Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Happy to get punished

দু’হাতে ‘বেতের বাড়ি’ স্বেচ্ছায় নিলেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রেরা

প্রাক্তনীদের তরফে চিত্র ও হস্তশিল্পী অভিজিৎ সরকারের দাবি, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আগে, ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে প্রশ্রয়, ভালবাসা ও অনুশাসন ছিল।

Former students purposely took punishment from teachers

প্রাক্তন শিক্ষকদের কাছে ‘বেত্রাঘাত’ নিচ্ছেন প্রাক্তন পড়ুয়ারা! নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৩
Share: Save:

কেউ শিক্ষক, কেউ সরকারি কর্মী। অন্য পেশার সঙ্গে যুক্তও অনেকে। স্কুল জীবনের ইতি ঘটার প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে তাঁরাই প্রাক্তন শিক্ষকদের সামনে দু’হাত পেতে বেতের আঘাত নিলেন। রবিবার রাতে এমনই দৃশ্য দেখা গেল, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের নেতাজিপল্লি এলাকার একটি হলঘরে।

রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র হাই স্কুলের ১৯৮৮ সালের মাধ্যমিক ও ১৯৯০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা, প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে পুনর্মিলন ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পেশার ৮৬ জন প্রাক্তন ও স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে ২০ জনেরও বেশি হাজির ছিলেন। সেখানেই প্রাক্তনীরা তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরে, প্রাক্তন শিক্ষকদের হাতে ‘বেত’ তুলে দেন। এর পরে, তাঁরা শিক্ষকদের সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাত পেতে ‘বেত্রাঘাত’ গ্রহণ করেন।

প্রাক্তনীদের তরফে চিত্র ও হস্তশিল্পী অভিজিৎ সরকারের দাবি, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আগে, ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে প্রশ্রয়, ভালবাসা ও অনুশাসন ছিল। তিনি বলেন, ‘‘বেতের আঘাত তো দূরের কথা, এখন থানা-পুলিশের ভয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের শাসন করতেই ভয় পান। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক যে একেবারে বাবা-মা, অভিভাবকদের মত সে কথা মনে রাখতেই এমন বেত্রাঘাত।’’

প্রাক্তনীদের তরফে বিমাকর্মী পার্থপ্রতিম ভট্টাচার্য, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সঞ্জিত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁরা এখনও রাস্তায় প্রাক্তন শিক্ষকদের দেখলে সাইকেল থেকে নেমে পড়েন। পার্থপ্রতিম বলেন, “রাজ্য জুড়ে অসহিষ্ণুতা ও শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাও বাড়ছে। আগের মতো ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের বার্তাই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।”

ওই স্কুলের প্রাক্তন সহকারি প্রধান শিক্ষক সুবোধকুমার মানির দাবি, “ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে শ্রদ্ধা, ভালবাসা, ভয় ও অনুশাসনের সম্পর্ক না ফিরলে, সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় অবক্ষয় রোখা যাবে না।” তবে রায়গঞ্জের তুলসিতলা এলাকার বাসিন্দা অভিভাবক দীপঙ্কর চাকির মতে, মার নয়, অনুশাসন জরুরি।

রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিতিকন্ঠ দত্ত বলেন, ‘‘অতীতে আমার স্কুল-সহ রায়গঞ্জের একাধিক স্কুলে পড়ুয়াদের শাসন করার জন্য সামান্য মেরে শিক্ষকেরা অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ফলে, বর্তমান যুগে কোনও শিক্ষক ও শিক্ষিকা পড়ুয়াদের মারধর করে ঝামেলায় জড়াতে চান না। তা ছাড়া, 'শিক্ষার অধিকার' আইনে পড়ুয়াদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা আইন-বিরুদ্ধ। তাই, আগে আইন বদল, তার পরে পড়ুয়াদের ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের হাতে ‘বেত’ তোলা উচিত।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE