Advertisement
০৬ মে ২০২৪

কাঁধ ফুঁড়ে দিল ধারালো দাঁত

রাতেই তিস্তা পেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকেছিল হাতির দলটি। দলে ছিল মোট তিনটি হাতি। এদের মধ্যে দু’টি দাঁতাল। গভীর রাতে ওয়াশাবাড়ি চা বাগানে ঢুকে সেখানেই রাত কাটায় তারা। পরে ভোরের আলো ফুটতেই চা বাগানে দাপাদাপি শুরু করে তিন জনে।

হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ক্রিস্টোফারের।—নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ক্রিস্টোফারের।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

রাতেই তিস্তা পেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকেছিল হাতির দলটি। দলে ছিল মোট তিনটি হাতি। এদের মধ্যে দু’টি দাঁতাল। গভীর রাতে ওয়াশাবাড়ি চা বাগানে ঢুকে সেখানেই রাত কাটায় তারা। পরে ভোরের আলো ফুটতেই চা বাগানে দাপাদাপি শুরু করে তিন জনে।

ওয়াশাবাড়িতে যে হাতি ঢুকে পড়েছে তা তখনও জানেন না শ্রমিক, কর্মচারি, এমনকী বাগান কর্তৃপক্ষও। সে কারনে প্রতিদিনের মতই স্বাভাবিক কাজ শুরু হয় বাগানে। ওয়াশাবাড়ির কলাগাইতি ডিভিশন এলাকাতে আর সব শ্রমিকদের সঙ্গেই কাজে গিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার টোপ্পোও। বাগানের মানা লাইনের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের ক্রিস্টোফার আবার কানে খুবই কম শোনেন। তাই কলাগাইতি ডিভিশনের ১২ নম্বর সেকশনে যখন চা গাছ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন যে চা গাছের ডাল গুড়িয়ে একটি দাঁতাল তার খুব কাছে এগিয়ে আসছে সেই শব্দও পাননি।

চা শ্রমিকরাও হাতির দল দেখে ভয়ে চি়ৎকার করে পালাতে শুরু করলেও সেই আওয়াজও কানে পৌঁছোয়নি ক্রিস্টোফারের। অবশেষে কিছু একটা হয়েছে ঠাওর করে পেছন ঘুরতেই দাঁতাল হাতির ডান দিকের ধারালো দাঁত ঢুকে গিয়েছে ক্রিস্টোফারের বাঁ কাধে। অন্য শ্রমিকদের সমবেত আর্তনাদে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই দাঁতালটি ক্রিস্টোফারকে ছেড়ে পালায় বলে জানান বাগানেরই শ্রমিকরা। ক্রিস্টোফারের পর বাগানের কলাগাইতি এলাকার শ্রমিক মহল্লায় ঢুকে একটি গরুকে আছাড়ে মারে এক দাঁতাল।

বাগানে তিন হাতি ছোটাছুটি করছে শুনে এরপরেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্রিস্টোফারকে প্রথমে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখান থেকে তাকে আবার জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ওয়াশাবাড়ি বাগানে হাতির হামলায় খবর শুনে মালবাজারের বন কর্মীরা পৌঁছয়। কিন্তু হাতিরা বাগানের ঝোপেই গা ঢাকা দেয়।

একটি দাঁতাল অবশ্য দুপুরে ওয়াশাবাড়ি ছেড়ে ফের তিস্তা পেরিয়ে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে ঢুকে গেলেও অন্য দুটি হাতি বাগানেই রয়েছে বলেল জানা গিয়েছে। তাই শ্রমিকদের আতঙ্ক কাটেনি। বাগানের ফার্মাসিস্ট সঞ্জয় সেন , চা শ্রমিক মুন্না টোপ্পো, সঞ্জয় তিরকেরা জানান হাতিগুলি মারমুখী ধরনের আচরণ করছে। সে কারনেই ভয়ে রয়েছেন তাঁরা।

তাঁরা বলেন,‘‘ক্রিস্টোফার বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছেন। বাগান থেকে দুই হাতিকে বের করতে না পারলে তো আবারও হামলার মুখে পড়তে হতে পারে।’’ বাগানের ম্যানেজার শুভাশিস দেও চিন্তিত, তাঁর কথায় ‘‘হাতিগুলোকে এ দিন যেভাবে বাগানে ছোটাছুটি করতে দেখেছি তা আমি এত বছরের চা বাগানের অভিজ্ঞতায় আগে দেখিনি। হাতির দল শ্রমিক আবাস না ভাঙলেও প্রচুর চা গাছ নষ্ট করে ফেলেছে।’’

মালবাজারের বন্যপ্রাণ স্কোয়াডের রেঞ্জ আধিকারিক সমীর শিকদার জানান একটি দাঁতালকে ফেরানো সম্ভব হলেও অন্য দুই দাঁতালের হদিশ মেলে নি। বাগানের বিভিন্ন ঝোপে তাঁরা নজর রাখছেন। উল্লেখ্য ওয়াশাবাড়ি চা বাগানের একদিকে যেমন বৈকন্ঠপুরের জঙ্গল তেমনি অন্যদিকে মংপং এর জঙ্গল রয়েছে। দুই জঙ্গলের মাঝে থাকা এই চা বাগানকে অনেক সময়েই হাতি যাতায়াতের পথ হিসাবে ব্যবহার করে। এদিনও সেরকমটই হয়েছিল বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant tea garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE