খবর পেয়েছিলেন ছেলে ফিরে আসছে। কাঠমান্ডু থেকে নকশালবাড়ি ফিরে দুপুরে ফোনও করেছিলেন। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সন্ধ্যার ট্রেনে হলদিবাড়ি ফিরে আসার কথা থাকলেও রাত গড়িয়ে পরদিন সকাল পর্য্যন্ত ছেলের দেখা না পেয়ে হলদিবাড়ি থানার পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা নিশিকান্ত সরকার।
হলদিবাড়ি থানা থেকে সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় নকশালবাড়ি থানায়। অবশেষে সেই ছেলে দীপঙ্কর সরকার বুধবার বিকেলে বাড়ি ফিরলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল তাঁর পরিবার। কাঠমান্ডু থেকে ঘরে ফেরা দীপঙ্করকে সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তাড়া করছে। বেশি কথা বলতে পারছেনা দীপঙ্কর। জানালেন এখনও শরীর খারাপ লাগছে তাঁর।
বাড়ি ফিরে দীপঙ্কর জানায়, নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার বদলে উল্টো দিকের একটি ট্রেনে উঠে তারা বিহারে চলে যায়। বুধবার সকালে আবার ট্রেন ধরে দুপুরে শিলিগুড়ি এসে পৌঁছোয়। তার সঙ্গী কাদোবাড়ির বাসিন্দা অচিন্ত্য সরকারও বাড়ি ফিরেছেন।
গত ডিসেম্বর মাসে দীপঙ্করকে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় অচিন্ত্য সরকার কাঠমান্ডুতে একটি সোনার দোকানে কাজ করতে নিয়ে যান। ঘরে ফিরেও দুঃসপ্নের সেই দিনটির কথা ভুলতে পারছেন না তিনি। বিশেষ করে বাড়ি ভেঙে তার মালিকের মৃত্যুর দৃশ্য এখনও চোখে ভাসছে।
২৫ তারিখ ঘটনার দিন দীপঙ্কর এবং আরও তিনজন দোকান লাগোয়া কারখানায় কাজ করছিলেন। আচমকা গোটা বাড়ি কেঁপে উঠতেই তারা সবাই ছুটে বাইরে বার হয়ে আসেন। দোকানের মালিক এবং অন্যান্য কর্মীরাও বাইরে চলে আসে। ভূমিকম্পের জোর কমে গেলেও তারা দোকানে ঢোকেনি। বাইরেই দাঁড়িয়েছিল। আশেপাশের বাড়িঘর ধসে পড়ে গেলেও তাদের দোকান সমেত তিনতলা বাড়িটি তখনও অক্ষত ছিল। বাড়ির সমস্ত বাসিন্দা তখন বাইরে বার হয়ে এসেছেন।
এমনসময় দোকানের মালিক অভিজিত বাজাজ দোকান থেকে সমস্ত সোনা বার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাকে সহায়তা করার জন্য কর্মচারীদেরও অনুরোধ করেলেন। দীপঙ্কর জানায় তারা যেতে পারেনি কারণ তখনও মাঝে মাঝেই মাটি কেঁপে উঠছিল। দীপঙ্কর বলেন,“চারিদিকে তখন ধ্বংসস্তুপ। মানুষের হাহাকার। তখন আমরা যেতে রাজি হইনি। মালিককেও আমরা দোকানে ঢুকতে বারণ করেছিলাম। তিনি শুনলেন না। তিনি দোকানে ঢুকলেন। তারপরই আবার মাটি কেঁপে উঠলো। আমাদের চোখের সামনে গোটা বাড়িটা ভেঙে পড়লো। মালিক সেই ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে গেলেন।”
সেই ধ্বংসস্তুপের শহরে খোলা আকাশের নীচে মাঠের মধ্যে একরাত কাটিয়ে পরদিন তারা রওনা দেন শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy