Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্লোগানে, উৎসাহে খুলে গেল নতুন সীমান্ত পথ

বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান থেকে শেখ হাসিনা। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্লোগানে হাজির সকলেই! এই স্লোগানময় মুহূর্তের মধ্যে দিয়েই খুলে গেল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। মঞ্চ থেকে অনেকেই মনে করিয়ে দিলেন রুনা লায়লা থেকে রাহুলদেব বর্মনের দু’কলিও।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাংলাবান্ধা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান থেকে শেখ হাসিনা। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্লোগানে হাজির সকলেই!

এই স্লোগানময় মুহূর্তের মধ্যে দিয়েই খুলে গেল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। মঞ্চ থেকে অনেকেই মনে করিয়ে দিলেন রুনা লায়লা থেকে রাহুলদেব বর্মনের দু’কলিও। মঞ্চের নীচে তখন চলছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে জয়ধ্বনিও। চলল দেদার মিষ্টির প্যাকেট বিলিও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধায় দু’দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এ ভাবেই নতুন সীমান্ত পথে যাতায়াতের সূচনা হল।

উত্তরবঙ্গে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা, দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি এবং মালদহের মহদিপুরের পর ফুলবাড়ি চতুর্থ ইমিগ্রেশন চেপপোস্ট হিসাবে চালু হল। প্রথম দিনই বাংলাদেশের ৩২ জনের একটি প্রতিনিধি দল এ দেশে আসেন। তবে ভারতের তরফে ওই পথে এ দিন বাংলাদেশে কেউ যাননি। বাংলাদেশে হওয়া অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিংহ, সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। এ ছাড়াও রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, গৌতম দেবরা। বাংলাদেশের তরফে ছিলেন, সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আসাদ্দুজামান খান কামাল, সাংসদ নুরুল ইসলাম সুজনও। সকলের বক্তব্যেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি থেকে উঠে এসেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও।

যেমন ভি কে সিংহ বললেন, ‘‘আমি ফৌজি ছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় লড়াই করেছি। সব সময় বাংলাদেশ আমার খুব কাছের। আপনারা আমাদের খুব কাছের। ২০১৪ সালের আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। এখানকার বহু লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। এই নতুন পথে দুই দেশের বাণিজ্য, পর্যটন-সহ বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন সাধন হবে। দুই দেশের সম্পর্কের সেতুবন্ধুন আরও মজবুত হল।’’ এর পরেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভাষা শহীদ দিবসের আগে এ দিনটিকে আরেকটি ঐতিহাসিক দিন হিসাবে উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার যোগাযোগ বাড়বেই। এপারের মানুষ সহজেই ওপারের আত্মীয়দের কাছে পৌঁছাবেন। তবে পর্যটনে যুগন্তকারী পরিবর্তন হয়ে গেল। আমরা সহজেই অতি অল্প সময়ে দার্জিলিং, নেপাল পৌঁছব। ইতিমধ্যে ছিটমহল বিনিময়ে বহু মানুষ নিজেদের দেশকে পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আজ অনেকটাই পূরণ হল।’’

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে স্বাগত-বার্তা। ছবি— বিশ্বরূপ বসাক।

দুই দেশের বর্হিবাণিজ্য, পযর্টনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, এই চেকপোস্ট থেকে শিলিগুড়ি মত শহর ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। রাজ্য তো বটেই দেশের অন্য কোনও সীমান্তের চেকপোস্টের এত কাছে এমন বড় শহর নেই। এই পথে শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা ৮-৯ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যাবে। তেমনই, বাংলাদেশের বাসিন্দারা পাঁচ ঘণ্টারও কম সময়ে শৈলশহর দার্জিলিং যেতে পারবেন।

ফুলবাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে বাণিজ্য পথটি খোলে। প্রথমে নেপালের পণ্য আমদানি রফতানি চালু হলেও এ দেশের বর্হিবাণিজ্যকে পরে তাতে জোড়া হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওটার পর কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামোর জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তা দিয়ে রাস্তা, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, টার্মিনাস গড়ে তোলা হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই এই রাস্তা দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে-২ নেপাল থেকে বাংলাদেশ পৌঁছাবে। বাংলাবান্ধাতেও ইতিমধ্যে যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

এদিন মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক মজুবত হওয়ায়, পরিকাঠামো বাড়ার আশা করেছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী, সাংসদেরা। ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা চালু হলেও ভিসার সরলীকরণ চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। ই-টিকিট, সার্ভারের সমস্যার কথাও বক্তব্যে উঠে এসেছে। যা শোনার পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ভিসা প্রক্রিয়ার আরও সহজ করার হবে। দুই দেশে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’’ পরে একধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিংহ জানিয়েছেন, শিলিগুড়িকে পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রের পরিকাঠামোর কাজ চলছে। দ্রুত তা চালু হবে। ভিসার সরলীকরণ করার প্রক্রিয়াও চলছে।

সকাল থেকেই দুই দেশের জিরো পয়েন্টের দুইপাশে কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তার খোলার জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন। নিজস্বী থেকে দলবেঁধে ছবি—ছিল সবই। কেউ আত্মীয়দের খোঁজ করছেন, কেউবা কত তাড়াতাড়ি ওপারে যেতে পারবেন সেই খোঁজ নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FulbariBanglabandha Immigration Checkpost
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE