Advertisement
০৫ মে ২০২৪
শুরু পুজোর আগেই

স্থানীয় সংস্কৃতির হাতছানি নিগমের বন বাংলোতে

দিনভর জঙ্গল চষে বেড়ানো। আর সন্ধ্যেয় বাংলোয় বিশ্রাম নিতে নিতে স্থানীয় জনজাতির সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার হাতছানি। পর্যটকদের জন্য এমন উপহারই আনতে চলেছে এ রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগম। বেছে নেওয়া হয়েছে নিগমের ১০টি বাংলো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

দিনভর জঙ্গল চষে বেড়ানো। আর সন্ধ্যেয় বাংলোয় বিশ্রাম নিতে নিতে স্থানীয় জনজাতির সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার হাতছানি। পর্যটকদের জন্য এমন উপহারই আনতে চলেছে এ রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগম। বেছে নেওয়া হয়েছে নিগমের ১০টি বাংলো। যেখানে সপ্তাহে দু’দিন স্থানীয় সংস্কৃতির উপরে স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন পর্যটকরা।

দুর্গাপুজোর আগে এ রাজ্যে শুরু হয় পর্যটনের ভরা মরসুম। তা শুরুর মুখে ওই সুযোগ চালু করার জন্য নিগমের কর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ। কোন এলাকার বাংলোয় কোন সংস্কৃতি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নিগমের অন্দরে। উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে প্রতি শনি ও রবিবার সন্ধ্যেয় ওই সুযোগ মিলবে। এতে স্থানীয় সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটকরাও ভিন্ন স্বাদও পাবেন। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ওই ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।” নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে ডুয়ার্সের মূর্তি, রাজাভাতখাওয়া, মালঙ্গি, জলঢাকা, প্যারেন, সুলতানেরখোলা ও দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রাম-সহ ১০টি বাংলোয় ওই পরিকল্পনা নেওয়া হবে। রাজাভাতখাওয়ায় আদিবাসী নৃত্য, মূর্তিতে রাভা নৃত্যানুষ্ঠান ও ঝাড়গ্রামে সাঁওতাল নৃত্য পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। তাতে সাড়া মিলেছে বলে নিগম কর্তৃপক্ষের দাবি। ফলে ওই তিনটি বাংলোর ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে বাকি সাতটি বাংলোর মধ্যে কোথায় কী অনুষ্ঠান হবে সেসব নিয়ে আলোচনা চলছে। কোচবিহারের রসিকবিলের বাংলোয় বৈরাতি নৃত্য, ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান রাখার ব্যাপারে নিগমের অন্দরে আলোচনা হয়েছে। নিগমের এক আধিকারিক জানান, সব জায়গাতেই ওই দু’দিন সন্ধ্যায় টানা এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান হবে। স্থানীয় জনজাতির নৃত্য, সংগীত ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক দিক তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সন্মতি পাওয়ার পরেই শীঘ্রই সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করে প্রচার করা হবে বলে জানিয়েচেন তিনি।

নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের কালীপুর, ধূপঝোড়াতে মূলত বন দফতরের উদ্যোগে স্থানীয় জনজাতির অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলোয় থাকা পর্যটকরা ছাড়াও জঙ্গল সাফারি করতে আসা পর্যটকরাও সন্ধ্যেয় প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘেরা মুক্তমঞ্চে ওই অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পান। পর্যটকদের তুমুল চাহিদার জেরে লাটাগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার কিছু বেসরকারি রিসর্টেও স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নিয়ে জনজাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখানো হয়। একই ধাঁচে এবার নিগমের বাংলোগুলিতেও ওই সুযোগ পেতে চলেছেন পর্যটকেরা। ইস্টার্ন হিমালয়ান, ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স আসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট স্যানাল বলেন, “পর্যটকদের পচ্ছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকে নিগমের বাংলো। ওই উদ্যোগ নেওয়া হলে তা সত্যিই পর্যটন প্রসারে ইতিবাচক হবে।’’ তিনি জানান, ডুয়ার্স বা জঙ্গলে বেড়ানো মানে শুধু বন বা বন্যপ্রাণী দেখার হাতছানি নয় স্থানীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানার আগ্রহও থাকে পর্যটকদের। পর্যায়ক্রমে নিগমের সমস্ত বাংলোয় এমন ব্যবস্থা চালু করা হলে আরও ভাল হবে বলে জানান তিনি।

নিগম সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বন দফতরের কাজে এ বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার পরেই নিগমের বাংলোয় রেস্তোরাঁ চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সকালের প্রাতঃরাশ বিনামূল্যে সরবরাহের পরিকল্পনাও হয়েছে। তালিকায় স্থানীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার উদ্যোগ নতুন সংযোজন। এই উদ্যোগ সফল হলে স্থানীয় শিল্পীদের বিকল্প আয়ের সুযোগও বাড়বে বলে জানান নিগমের এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE