Advertisement
০২ মে ২০২৪
Police Shootout

বিয়ের অনুষ্ঠানে না এলেই ভাল করত, বলছেন বাবা

পুলিশের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, বিষ্ণুর পরিবার, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা পুলিশের উপরে হামলা চালায়। এক পুলিশ কর্মী মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি।

Mrityunjoy burman\'s family mourns his untimely death

ঘটনার পর থেকে শোকে ঘনঘন জ্ঞান হারান মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী গৌরী। নিজস্ব চিত্র

বিকাশ সাহা 
উত্তর দিনাজপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৪
Share: Save:

খুড়তুতো ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সপ্তাহ খানেক আগে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে রাধিকাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে শিলিগুড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ফেরা হল না। তার আগেই মৃত্যু হল বছর তেত্রিশের মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ি কালিয়াগঞ্জ থানার রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁও এলাকায়। তিনি শিলিগুড়িতে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন। অভিযোগ, বুধবার রাত ২টো নাগাদ বাড়ির সামনেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় মারা যান। মৃত্যঞ্জয়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে শিলিগুড়ি রওনা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ওকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হল। ও বিয়ের অনুষ্ঠানে না এলেই ভাল করত।’’

২১ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরে এক নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় ফেরার দুই অভিযুক্ত-সহ চার জনের ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে থানায় স্মারকলিপি দিতে যান ‘রাজবংশী, তফসিলি ও আদিবাসী সংগঠনের সমন্বয় কমিটির কয়েক হাজার মানুষ। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা পুলিশের ‘ব্যারিকেড’ ভেঙে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে মারধর করে। সেই অভিযোগে ৩২ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনায় রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মণের যোগ মিলেছে। বুধবার রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী বিষ্ণুকে গ্রেফতার করতে যায়। তাঁর স্ত্রী কণিকার দাবি, বিষ্ণু বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ দরজায় লাথি মেরে ঘরে ঢুকে বিষ্ণুর বাবা সবেন ও জামাই সুব্রতকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে।

কণিকা এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমার স্বামীর খুড়তুতো ভাই মৃত্যুঞ্জয়। আমার বয়স্ক শ্বশুর ও জামাইকে পুলিশ বিনা কারণে ধরে নিয়ে যাচ্ছে দেখে মৃত্যুঞ্জয় পুলিশ কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে। তখনই এক পুলিশ কর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের বুকে গুলি করে। ও লুটিয়ে পড়তেই পুলিশ আমার শ্বশুরকে নিয়ে চলে যায়। তড়িঘড়ি দেওরকে কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচাতে পারিনি।”

ওই ঘটনার পর থেকে শোকে বাকরুদ্ধ মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ ও মা জ্যোৎস্না। মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী গৌরীও ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে এখন আমি কী ভাবে থাকব, কী ভাবে সংসার চলবে জানি না! আমার স্বামীকে যে পুলিশকর্মী খুন করল, তার শাস্তি চাই। সিবিআই তদন্ত হোক।’’

পুলিশের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, বিষ্ণুর পরিবার, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা পুলিশের উপরে হামলা চালায়। এক পুলিশ কর্মী মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ভর্তি। বিষ্ণুর দাবি, কালিয়াগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান কৃষ্ণা বর্মণের আত্মীয়ও বিষ্ণু। কৃষ্ণা বলেন, ‘‘বিষ্ণুদা আত্মীয়ের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কালিয়াগঞ্জ থানায় গোলমালে ছিলেন না। পুলিশ কাজটা ঠিক করল না।’’

এ দিকে, পুলিশের শাস্তির দাবিতে রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর নেতৃত্বে এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল ও শিলিগুড়ি মোড়ে বিক্ষোভ হয়। সে আন্দোলনে বিষ্ণুও ছিলেন। তিনি বলেন, “পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদ করে ভাইকে গুলি খেয়ে মরতে হল।” বিষ্ণু ও দেবশ্রীর দাবি, মৃত্যুঞ্জয় বিজেপির কর্মী ছিলেন। দেবশ্রী বলেন, “রাজবংশীদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে শুক্রবার উত্তরবঙ্গে রাজবংশীদের ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ পালনের আর্জি জানিয়েছি।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের পাল্টা দাবি, সমস্ত ঘটনার পিছনে বিজেপির ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুলিশের উপরে বিজেপির হামলার জেরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে কি না তার তদন্ত হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির উস্কানি ও ষড়যন্ত্রের জেরেই গত এক সপ্তাহ ধরে কালিয়াগঞ্জে অস্থির পরিস্থিতি চলছে। বিজেপির প্ররোচনায় থানা ভাঙচুর, পুলিশ কর্মীদের মারধর, থানায় অগ্নিসংযোগও ঘটেছে। বিজেপি রাজবংশীদের ভুল বুঝিয়ে রাজনীতি করছে। বিজেপির বনধ সার্থক করার মতো লোক জেলাতে নেই।’’

এ দিন কালিয়াগঞ্জ ব্লক জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি ছিল। দিনভর কালিয়াগঞ্জ শহর ও ব্লকের বেশিরভাগ দোকানপাটই ছিল বন্ধ। গোলমাল এড়াতে প্রশাসন ও পুলিশের তরফে কালিয়াগঞ্জ ব্লক জুড়ে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। গুজব ছড়ানো রুখতে কালিয়াগঞ্জ ব্লক জুড়ে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের গ্রামেও শোকের পরিবেশ নেমে এসেছে। এ দিন ওই গ্রামে বেশিরভাগ বাড়িতে রান্না হয়নি। দিনভর মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড় উপচে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Dinajpur Shot Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE