Advertisement
E-Paper

বাম নেতাদের ধমক জেলাশাসকের, নালিশ বালুরঘাটে

পুরভোটে গঙ্গারামপুরের পরিস্থিতি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে গত লোকসভা ভোটের অনিয়মের প্রসঙ্গ তোলায় জেলাশাসক ‘অশোভন’ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক সহ আরও তিন জেলা নেতা। জেলাশাসকের কাছে কার্যত ধমক খেয়ে তাঁরা চরম অপমানিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান বলে নালিশ উঠেছে। তাঁদের দাবি, জেলাশাসক বলেছেন, রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়ে মানুষ ঠিক মতো ভোট দিতে পারত না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬

পুরভোটে গঙ্গারামপুরের পরিস্থিতি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে গত লোকসভা ভোটের অনিয়মের প্রসঙ্গ তোলায় জেলাশাসক ‘অশোভন’ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক সহ আরও তিন জেলা নেতা। জেলাশাসকের কাছে কার্যত ধমক খেয়ে তাঁরা চরম অপমানিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান বলে নালিশ উঠেছে। তাঁদের দাবি, জেলাশাসক বলেছেন, রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়ে মানুষ ঠিক মতো ভোট দিতে পারত না। পর সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক জন জেলাশাসক এ ভাবে কথা বলতে পারেন, তা ভাবতেও পারিনি।’’

শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে জেলাশাসকের কামরায় ওই ঘটনার পর সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস, জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর বিরুদ্ধে অশোভন, অসৌজন্য ও উত্তেজনামূলক আচরণের অভিযোগ তোলেন। নারায়ণবাবুর অভিযোগ, গঙ্গারামপুরে সুষ্ঠুভাবে পুরভোটের দাবি জানাতে গিয়ে উল্টে বাম আমলে ভোটের সময় সন্ত্রাসের অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে জেলাশাসক আমাদের ধমকান।

সিপিএম জেলা সম্পাদকের দাবি, ‘‘আমাদের আমলে কী ভাবে ভোটে অনিয়ম ও সন্ত্রাস হতো তা তুলে জেলাশাসক কটাক্ষ করেন। যাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে তৃণমূল করেন তাঁরাও ওই ধরনের আচরণ করে এমন ভাবে কথাবার্তা বলেন না।’’ নারায়ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা ব্যক্তির কাছে নালিশ জানাতে যাইনি। গিয়েছিলাম চেয়ারের কাছে। উনি জেলাশাসক, জেলা নির্বাচনী আধিকারিক। ওই ধরণের আচরণ আমরা আশা করিনি।’’ বিষয়টি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানাবেন বলে সিপিএম জেলাসম্পাদক জানিয়েছেন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘নারায়ণবাবুদের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করা হয়নি। বরং তাঁরাই গত লোকসভা ভোটে গঙ্গারামপুরের শুকদেবপুর এলাকায় নিরপেক্ষ ভাবে ভোট হয়নি বলে অভিযোগ তুলে সরব হলে আমি বলেছি, মিথ্যা কথা বলবেন না। আপনাদের আমলে কীভাবে ভোট হতো সব জানা আছে। থানা গুলিকে আপনারা পার্টি অফিসে পরিণত করেছিলেন বলে নারায়ণবাবুদের মনে করিয়ে দিয়েছি।’’ জেলাশাসকের দাবি, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে শুকদেবপুরের প্রতিটি বুথে আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছিল। তার সমস্ত নথি আছে।’’

এদিন আগাম সময় চেয়ে নিয়ে গঙ্গারামপুরে পুরভোটে শাসক দলের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের কাছে দুপুর ২টা নাগাদ স্মারকলিপি দিতে যান সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী, জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অমিত সরকার এবং এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক কল্যাণ দাস। জেলাশাসকের কামরায় ঢুকলে তাদের চেয়ারে বসতে বলা হয়। এর পর সিপিএম নেতৃবৃন্দ আসন্ন গঙ্গারামপুরে অবাধ পুরভোটের দাবি তুলে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চান। জেলাশাসক তাপসবাবু বলেন, ‘‘প্রথম দিকে নারায়ণবাবুদের কথাবার্তা ঠিক ছিল। খানিক পরে নারায়ণবাবুর পাশ থেকে একজন বলে ওঠেন, এ জেলায় গত পঞ্চায়েত ভোট নিরপেক্ষভাবে হয়নি। সে সময় আমি দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলাশাসকের দায়িত্বে ছিলাম না বলে জানালে, তাঁরা অভিযোগ করেন গত লোকসভা ভোটে শুকদেবপুর এলাকার ভোট ঠিকভাবে হয়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। সেময় আমি তীব্র আপত্তি জানিয়ে বাম আমলে ভোটে অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেছি, আপনাদের সময়েও মানুষ ভোট দিতে বের হতে পারতেন না।’’

নারায়ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘গঙ্গারামপুরে ইতিমধ্যে ভয় দেখিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দল দুটি ওয়ার্ডে জিতে গিয়েছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে না বলে আমরা সঙ্কেত পাচ্ছি।’’ এ কথা বলার পরই জেলাশাসক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে অসংলগ্ন অশোভন ওই সব কথাবার্তা বলেন বলে অভিযোগ নারায়ণবাবুর। মিনিট পনেরো ওই কথাবার্তার পর কার্যত হতাশ হয়ে সিপিএমের শীর্ষ জেলা নেতারা জেলাশাসকের কামরা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নালিশ জানান।

দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে। গঙ্গারামপুরে একটি অভিযোগের ঘটনা থানায় এফআইআর হয়নি। যদি জেলা প্রশাসনের পদাধিকারী তথা জেলাশাসকের কাছে সিপিএম নেতারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তবে তিনি ক্ষেপে যাবেনই, এটাই স্বাভাবিক।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে আমরাও একই অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। জেলাশাসকের আচরন ঠিক ছিল। তবে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সব দলের অভিযোগ জানানোর অধিকার রয়েছে। গঙ্গারামপুরে একদলীয়ভাবে শুধু পোস্টার ফেস্টুন থাকবে, অন্য কোনও দল ঝোলাতে পারবে না, এটা হওয়া উচিত নয়। বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে জেলাশাসক এমন আচরণ করে থাকলে, ঠিক করেননি।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, জেলাশাসক যদি এ ধরণের আচরণ করে থাকেন, তবে তা দুঃখজনক ও সংবিধান বিরোধী।’’

balurghat south dinajpur district magistrate gangarampur tmc vs cpm north bengal news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy