সরানো হচ্ছে নবজাতকদের। — বিশ্বরূপ বসাক
প্রসূতিদের কাউকে অস্ত্রোপচারের টেবলে ওঠানো হয়েছিল। কেউ অপেক্ষা করছিলেন। সদ্যোজাতদের দেখছিলেন নার্সরা। আচমকা শর্ট সার্কিট থেকে বৈদ্যুতিক বক্সে আগুন লাগলে হুলুস্থূল পড়ে যায় লেবার ওয়ার্ডে।
বৃহস্পতিবার বেলা সওয়া ১১ টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। লেবার ওয়ার্ডে তখন ১০টি সদ্যোজাত বাচ্চা, ১৭ জন প্রসূতি মহিলা রয়েছেন। দেখন বর্মন, বিনা রায়, অরুণা রায় সিংহের মতো প্রসূতিরা অনেকেই ভয়ে চিৎকার শুরু করেন। লেবার ওয়ার্ডের নার্স, আয়ারা সদ্যোজাতদের কোলে নিয়ে দৌড়ে বার করতে থাকেন অন্য দরজা দিয়ে। প্রসূতিদের কাউকে হুইল চেয়ারে, কাউকে ধরে লেবার ওয়ার্ড থেকে বার করতে ছোটাছুটি পড়ে। আগুন লেগেছে শুনে অপারেশন থিয়েটার থেকে ছুটে বার হন চিকিৎসক স্বরূপ চট্টোপাধ্যায় ও নিরাপত্তা রক্ষী লাকপাকুমার তামাঙ্গ।
মেন সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু লেবার ওয়ার্ডে রাখা অগ্নি নির্বাপক দিয়ে আগুন নেভাতে গেলে লাকপাবাবু দেখেন তা কাজ করছে না। তিনি দৌড়ে প্রসূতি বিভাগ থেকে আরেকটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এনে আগুন নেভান। ততক্ষণে খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন অন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগীর আত্মীয়রা। খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছয়।
প্রসূতি স্মৃতি বর্মনকে সে সময় নিয়ে যাওয়া হয় সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটের (এসএনসিইউ) একটি ঘরে। সেখানেই তাঁর প্রসব করানো হয়। স্মৃতিদেবী বলেন, ‘‘খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নার্স, আয়ারাই হুইল চেয়ারে বাইরে নিয়ে আসেন।’’ মিনিট দশেক আগে অসুস্থ সদ্যোজাত নাতনিকে ইসলামপুর হাসপাতাল থেকে মেডিক্যালের এসএনসিইউ-তে ভর্তি করান কানকির বাসিন্দা সুলেখা গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘‘আচমকা আগুন লেগেছে বলে দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়। সদ্যোজাতদের কোলে করে নার্স আয়ারা এসএনসিইউ’তে এনে আমাদের বাচ্চার সঙ্গেই এক জায়গাতেই আরও চার, পাঁচটি সদ্যোজাতকে রাখে।’’ টিউমার অস্ত্রোপচারের জন্য ভিতরে বসেছিলেন মমতা সহানি। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতিক লাইনে স্ফুলিঙ্গ, ধোয়া বার হচ্ছিল। আমরা ভয়ে তড়িঘড়ি বাইরে চলে যাই।’’
বারবার বলার পরেও কেন এখনও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ গড়ে তোলা হয়নি, কেন পুরনো ও নষ্ট অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলি সরিয়ে নতুন যন্ত্র রাখা হয়নি, তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকেরা। কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের পুরনো বৈদ্যুতিক লাইন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য সচিব ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষের কাছে।
ঘটনার পর এ দিন দুপুরে পূর্ত দফতরের বাস্তুকারদের নিয়ে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঠিক করতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় জানান, প্রসূতি বিভাগের এবং তার সঙ্গে গোটা হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করতে এ দিনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিক বক্সে শর্ট সার্কিট থেকে স্ফুলিঙ্গ লেগেছিল। তবে দমকল আসার আগেই চিকিৎসক, নিরাপত্তা কর্মীরা তা নিভিয়েছেন।’’ হাসপাতাল সুপার নির্মল বেরার কথায়, শর্ট সার্কিট থেকে স্ফুলিঙ্গ নজরে পড়ায় চিকিৎসক, কর্মীরা মিলে নিভিয়েছেন। হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক করতে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। কী কী প্রয়োজন, তা স্বাস্থ্য দফতরকে বিস্তারিত জানানো হচ্ছে।
হাসপাতালের কর্মী অনিল সাহু জানান, লেবার ওয়ার্ডের এক নার্স তার পোড়ার গন্ধ পেলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তা শুনে তিনি এবং অপর কর্মী সতীশ মল্লিক খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন ‘অটোক্লেভ রুম’-এর বাইরে করিডরে বৈদ্যুতিক বক্সে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বার হচ্ছে। মুহূর্তে তা থেকে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়া বার হতে শুরু করেছে। তখন নিরাপত্তা কর্মী লাকপা তামাঙ্গ ছুটে আসেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy