Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধ তারকা মাউন্ট সাহেব

প্ল্যাটফর্মে তখন অপেক্ষায় সাহেবের ‘দেশ’ থেকে আসা একদল পর্যটক। টয়ট্রেনের কামরায় চড়ে বসলেন সকলে। ধোঁয়া ছেড়ে কু-ঝিক-ঝিক করতে করতে সুকনা ছেড়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করল ‘সাহেব ইঞ্জিন’।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৬
ভরসা: বুড়ো হাড়েও ভেল্কি দেখাল স্টিম ইঞ্জিন। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: বুড়ো হাড়েও ভেল্কি দেখাল স্টিম ইঞ্জিন। নিজস্ব চিত্র

বহুদিন পরে গা থেকে ধুলো ঝেড়ে বের হলেন ‘মাউন্ট সাহেব’। লোকে বলে, বয়স হলেও খাড়া পাহাড়ি রাস্তায় উঠতে তাঁর নাকি জুড়ি মেলা ভার। শনিবার সকালে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে নিয়ে আসা হল সাহেবকে। প্ল্যাটফর্মে তখন অপেক্ষায় সাহেবের ‘দেশ’ থেকে আসা একদল পর্যটক। টয়ট্রেনের কামরায় চড়ে বসলেন সকলে। ধোঁয়া ছেড়ে কু-ঝিক-ঝিক করতে করতে সুকনা ছেড়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করল ‘সাহেব ইঞ্জিন’।

গত শুক্রবার বিদেশি দলটার চার্টার্ড ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য রেল থেকে একটি নতুন স্টিম ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছিল। এনজেপি স্টেশনে কামরার সঙ্গে জোড়ার সময়েই বছর দশকে আগে তৈরি সেই ইঞ্জিনের চাকা লাইন থেকে পড়ে যায়। স্টিম ইঞ্জিনের টানে এ দেশে আসা বিদেশি দলটি ডিজেল ইঞ্জিনে টানা ট্রেনে উঠতে বাধ্য হয়। তার পরে আর ঝুঁকি নেয়নি রেল। তলব পড়ে সাহেব ইঞ্জিনের। রেলকর্মীদের কথায়, ‘‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। নতুন ইঞ্জিন যা পারল না, তাই করে দেখালো আমাদের বৃদ্ধ সাহেব।’’

ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ২৯ জন পেশাদার চিত্রগ্রাহকের দল এসেছে শিলিগুড়িতে। কয়লা থেকে তৈরি বাষ্প ইঞ্জিনে টানা ট্রেন নিয়েই গবেষণা চালায় দলটি। স্টিম রেলওয়ে নামে ইংল্যান্ড একটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ করেন তাঁরা। গত শুক্রবার তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল এনজেপি থেকে রংটং। স্টিম ইঞ্জিনের চাকা লাইনচ্যূত হয়ে যাওয়ায় ডিজেল ইঞ্জিনে চাপতে হয়েছিল তাঁদের। তা নিয়ে বেজায় আফসোস ছিল দলটির। শনিবার পুরনো স্টিম ইঞ্জিনটিকে দেখেই খুশি হয়ে ওঠেন সকলে। দলের ক্যাপ্টেন পিটার জর্ডন বলেন, ‘‘স্টিম ইঞ্জিনের আভিজাত্যই আলাদা। ধীরগতিতে দুলে দুলে যায়। সেই ম্যাজিক আজও উপভোগ করলাম। ভাগ্যিস গতকালের মতো বিপর্যয় হয়নি।’’

দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ওয়ার্কশপের কর্মীরা ভালবেসে ইঞ্জিনটির নাম দিয়েছেন ‘মাউন্ট সাহেব’। ১৮৯৯ সালে তৈরি কয়লার ইঞ্জিনটির সরকারি নাম ‘মাউন্টেনিয়ার’। শার্প স্টুয়ার্ট নামের একটি সংস্থাটি ইঞ্জিনটি তৈরি করেছিল। বর্তমানে সেই নামের কোনও সংস্থা নেই। স্কটল্যান্ডের একটি কোম্পানির সঙ্গে আদি সংস্থাটি মিশে যায়। ম্যাঞ্চেস্টারের যে ওয়ার্কশপে মাউন্টেনিয়ারের জন্ম সেটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে কবেই। শতবর্ষ পরেও রয়ে গিয়েছেন মাউন্টেনিয়ার। যন্ত্রাংশ বদলালেও বদলায়নি শরীরের কাঠামো। তাতেই পাহাড়ে উঠতে বুড়ো হাড়েও ভেলকি দেখান সাহেব! ইদানিং খুব একটা এই ইঞ্জিন ব্যবহার হয় না।

বিদেশি দলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘দলে থাকা ষাট, সত্তর বছরের বয়স্কদেরও শতবর্ষ পুরনো স্টিম ইঞ্জিন দেখে বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে উঠতে দেখলাম। আশা করছি বাকি দিনগুলোও ওঁদের নিরাশ হতে হবে না।’’ এ দিন শিলিগুড়ি থেকে তিনধারিয়া গিয়েছিল দলটি। ট্রেন থেকে নেমে মোবাইল বের করে স্টিম ইঞ্জিন নিয়ে নিজস্বীও তুললেন কয়েক জন। ইঞ্জিনের গায়ে হাত বুলিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন পিটার জর্ডন। ফেলে আসা দেশের বাসিন্দারা ফিরে গেলে ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে কিছু ক্ষণ থেকে ঘরের পথে ধরল মাউন্ট সাহেবও।

Steam Engine মাউন্ট সাহেব
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy