রি করেন। এ দিন এক এক জন গড়ে ২ থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি সব্জি বিক্রি করতে পারেননি।