Advertisement
E-Paper

মানবপুতুলের টোপে সাফল্য গ্যারগেন্দায়

রবিবার ভোররাতে গ্যারগেন্দা চা বাগানে ধরা পড়ল পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী চিতাবাঘ৷ খাঁচার ভেতরে রাখা মানবপুতুলটিকেও ক্ষত-বিক্ষত করেছে সেটি৷ যার জেরে এই চিতাবাঘটিই ‘মানুষখেকো’ কি না তা নিয়ে ফের একবার খোদ বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে৷

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০
বাগে: গ্যারগেন্দায় খাঁচাবন্দি চিতাবাঘ। নিজস্ব চিত্র

বাগে: গ্যারগেন্দায় খাঁচাবন্দি চিতাবাঘ। নিজস্ব চিত্র

চিতাবাঘ ধরতে ছাগলের সঙ্গে রাখা হয়েছিল মানবপুতুলও। প্রথমবার। তাতেই ফের সাফল্য মাদারিহাটের চা বাগান এলাকায়৷

রবিবার ভোররাতে গ্যারগেন্দা চা বাগানে ধরা পড়ল পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী চিতাবাঘ৷ খাঁচার ভেতরে রাখা মানবপুতুলটিকেও ক্ষত-বিক্ষত করেছে সেটি৷ যার জেরে এই চিতাবাঘটিই ‘মানুষখেকো’ কি না তা নিয়ে ফের একবার খোদ বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে৷ যদিও সবদিক খতিয়ে না দেখে দফতরের শীর্ষ কর্তারা এখনই তা মানতে নারাজ৷ কলকাতা থেকে রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ শাখা) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “কোনও চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হলে ছটফট করবেই৷ তখন খাঁচার ভেতরে যা পাবে সেটিকেই সে নষ্ট করতে চাইবে৷ ফলে এ থেকে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায়না৷”

ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে আচমকাই মাদারিহাটের বিভিন্ন চা বাগানে চিতাবাঘের হানার ঘটনা বাড়তে থাকে৷ শেষ দুই মাসে ওই ব্লকে চিতা বাঘের হানায় তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু এবং এক বৃদ্ধ ও এক কিশোর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পাল্টা গ্যারগেন্দা চা বাগানে বিষ মেশানো মাংস খাইয়ে দুটি চিতাবাঘকে মেরে ফেলার অভিযোগও ওঠে৷ এই অবস্থায় চিতাবাঘ-মানুষ সংঘাত ঠেকাতে নানান পদক্ষেপ করেন বন দফতরের কর্মীরা৷ মাদারিহাটের বিভিন্ন চা বাগানে ১৫টি খাঁচা পাতা হয়৷ যাতে সাফল্যও মেলে৷ বন দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের চিতাবাঘটিকে নিয়ে গত দেড় মাসে ওই খাঁচাগুলিতে সাতটি চিতাবাঘ ধরা পড়েছে৷ এরমধ্যে ধুমচিপাড়া চা বাগানে তিনটি, রামঝোরা চা বাগানে দুটি এবং হান্টাপাড়া ও এ দিন গ্যারগেন্দা চা বাগানে একটি চিতাবাঘ ধরা পড়ল৷

বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ধরা পড়া এই সাতটি চিতাবাঘের মধ্যে ছ’টিই স্ত্রী চিতাবাঘ৷ তবে গত শুক্রবার ধুমচিপাড়ায় একমাত্র একটি পুরুষ চিতাবাঘ ধরা পড়ে৷ যেটি পূর্ণবয়স্ক ছিল৷ ওই চিতাবাঘটি ধরা পড়ার পরই বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে সন্দেহ দানা বাধে, ওটিই হয়তো ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘ হতে পারে৷ কিন্তু বিষয়টিতে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি তাঁরা৷ এই অবস্থায় ওই চিতাবাঘটি এখনও ঘুরে বেড়াতে পারে ধরে নিয়েই গ্যারগেন্দা চা বাগানের ২৪ ও ২৫ নম্বর সেকশনে ফের খাঁচা পাতেন তারা৷ সেই খাঁচাতেই এই প্রথম ছাগলের পাশাপাশি একটি পুতুলকে রাখা হয়৷ বন দফতরের লঙ্কাপাড়া রেঞ্জের আধিকারিক বিশ্বজিৎ বিষই বলেন, “গ্যারগেন্দা চা বাগানের ওই এলাকায় একটি চিতাবাঘের উপদ্রব চলছে বুঝতে পেরে শনিবার সেখানে খাঁচাটি পাতা হয়েছিল৷ রবিবার ভোররাতে যাতে বন্দী হয় স্ত্রী চিতাবাঘটি৷”

এ দিন সকালে চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হওয়ার খবর পেয়ে এলাকায় যেতেই বনকর্মী ও আধিকারিকদের চোখ কপালে ঠেকে যায়৷ তাঁরা দেখেন, খাঁচার ভেতরে থাকা মানবপুতুলটিকে কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে একেবারে ছিঁড়ে ফেলেছে চিতাবাঘটি৷ ফলে তাদের অনেকের মনেই ফের প্রশ্ন দানা বাঁধে, তবে এই চিতাবাঘটিই মানুষ খেকো চিতাবাঘ নয় তো? কারণ বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ এমনও বলছেন, ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘ যে পুরুষই হবে, তেমন কোনও কথা নেই৷ স্ত্রী চিতাবাঘও মানুষ মারতে পারে৷

বন দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ধুমচিপাড়ায় ধরা পড়া চিতাবাঘটিরও বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এ দিন গ্যারগেন্দা ধরা পড়া চিতাবাঘটিকেও দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ আগের চিতাবাঘটির সঙ্গে এই চিতাবাঘটিরও বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হবে৷ কথা বলা হবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও৷ তারপরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছানো যাবে৷ তবে একইসঙ্গে মাদারিহাটের বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি করার প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন বনকর্তারা৷

Leopard Bait Human Doll Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy